জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে চলছে মাদক সেবন। ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন, বিপাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মাত্র সাড়ে সাত একরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টির অধিক স্থানে চলে মাদকের রমরমা আড্ডা।
বিকেল ও সন্ধ্যায় তো বটেই, ক্যাম্পাসের সময়ও বিভিন্ন স্থানে বসে গাঁজাসহ নানা ধরনের মাদকের আসর। ক্লাসের সময়গুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পরিবহনের দ্বিতল বাসগুলোতেও চলে সিগারেট-গাঁজা খাওয়ার জমজমাট আড্ডা। একদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো বাধা, অন্যদিকে মাদকের সহজলভ্যতা যা ক্যাম্পাসে মাদক সেবন করা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ফলে জবি ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে মাদকাসক্তদের ‘অভয়াশ্রম’।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনেই রয়েছে মাদক সেবনের বেশ কয়েকটি স্থান। এর মধ্যে ভবনের নিচতালায় গ্যারেজ, অডিটোরিয়ামের দ্বিতীয় গেটের পাশে, ছাত্রীদের কমন রুমের সামনে, নিচতলার টয়লেট, ভবনের ছাদে। এছাড়াও ক্যাম্পাস চলাকালীন সময়ে গেটের বাইরে রাখা দোতলা বাসের উপরের তলায় চলে অবাধে গাঁজা সেবন। কলা ভবনের আশপাশেও রয়েছে কয়েকটি মাদক সেবনের স্থান। এর মধ্যে সমাজকর্ম বিভাগের পিছনে, ক্যান্টিনের পিছনে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের কর্নারে সন্ধ্যা হলেই মাদকের পসরা বসে।বিজ্ঞান অনুষদেও রয়েছে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতে পার্ক করা জবির বাসগুলোর চিপায়, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আশপাশে, বিজ্ঞান অনুষদের নিচতলায়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে চলে মাদক সেবন। এছাড়া দুপুর ঘনিয়ে আসলেই ক্লাস বিরতির সময় বিশ্ববিদ্যালয় বাসে দলে দলে শিক্ষার্থীদের মাদকের আসর দেখা যায়। বাসে মাদক গ্রহণের ফলে গন্ধে বাসের পরিবেশ নষ্ট হয় বলে অভিযোগ করে বাসের শিক্ষার্থীরা।।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উল্কা-৩ বাসে যাতায়াতকারী এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের দ্বিতল বাস চলে মাদকের রমরমা আড্ডা। একদিন ২.৩০ এ ক্লাশ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিশ্রামের জন্য বাসের দুই তলায় উঠি। কিন্তু বাসে ওঠতেই মাদকের বিশ্রী গন্ধ নাকে এসে লাগে। কয়েকজন ছেলেদের এ্যালকোহলের বোতল হাতে দেখে তারাতাড়ি বাস থেকে নেমে যাই। তারপর আমি আর ওই বাসে যাই নি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের ছাত্রী কমনরুমের সামনে চলে মাদকের রমরমা আড্ডা। মাদকসেবীরা স্থানটির নাম দিয়েছেন জগন্নাথের কাশ্মীর। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত ছাত্রীরা অভিযোগ করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের কমনরুমের সামনের অংশটিতে মাদকসেবীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। রাতের অন্ধকারে এখানে মাদক সেবন করা হয় ফলে জায়গাটি নোংরা হয়ে থাকে।এ খানে অনেক সময়ই পেপার বিছানো থাকতে দেখি। একটি ছাত্রী কমনরুমের সামনে মাদকসেবীদের এরকম আড্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। এদিকে ক্যাম্পাসে রাতে মাদক সেবনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন নৈশ প্রহরী। তারা বলেন, আমাদের সামনেই মাদক সেবন করা হয়। ভয়ে তাদের কিছু বলতে পারিনা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি নিরাপত্তা কর্মীদের আরো বেশি নজরদারি বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। মোস্তফা কামাল আরও বলেন, দ্বিতল বাসগুলোর গেট যেন ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার আধাঘন্টা আগে না খোলা হয় সেজন্য খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নিব।
বাবু/জাহিদ