যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের। তবে তিনি এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন কিনা— তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সৌদি রাজপরিবারের একটি ঘনিষ্ট সূত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, সোমবার রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্বে যোগদান উপলক্ষে লন্ডনে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত না যাওয়ার সম্ভবনাই বেশি যুবরাজের।
তার পরিবর্তে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যুবরাজের কাজিন প্রিন্স তুর্কি বিন মোহাম্মদ আল সৌদি রাজপরিবারের পক্ষ থেকে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা বেশি। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই এ পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
আগামীকাল ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চুড়ান্ত পর্যায়। এই দিনই ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে থেকে তার মরদেহ সমাহিত করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হবে।
এই পর্বে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ব্রিটেনের সরকার। তবে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানকেই উপস্থিত থাকতে হবে— এমন শর্ত রাখা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে যে কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে পারবেন।
ধার করা হচ্ছে, সৌদি বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা, তার জেরে সম্ভাব্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতেই যুক্তরাজ্য সফর বাতিল করেছেন যুবরাজ।
যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে নিয়মিত কলাম লিখতেন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে নিখোঁজ হন খাসোগি। পরে জানা যায়, তাকে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
খাসোগি হত্যাকাণ্ডে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলে সৌদি যুবরাজের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই খুনের আদেশ স্বয়ং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দিয়েছেন বলে তাদের বিশ্বাস।
সিআইএর এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তুরস্কের আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি সত্য যে খাসোগিকে এজেন্টরাই হত্যা করেছে, কিন্তু এই হত্যার নির্দেশ এসেছিল সৌদি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে।
সৌদি সরকার অবশ্য এ ঘটনায় যুবরাজের জড়িত থাকার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। পাশাপাশি দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্য কোনো দেশের এজেন্টরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।
২০২০ সালে এই হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আট ব্যক্তিকে কারাদণ্ডও দিয়েছেন সৌদির একটি আদালত।
কিন্তু তারপরও এই অভিযোগ থেকে মুক্তি পাননি যুবরাজে। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি প্রথমবারের মতো সৌদি আরব সফরে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। সেই বৈঠকে আলোচনার প্রথম ইস্যু ছিল খাসোগি হত্যায় যুবরাজের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, ‘আমি বলেছি, মানবাধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সোচ্চার। আমি সেই দেশের প্রেসিডেন্ট এবং আমি সবসময় আমাদের মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়াব। পাশপাশি তাকে এই ইঙ্গিতও দিয়েছি যে, আমি মনে করি এই হত্যায় তার (যুবরাজ) সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।’
‘তিনি (মোহাম্মদ বিন সালমান) আমাকে বলেছেন— তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই হত্যায় যুক্ত নন। পাশাপাশি আরও বলেছেন, যারা (এ হত্যায়) সংশ্লিষ্ট, তাদের বিরুদ্ধে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছেন।’
-বাবু/এসআর