সমাজের ভেতরে বাইরে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস মাড়িয়ে দারিদ্রতা, কুসংসস্কার, অবহেলা ও মন খারাপের সময়গুলোকে হটিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লাল সবুজের অসীম আকাশে উড়াল দিয়েছে একঝাঁক পাখি। ঐ নতুনের কেতন উড়িয়ে তারা আমাদের ফিনিক্স পাখি। তারুণ্যরাঙা সময়ের সঙ্গে এগিয়ে থাকা ফুটবল জয়ী এই মেয়েরা ছিনিয়ে এনেছেন শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। তাদের ওঠে আসার সুদীর্ঘ সংগ্রাম পৃথিবীকে আরেকবার জানিয়ে দিতে বিশেষ আয়োজন পঁচিশ গোলাপের গল্প সাজিয়েছেন আনোয়ার বারী পিন্টু।
অধিনায়ক সাবিনা খাতুন
সাবিনার দুই পায়ের যাদু অনন্য এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। শুরুটা খুব একটা সহজ ছিলো না। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সংগ্রাম করে ফুটবল ছিল তার ধ্যানে, জ্ঞানে। প্রতিটি খেলায় সাবিনার ক্রীড়া শৈলী ছিল খুবই আকর্ষণীয়। সাফ নারী চ্যাম্পিয়ানশিপের প্রতিটি খেলায় সাবিনা দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশ নারী ফুটবল টিমের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার ভাড়া বাসায় বসবাসকালে ২০০৬ সাল থেকেই সাবিনার ক্রীড়া অনুশীলন শুরু। স্কুলের শিক্ষকরাই তার অনুপ্রেরণা। বর্তমানে শহরের সবুজবাগ এলাকায় কোনোক্রমে মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে সাবিনার পরিবারের। ২০০০ সালে তার পিতা সৈয়দ আলী গাজীর মৃত্যুর পর পাঁচ বোন ও মাকে নিয়ে সাবিনার পরিবারে নেমে আসে অনামিষার অন্ধকার। কিন্তু অদম্য সাহস ও প্রতিভা নিয়ে দুর্বার গতিতে ছুটে চলে সাবিনা।
বহুমুখী প্রতিভা সানজিদা
দেশের নারী ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত একটি না সানজিদা আক্তার। তিনি শুধু ফুটবলেই নাম করেননি। তার রয়েছে আরও অনেক প্রতিভা। ফুটবলের পোস্টারগার্ল হিসেবে খ্যাত সানজিদা আক্তার। ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের এ তরুণী বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। দেশের ফুটবলের পোস্টারগার্ল হিসেবে খ্যাত সানজিদা আক্তার। ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের এ তরুণী বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সানজিদা ভালো গানও গাইতে পারেন। বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার অনেক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন, ফিরিয়ে দিয়েছেন নাটকে অভিনয় করার প্রস্তাবও। সবই তিনি করেছেন লেখাপড়া ও খেলার স্বার্থে। সানজিদা আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-র অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। লেখাপড়াতে ভীষণ ভালো তিনি।
মাসুরা পারভিন
সাতক্ষীরা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বিনেরপোতা এলাকায় মাসুরার বাবা নতুন বাড়ি করেছেন। মেয়ে ফুটবল খেলুক তা চাননি মাসুরা পারভীনের বাবা রজব আলী। তবে মেয়ের জেদের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছে তাকে। অবশ্য মেয়ের জেদের চেয়ে মাসুরার কোচ আকবর আলীর চেষ্টা ও মাসুরার মা ফাতেমা বেগমের চাওয়াকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছেন রজব আলী। শহরের নানা জায়গায় চায়ের দোকানও চালিয়েছেন তার বাবা। ভ্যানে করে ফল-সবজিও বিক্রি করেছেন।
দূর পাহাড়ের দ্যুতি রূপনা, ঋতুপর্ণা ও মনিকা চাকমা
রূপনা চাকমাদের দূর পাহাড়ের ছোট কুড়েঘরটি থেকে যেনো আলোর রোশনাই ফুটছে। পুরো দেশ মেতে আছে যে মেয়ের অর্জনে সেই রূপনা চাকমা আর ঋতুপর্ণা চাকমা দূর পাহাড়ের প্রান্তে জীবন থেকে ওঠে আসা দুই কন্যা। যাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করাটাই যুদ্ধের মতো, পথ নেই, নেই কোন আধুরিকতার ছোঁয়া সেই মেয়েরাই দেখিয়েছেন অনন্য এক নতুন পথ। গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, খুব সহজ ছিলোনা রূপনার বাসায় যাওয়া। প্রধান সড়ক থেকে প্রায় পঁচিশ মিনিট পায়ে হেঁটে, ভাঙা নড়বড়ে ডাক সেতু পেরিয়ে যেতে হয় রূপনার বাড়িতে। রুপনাদের পরিবারের অবস্থা নাজুক। জন্ম থেকে বাবার মুখ দেখেনি। ঋতুপর্নাও একই স্কুলের ছাত্রী। তারা এখন বিকেএসপিতে পড়ছে। আর মনিকা চাকমাও এই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছে। রাঙামাটি শহর পেরিয়ে কাউখালি উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ের মগাছড়ির যেখানে ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি সেখানেও হেঁটে যেতে হয়।
মনিকা চাকমার বাসা খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়া অঞ্চলে। বাবা বিন্দু কুমার, পেশায় একজন কৃষক; মা রভি মালা, গৃহিণী। মনিকা ছোট থেকেই এলাকার ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলতেন, যা তার বাবা মোটেও পছন্দ করতেন না। নেপালে অনুষ্ঠিত হয় সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন আয়োজিত 'সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৯ টুর্নামেন্টে মঙ্গোলীয়ার বিপক্ষে চোখ ধাঁধানো গোল করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ফুটবলের এক নতুন চিত্র অঙ্কন করেন মনিকা। তাঁ এই গোলের জাদু দেখেই ফিফা তাকে ‘ম্যাজিক চাকমা’ উপাধি দেয়।
যমজ দুই বোনের বিজয়গাঁথা
আঁকাবাঁকা পথ, দুই পাশে পাহাড়। সেই পাহাড়ের বুকে বাড়ি। সেখানে জন্ম, বেড়ে ওঠা। একটা টেলিভিশনই যেখানে স্বপ্নের মতো, সেখানে ইন্টারনেট রীতিমতো অষ্টমাশ্চর্য। এমন পাহাড়ি গ্রাম থেকে উঠে এসে বিজয়ের মালা গলায় জড়নো কতোটা কঠিন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আনাই মোগিনি ও আনুচিং মোগিনির চেয়ে যোগ্য আর কে হতে পারে! খাগড়াছড়ির সাতভাইয়াপাড়া পাহাড়ি গ্রামে জন্ম তাদের। ২০০৪ সালে আনাইয়ের জন্মের পাঁচ মিনিট মধ্যে আনুচিং পৃথিবীর মুখ দেখেন। সন্তানের জন্মে খুশির জোয়ার বয়ে যাওয়ার বদলে সে সময় তাদের বাবা-মা ছিলেন দুশ্চিন্তায়। জন্ম কয়েক মিনিটের ব্যবধানে, প্রায় একই চেহারা, দুজনই ফুটবলার, খেলার শুরুও একই সঙ্গে। কিন্তু একটি জায়গায় তাদের অমিল। আনাই ডিফেন্ডার আর আনুচিং ফরোয়ার্ড। দুই বোন মাঠের দুই অংশে দাপট জারি রেখে কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলে খেলে আসছেন।
এক গ্রামে আট জন
নিভৃত গ্রাম থেকে ওঠে আসাটা অতোটা সহজ ছিলো না। সমাজের কুসংস্কার ও টিপ্পনীকে একপাশে ছুড়েঁ ফেলে তারা জয় করেছে গণমানুষের হৃদয়। সবচেয়ে চমকানো বিষয় ছিল নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের ৮ জনই গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত কলসিন্দুর গ্রামের। তাদের মধ্যে, সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্ডা, তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার (সিনিয়র), শামসুন্নাহার (জুনিয়র), শিউলি আজিম, সাজেদা খাতুন ও মার্জিয়া আক্তার। এই ৮ জন ছাড়াও আরও অনেক কিশোরী ফুটবলার উঠে এসেছে এ গ্রাম থেকে। গত প্রায় এক দশক ধরে দেশের নারী ফুটবল মাতাচ্ছে অজপাড়া গাঁ কলসিন্দুর থেকে উঠে আসা এই ফুটবলাররা। তাদের পায়ের জাদুতে দেশের ধুঁকতে থাকা ফুটবলে ফিরেছে আশার আলো। একইসঙ্গে পরিচিতি এনে দিয়েছে ছায়া সুনিবিড় কলসিন্দুর গ্রামকে। এছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিকের ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বইয়ের অধ্যায় ৫- এ ৮৮ নম্বর পৃষ্ঠায় দেওয়া হয়েছে তাদের বড় ছবি, দু’হাত মেলে গোল উদযাপনে ব্যস্ত জাতীয় দলের মিডফিল্ডার মারিয়া মান্ডা। ‘দ্য আনবিটেন গার্লস’ (অপরাজেয় মেয়েরা) এই শিরোনামের গল্পে বলা হয়েছে মারিয়া, সানজিদাদের লড়াই সংগ্রামের গল্প। চারটি পৃষ্ঠার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী এলাকার গারো পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উঠে আসা একদল কিশোরীর সাফল্যের গল্প।
হীরার টুকরা কৃষ্ণা রাণী
টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের উত্তর পাথালিয়া গ্রামে দরিদ্র পরিবার থেকে বেড়ে উঠা কৃষ্ণা রাণী সরকারের। যখন ৫ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে তখন স্কুল পর্যায়ে বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট থেকে উঠে আসা কৃষ্ণা রাণী সরকারের। ভাঙ্গা ঘরে যেনো হীরার টুকরা কৃষ্ণা রাণী সরকার। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের অনবদ্য এক ইতিহাস জন্মক্ষণে এই ঐতিহাসিক ম্যাচে জোড়া গোল করে কৃষ্ণা রাণী সরকার।
নিলুফা ইয়াসমিন
ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য দেখানো কুষ্টিয়ার অন্যান্যদের তালিকায় নারী খেলোয়াড় নিলা সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি মুখ উজ্জল করেছেন কুষ্টিয়াবাসীর। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা ও সামাজিক কুসংস্কার-প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য খেলাধুলাসহ ফুটবল খেলায় তিনি এখন সফল নারী খেলোয়াড় হিসাবে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। রিক্সাচালক বাবা তার মাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় নিলুফার বয়স ছিল মাত্র আড়াই বছর ও তার ছোট বোন সুরভী আক্তারের বয়স তখন ছিল মাত্র দেড়মাস। কুসংস্কারছন্ন সমাজে নিলুফাকে খেলোয়াড় বানাতে তার পরিবারকে নানা নেতিবাচক কথাও শুনতে হয়েছে।
সিরাত জাহান স্বপ্না
রংপুর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের অজপাড়াগাঁ পালিচড়া জয়রাম গ্রাম। এই গ্রামেই বাড়ি নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় সিরাত জাহান স্বপ্নার। রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্করিনী ইউনিয়নের পালিচড়া জয়রাম গ্রামটি নারী ফুটবলের গ্রাম হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে। স্বপ্না এই গ্রাম থেকেই উঠে এসেছেন। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১১ সালে স্বপ্নার ফুটবল খেলা শুরু। সেই স্বপ্না এবার নারী সাফ ফুটবলে ১০ নম্বর জার্সি পড়ে খেলেছেন। মা লিপি বেগম বলেন, তার খেলা নিয়া গ্রামোত কতজনে কত কথা কইছে। টিটকারি করছে। কিন্তু স্বপ্না খেলা ছাড়ে নাই। হামরাও মানুষের বাজে কথাত কান দেই নাই।
সোহাগী কিসকু-স্বপ্না রানী
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দুই নারী ফুটবলার সোহাগী কিসকু ও স্বপ্না রানী, ইতিহাস গড়া এই খেলায় অংশগ্রহণ করেছে। যে গ্রামবাসী সবসময় বলত মেয়েরা ফুটবল খেলবে এ নিয়ে কত কথা, কত কটূক্তি ! সেসব উপেক্ষা করে খেলা চালিয়ে গেছেন সোহাগী কিসকু আর স্বপ্না রানীরা। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্য সোহাগী কিসকু। বাবা গুলজার কিসকু পেশায় কৃষিশ্রমিক। কটূক্তি করতেন গ্রামের অনেকে। রেগে গিয়ে তিনি মেয়েকে ঘরে আটকে রাখতেন। তবে সুযোগ পেলেই মাঠে চলে যেতেন সোহাগী। পাশের বনগাঁও শিয়ালডাঙ্গী গ্রামে স্বপ্নাদের বাড়ি। মা সাবিলা রানী বললেন, ফুটবল খেলতে গিয়ে মেয়েটা কতই না কষ্ট করিছে। মেয়েটার জন্য আজ ভালো লাগছে।
সাথী বিশ্বাস ও ইতি
মাগুরার ইতি রানী ও সাথী বিশ্বাস। অতিরিক্ত গোলরক্ষক হিসেবে বাংলাদেশ দলে ইতি ও সাথী বিশ্বাস নাম লেখিয়েছিল। মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার গোয়ালদহের সাথী ও ইতির পরিবারে চলছে আনন্দের বন্যা। সাথীর বাবা বিদ্যুৎ বিশ্বাস পেশায় একজন ছবি তোলার কারিগর। ইতির পরিবারে চলছে আনন্দের বন্যা।
আঁখি খাতুন- প্রতিবেশীরা কথা বলেন না
মোসাম্মৎ আঁখি খাতুন তার ডিফেন্সিভ দক্ষতার কারণে দেশ-বিদেশে প্রশংসায় ভাসলেও গ্রামের বাড়িতে প্রতিবেশী কেউ কেউ তাদের সাথে কথা বলেন না। তার ‘বংশের’ মানুষেরা এখনো তাকে এবং তার মা-বাবাকে ‘বাজেভাষায়’ কথা শোনায়। আঁখির বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পারকোলা গ্রামে। উচ্চতা আর শারীরিক গঠনের কারণে এই আঁখি বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের সম্পদে পরিণত হয়েছেন। তিনি ডিফেন্সে থাকা মানে প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকারদের ‘ভয়’ ধরে যাওয়া। রক্ষণভাগে যেমন ‘অতন্দ্রপ্রহরী’, তেমনি কর্নারের সময় প্রতিপক্ষের বক্সে ‘দির্ঘাঙ্গী আতঙ্ক’।
ছায়ার মতো ওরা তিন
গোলাম রব্বানী ছোটন, মাহবুবুর রহমান লিটু ও মাহমুদা আক্তার অনন্যা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। লিটু ও মাহমুদা খাতুন দম্পতি সাবিনাদের দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বে এই কোচিং স্টাফ দম্পতির রয়েছে বিশেষ অবদান, ত্যাগও কম নয়। ২০১৬ সালের পর থেকে নারী ফুটবলের আবাসিক ক্যাম্প নিয়মিত হচ্ছে। ক্যাম্প কমান্ডার হওয়ায় অনন্যাকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পেই থাকতে হয়, বিশেষত রাতে। নারীদের অনুশীলনও চলে নিয়মিত। ফলে সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটুও থাকেন ক্যাম্পে। দুই জনই নারী ফুটবল নিয়ে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকায় তাদের দুই সন্তান বাবা-মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত।
গোলাম রব্বানী ছোটন ও মাহবুবুর রহমান লিটু ফুটবলাঙ্গনে অন্যতম মানিক জোড় হিসেবেই পরিচিত। ২০০৯ সাল থেকে দু’জনের নারী কোচিংয়ে সম্পৃক্ত। লিটুর কোচিংয়ে এক সময় জাতীয় নারী দলেই খেলেছেন অনন্যা। ২০০৪ সালে ক্যারিয়ার শুরু করা অনন্যা ২০১০ সালে অবসর নেন। এর পরের বছরেই লিটুর জীবনসঙ্গিনী হন। আরেক সাবেক ফুটবলার সৈয়দ গোলাম জিলানীর মাধ্যমে তার কোচিংয়ে আসা। ২০০৫ থেকে এএফসি’র আওতায় বাফুফের কোচিংয়ে প্যানেলে তিনি যুক্ত রয়েছেন।
তমা ও এনভয় গ্রুপ
বিসিবি, তমা গ্রুপ ও এনভয় গ্রুপের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে মোট দেড় কোটি টাকা পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সাফের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে দেশে ফেরার পর থেকে একে পুরস্কারের খবর পাচ্ছেন বাংলাদেশ নারী দলের ফুটবলাররা। নারী দলকে ৫০ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেয় বিসিবি। বাফুফের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরে সাবিনা-কৃষ্ণাদের অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত হয়ে বাফুফের সহ-সভাপতি ও তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান তমা গ্রুপের পক্ষ থেকে নারী দলকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর দুপুরে বাফুফে কার্যালয়ে আরও ৫০ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেন বাফুফের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী। এরপর বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে এক কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
শামসুন্নাহার জুনিয়র, মাঠের অবস্থান মিডফিল্ডার: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক আক্রমণাত্মক, সুপার সাব হিসেবে দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গোল করে থাকেন।
সাবিনা খাতুন, মাঠের অবস্থান স্ট্রাইকার: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক ক্যাপ্টেন, গোল মেশিন, দলের প্রয়োজনে পেছনে থেকে খেলতে পারেন ফ্রি রোলে।
আঁখি খাতুন, মাঠের অবস্থান ডিফেন্ডার: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক, ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির এই ডিফেন্ডার দলের জন্য হয়ে উঠেন চীনের প্রাচীর, ডি বক্সের ভেতর প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ডকে কোন সুযোগই দেন না ।
মাসুরা পারভীন, মাঠের অবস্থান ডিফেন্ডার: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক, ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির এই ডিফেন্ডার, প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডের জন্য আতঙ্ক, পাশাপাশি প্রয়োজনে উপরে উঠে গোলও করে থাকেন।
সিরাত জাহান স্বপ্না, মাঠের অবস্থান স্ট্রাইকার: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক, সহজাত গোল স্কোরার, ডি বক্স ও এর বাইরে ভয়ংকর।
সানজিদা আক্তার, মাঠের অবস্থান রাইট উইং: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক, নিখুঁত ক্রস করে থাকেন, সাথে আছে গতির সমন্বয় ।
মনিকা চাকমা, মাঠের অবস্থান মিডফিল্ডার: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক, প্রতিপক্ষের ডিফেন্স চিড়ে ঢুকে পরেন সহজাত ড্রিবলিং দিয়ে, স্ট্রাইকারদের জন্য বলের যোগান দেন।
শিউলি আজিম, মাঠের অবস্থান ডিফেন্ডার: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক, সেন্ট্রাল ব্যাক, প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডের জন্য দেয়াল হয়ে দাঁড়ান।
মারিয়া মান্ডা, মাঠের অবস্থান মিডফিল্ডার: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক, দলের হৃদপিন্ড, প্রচুর পরিশ্রমী একজন খেলোয়াড়, বলের পজিশন ধরে রাখতে পারদর্শী, দুই উইং এ লং বলের জোগান দিয়ে থাকেন।
কৃষ্ণা রানি সরকার, মাঠের অবস্থান স্ট্রাইকার: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক, তাৎক্ষণিক গতিতে পরাস্থ করে ফেলেন প্রতিপক্ষকে, সাথে প্রচণ্ড গতির শট নিতেও পারদর্শী।
রুপনা চাকমা, মাঠের অবস্থান গোল কিপার: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক, বাঁজপাখির মতো ঝাঁপ দিতে পারেন, গোল পোস্টের অতন্দ্র প্রহরী, চমৎকার রিয়েকশন ও রিফ্লেকশন।
শামসুন্নাহার, মাঠের অবস্থান ডিফেন্ডার/উইং ব্যাক: প্রতিপক্ষের আতঙ্ক, রক্ষণে অবদান রাখেন, ওভার লেপিং করে দলীয় আক্রমণে গতি বাড়ান ।