শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫ ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
আল্লাহর ভয়ই বান্দার সম্মানের মাপকাঠি
বুলেটিন ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২২, ৪:১০ PM
সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিকে? এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। তিনি বলেছেন, তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিরাই সবচেয়ে সম্মানিত। মানুষ তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী হয়। তাহলে সব মানুষের এ আত্মবিশ্লেষণ করা জরুরি যে, আমি কতটুকু তাকওয়া অর্জন করতে পারলাম। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এ কথারই ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-
اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ اَتۡقٰکُمۡ
‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে মুত্তাকি ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদা ও সম্মানের মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া। যার চরিত্রে তাকওয়ার মাত্রা যেমন, আল্লাহতায়ালার কাছে তার মর্যাদা তেমন।

জাহিলিয়াতের যুগে বড় বড় নেতারাও আল্লাহকে ভয় করেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, ফলে তারা ইসলাম গ্রহণের পরে মর্যাদাবান হয়ে যান। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, ‘সবার চেয়ে যে বেশি আল্লাহকে ভয় করে। সাহাবাগণ বললেন, আমরা আপনাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করছি না। তিনি বললেন, আল্লাহর নবি ইউসুফ, তাঁর পিতা আল্লাহর নবি, তাঁর পিতা আল্লাহর নবি এবং তাঁর পিতা ইবরাহিম খলিলুল্লাহ। সাহাবাগণ বললেন, ‘আমরা আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছি না।’ তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তাহলে তোমরা আরবের বিভিন্ন গোত্রের কথা জিজ্ঞাসা করছো? জেনে রাখ! জাহিলিয়াতের যুগে তাদের মধ্যে যারা ভালো ছিল, তাঁরা ইসলামের যুগেও ভালো, যদি তারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানবান হয়ে থাকে। (বুখারি ও মুসলিম)

যারা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মর্যাদাবান তথা সমাজের নেতা ছিল। তারা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ঈমান এনেছেন । তাই আল্লাহর ভয়ই তাঁদেরকে ইসলামের যুগেও অত্যাধিক সম্মানিত করেছে।

এখানে তাকওয়া তথা আল্লাহকে ভয় করার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি মুত্তাকিদের মৌলিক গুণাবলি উল্লেখ করা হয়েছে। তাকওয়া শব্দের অর্থ সাবধানতা ও সংযম। কর্তব্য পালন ও বর্জনীয় পরিহারের সমষ্টিও তাকওয়া। আর সাধারণভাবে তাকওয়া শব্দের অর্থ করা হয়- আল্লাহর ভয়।

মহান রাব্বুল আলামিনের সামনে একদিন সবাইকে হাজির হতে হবে। দুনিয়াবি জীবনের প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণের হিসাব দিতে হবে। এ বিশ্বাস ও ভয়ই মানুষকে সাবধানি ও সংযমী করে তোলে। তাকওয়ার মর্ম বর্ণনায় হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-এর একটি উক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যবহ।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার হজরত উবাই ইবনে কাবকে তাকওয়ার মর্ম বর্ণনার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, আমিরুল মুমিনিন, আপনি কি কখনো কাঁটা ঝোপের মধ্য দিয়ে পথ চলেছেন? সেখানে যেমন আপনাকে সব সময় সাবধানে নিজের শরীর ও কাপড় রক্ষা করে চলতে হয়। তাকওয়া ঠিক তেমনই সাবধানি আচরণ ও জীবন-যাপনের নাম। বস্তুত আল্লাহর কাছে বান্দার জবাবদিহির অনুভূতিই তাকওয়া।

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য যা অবশ্যক পালনীয় বিষয় হচ্ছে- ফরজ ও ওয়াজিব পালন করা এবং যা অবশ্যক বর্জনীয় অর্থাৎ হারাম ও মাকরুহ তাহরিমি, তা বর্জন করা। এটি তাকওয়ার প্রাথমিক পর্যায়। তাকওয়ার ন্যূনতম পর্যায় হারাম ও মাকরুহ তাহরিমি বর্জন এবং ফরজ ও ওয়াজিব আদায় করা। কারও মধ্যে কমপক্ষে এতটুকু থাকলেও তিনি মুত্তাকি।

সর্বোপরি তাকওয়া ধরে রাখতে সৎকর্মশীলদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে বেশি বেশি এ দোয়া পড়া-
اَللَّهُمَّ طَهِّرْنِيْ فِيْهِ مِنَ الدَّنَسِ وَالْأَقْذَارِ، وَصَبِّرْنِيْ فِيْهِ عَلَى كَائِنَاتِ الْأَقْدَارِ، وَوَفِّقْنِيْ فِيْهِ ِللتَّقَى وَصُحْبَةِ الْأَبْرَارِ، بِعَوْنِكَ يَا قُرَّةَ عَيْنِ الْمَسَاكِيْن
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ত্বাহহিরনি ফিহি মিনাদ্‌দানাসি ওয়াল আক্বজারি; ওয়া সাব্বিরনি ফিহি আলা কায়িনাতিল আক্বদারি; ওয়া ওয়াফ্‌ফিক্বনি ফিহি লিততুক্বা ওয়া সুহবাতিল আবরারি; বিআওনিকা ইয়া কুর্‌রাতা আইনিল মাসাকিন।’

অর্থ : হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে পাপরাজি ও অপবিত্রতা থেকে পবিত্র কর। যা কিছু তকদির অনুযায়ী হয়, তা মেনে চলার ধৈর্য আমাকে দান কর। তোমার বিশেষ অনুগ্রহে আমাকে তাকওয়া অর্জন এবং সৎ কর্মশীলদের সাহচর্যে থাকার তাওফিক দাও। হে অসহায়দের আশ্রয়দাতা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাকওয়া অর্জন করার তাওফিক দান করুন। তাকওয়াভিত্তিক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত