মেঘালয়ের কোলঘেঁষা সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় এর 'বিস্তীর্ণ' এলাকার বিভিন্ন পাহাড়ি নদী ও ঝোড়া থেকে মূল্যবান লাল বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় বালুখেকো। দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে পাচার করে বিক্রি করছে প্রভাবশালী কথিত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা বালুখেকো সিন্ডিকেট। যদিও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে অনেককে জেল জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে।
তবে কোনভাবেই থামছে না অবৈধ লাল বালু উত্তোলন। উত্তোলনকৃত এসব বালুর মধ্যে মূল্যবান খনিজ বালুও রয়েছে। ফলে সরকার হারাচ্ছে মূল্যবান সম্পদ ও রাজস্ব।
দীর্ঘ অনুসন্ধান ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের গজনী বিট এলাকার বাকাকুড়া, গজনী, গান্ধীগাও, জিয়া খাল, সন্ধ্যাকুড়া, বালিঝুড়ী সংলগ্ন তাওয়াকুচার সোমেশ্বরী ও মহারশি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টসহ বিভিন্ন ছোট নদী ও খাল থেকে নিয়মিত প্রতিদিনই বিভিন্নভাবে কৌশলে বালু উত্তোলন করে রাতের আঁধারে ও খুব ভোরে উত্তোলিত বালু মাহিন্দ্রা ট্রাক, ট্রলি, ভ্যান ও অটোরিকশা যোগে ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক হয়ে পাচার হয়ে পরে শেরপুর শহর ও শহরের আশেপাশে বাজিতখিলা, তাতালপুর, কালিগঞ্জ সহ বিভিন্ন সেলস পয়েন্ট স্থাপন করে প্রশাসনের নাকের ডগায় বালু বিক্রি করছে।
এর আগে জেলা প্রশাসন প্রজ্ঞাপন জারি করে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় বালু উত্তোলন ও পরিবহন নিষিদ্ধ করে। তবে এখন শেরপুর শহরের আশেপাশে বিভিন্ন সেলস পয়েন্ট স্থাপন করে প্রকাশ্যে লাল বালু বিক্রি করায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
বালু পরিবহন কাজে নিয়োজিত অবস্থায় বাজিতখিলা বাজারে ঝিনাইগাতীর ডাকাবর এলাকার জনৈক মাহিন্দ্রা চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মাহিন্দ্রা বালু ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, ট্রলি সাড়ে ৭ হাজার টাকা এবং অটোভ্যান ২৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। বালুবহনকারী ড্রাইভারের কাছে প্রতিবেদক বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি শেরপুর শহরের জনৈক বালু ব্যবসায়ীকে ফোন ধরিয়ে দেন। তিনি নিজ পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, পুলিশ প্রশাসন ও ফরেস্ট অফিসকে ম্যানেজ করেই চলছে এ অবৈধ বালু ব্যবসা। এছাড়া ঝিনাইগাতীর বাকাকুড়া এলাকার প্রভাবশালীরাও এতে জড়িত বলে তিনি জানান।
বালু পাচারকালে আরেক অটোরিকশাচালক জানান, আমরা প্রতিদিনই ভ্যানযোগে বালু এনে শেরপুর শহরে ২৫০০ টাকায় বিক্রি করি। কাউকে কোন টাকা দেওয়া লাগে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলেননি।
ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আল আমিন এর সাথে হলে তিনি বলেন, আমাদের টহলটিম সব সময় রাস্তায় টহল দেয়। আবার অনেক সময় আসামি ধরার কাজে ফোর্স চলে গেলে এ সুযোগে হয়তো কেউ বালু পাচার করতে পারে। তবে পুলিশ বালু পাচারে জড়িত নন বলে জানান তিনি।
রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আ: করিমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, একটি বালু বহনকারী মাহিন্দ্রা ট্রাক বালুসহ আমার কাছে আটক আছে। আমার এরিয়া থেকে কোনো বালু উত্তোলন হয় না। এখন পাহাড় থেকে নয় বরং পাহাড়ি ঝোড়া থেকে এই বালুগুলো উত্তোলন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আশরাফুল আলম বলেন, আমরা বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। তাদের অনেককে আটক করে সাজা শাস্তির আওতায় এনেছি। আজকেও আমরা এসিল্যান্ড এর মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে দুটি গাড়ি আটক করিয়েছি। এ ধরণের কাজে যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।