বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
অপচয় রোধে ইসলামের নির্দেশনা
বুলেটিন নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০২২, ১০:০৭ AM আপডেট: ৩০.০৮.২০২২ ১০:০৮ AM
পৃথিবীতে মানুষের ধন-সম্পদ আল্লাহর দান; তাই সম্পদ সমৃদ্ধ না করে নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। কারণ এ সম্পদ একদিকে যেমন আল্লাহর নিয়ামত, অন্যদিকে তা আমাদের হাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানতও। তাই এর যথাযথ ব্যবহার না করে অপচয় করলে আমানতের খেয়ানতকারী হিসেবে জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি বিষয়কে অপছন্দ করেন- ১. অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করা। ২. সম্পদ নষ্ট করা। ৩. অধিক প্রশ্ন করা।’ (বুখারি : ১৪৭৭)। বোঝা গেল, সম্পদ নষ্ট করা আল্লাহ তায়ালার নিকট একটি ঘৃণ্য বিষয়। তাই তো আল্লাহ এরশাদ করেছেন , ‘হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও এবং খাও ও পান কর। কিন্তু অপচয় করো না। তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ : ৩১)

পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীদের শয়তানের ভাই হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘আত্মীয়স্বজনকে তার হক দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৬-২৭)। দুঃখজনক হলো, কিছু মানুষ ‘রহমানের বান্দা’ হওয়ার চেয়ে শয়তানের ভাই হওয়াটাকেই বেছে নিচ্ছে। অপচয় এখন আমাদের সমাজের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে পৃথিবীতে লাখ লাখ মানুষের এখনও নিয়মিত তিন বেলা খাবার জোটে না, অন্যদিকে পৃথিবীর মোট উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশই অপচয় হয়।

বর্তমানে নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার মানুষের জীবনযাত্রাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। ইসলাম নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিরোধী নয়। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরপরই ঘরের নতুন আসবাবপত্র ও গাড়ি পাল্টে সর্বশেষ মডেলের আসবাবপত্র ও গাড়ি কেনা বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় লোক দেখানোর মানসিকতাই প্রাধান্য পায়। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আজ যে অপচয়কারী ও বিলাসী, কাল সে ভিখারী ও পরমুখাপেক্ষী! এটা ব্যক্তি জীবনের মতো রাষ্ট্রীয় জীবনেও সত্য।

লাগামহীন ব্যয় সম্পর্কে ইসলামের কঠোর মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে রাসুল (সা.)-এর একটি হাদিসে। যাতে অজু করার সময়ও পানির অপচয় না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একদা রাসুল (সা.) সাদ (রা.)-কে অজুর মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করতে দেখে বলেন, ‘হে সাদ! অপচয় করছ কেন? সাদ (রা.) বলেন, অজুতে কী অপচয় হয়? নবীজি (সা.) বলেন, হ্যাঁ। প্রবহমান নদীতে বসেও যদি তুমি অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করো, তা অপচয়।’ (ইবনে মাজাহ : ৪২৫)

তবে অপচয়-অপব্যয়ের পাশাপাশি কৃপণতারও বিরোধিতা করা হয়েছে ইসলামে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে ইসলামে সব ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি ত্যাগ করে ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থা অবলম্বনের শিক্ষা দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (সুরা আল-ইসরা : ২৯)

অপব্যয় ও অপচয় না করে আত্মীয়দের হক আদায় ও দান-সদকার পাশাপাশি সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও নবীজির শিক্ষা। সন্তানদের কারও মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবীজি (সা.) কখনও পছন্দ করেননি। হজরত সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হাজে একটি কঠিন রোগে আমি আক্রান্ত হলে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমার খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আসতেন। একদা আমি তাঁর কাছে নিবেদন করলাম, আমার রোগ চরমে পৌঁছেছে আর আমি সম্পদশালী। একমাত্র কন্যা ছাড়া কেউ আমার উত্তরাধিকারী নেই। তবে আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদকাহ করতে পারি? তিনি বললেন, না। আমি আবার নিবেদন করলাম, তাহলে অর্ধেক। তিনি বললেন, না। অতঃপর রাসুল (সা.) বললেন, ‘এক-তৃতীয়াংশ, আর এক-তৃতীয়াংশও বিরাট পরিমাণ অথবা অধিক। তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদের সচ্ছল রেখে যাওয়া উত্তম। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তুমি যেকোনো ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার বিনিময় প্রদান করা হবে। এমনকি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেবে (তারও প্রতিদান পাবে)।’ (বুখারি : ১২৯৫) 

অতিরিক্ত খরচে কোনো প্রাপ্তি নেই। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে মারা যায়। সামাজিক ও আর্থিক ভিন্নতার কারণে সব মানুষ সমভাবে প্রয়োজন মেটাতে পারে না। কেউ জৌলুস প্রদর্শনে কিংবা অপ্রয়োজনীয় বিনোদনে খরচ করছে লাখ লাখ টাকা। আর তার পাশের একজন গরিব মানুষ হয়তো টাকার অভাবে ওষুধও কিনতে পারছে না। কাজেই আমরা যদি অপচয় ও অপব্যয় পরিহার করে সেই অর্থ ওইসব মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে ব্যয় করি, তাহলে সমাজ যেমন সুন্দর ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে তেমনি আমরাও মানসিক প্রশান্তি পাব। এ ছাড়া পরকালে এর পুরস্কার তো রয়েছেই। তাই আসুন আজ পর্যন্ত যত ধরনের অপচয়-অপব্যয় করেছি তা থেকে তওবা করে ভবিষ্যতে আর কখনও কোনো ধরনের অপচয় না করার প্রতিজ্ঞা করি। 

-বাবু/শোভা

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত