গতকাল (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে মারা গেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্ট কলামিস্ট আকবর আলি খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভিন্ন পন্থায় বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক বা এসডিও ছিলেন। পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে আকবর আলি খান হবিগঞ্জ পুলিশের অস্ত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করেন।
মেধাবী শিক্ষার্থী আকবর আলি খানের জন্ম ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে। তিনি নবীনগরে স্কুলজীবন পার করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ইতিহাস নিয়ে পড়েন। ১৯৬৪ সালে তিনি ইতিহাসে স্নাতক হন এবং ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
পরে তিনি ১৯৭৭ সালে কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে আবারও স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
এর আগে ১৯৬৭-৬৮ সালে তিনি লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৭০ সালে হবিগঞ্জ মহুকুমার এস. ডি. ও. হিসেবে পদস্থ হন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সচিবালয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন।
অল্প সময়ের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে কাজ করে ১৯৯৩-এ সরকারের সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি অর্থ সচিব হিসেবে পদস্থ হন।
২০০১ সালে আকবার আলি খান বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে বিকল্প কার্যনির্বাহী পরিচালক (অল্টারনেটিভ এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর) পদে যোগদান করেন। বিশ্ব ব্যাংকে তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।
২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন আকবার আলি খান। পরবর্তীতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়ার আশঙ্কায় তিনি পদত্যাগ করেন।
বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের বিকাশ নিয়ে তার ‘হিস্টোরি অব বাংলাদেশ’ বা ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ বইটি খুব বিখ্যাত। এছাড়া, অর্থনীতি, সাহিত্যসহ সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন আকবার আলি খান।
-বাবু/এসআর