রাত পেরোলেই কাতারে পর্দা উঠবে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ বা ফুটবল বিশ্বকাপ– ২০২২ এর। এর মধ্যেই শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিশ্বকাপের আটটি ভেন্যুতেই বিয়ার বিক্রি ও পান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কাতার সরকার ও বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। শেষ মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্তে আয়োজনের স্পন্সরশিপ নিয়ে আইনি জটিলতায় পড়তে পারে ফিফা।
জানা যায়, বিয়ার প্রস্তুতকারক কোম্পানি বাডউইজার বিশ্বকাপ আয়োজনের অন্যতম স্পনসর। স্টেডিয়ামে বিয়ার পান করা নিষিদ্ধ করায় বাডউইজারের সঙ্গে ৭৫০ লাখ ডলারের (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৭১ কোটি টাকা) চুক্তি ভঙ্গ হচ্ছে ফিফার।
নাম না প্রকাশের শর্তে অন্য একটি স্পনসর কোম্পানির এক প্রতিনিধি জানান, এরই মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তি লঙ্ঘন ও পণ্য সরবরাহ বাতিলের বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। অনেক অংশীদারই এবারের আয়োজনে ফিফার সিদ্ধান্তে হতাশ অনুভব করছে।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত সবাই ধৈর্য্য ধরে বসে আছে। আমাদের জন্য চুক্তি অনুযায়ী কী কী সুযোগ বহাল থাকবে, তা নিয়ে অনেক আলোচনা ও পুনর্বিন্যাস চলছে।
এর আগে ফিফা কাতার সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী নিশ্চিত করেছিল যে, স্টেডিয়ামগুলোর ভেতরে ও আশেপাশের কোনো জায়গায় মদ বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু পরে মাঠে বিয়ার রাখার অনুমতি দেয় কাতার কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু শুক্রবার কাতারের রাজ পরিবার থেকে সরাসরি চাপ প্রয়োগের পর বদলে ফেলা হচ্ছে আগের সব সিদ্ধান্ত। এখন কেবল স্টেডিয়ামের বাইরে ‘অ্যাক্টিভেশন জোনেই’ বিয়ার পাবেন সমর্থকরা, তবে তা মাঠে নিয়ে যাওয়া যাবে না। মাঠের মধ্যে মিলবে অ্যালকোহলমুক্ত বিয়ার।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ফিফা জানায়, আয়োজক দেশের কর্তৃপক্ষ ও ফিফার মধ্যকার আলোচনা শেষে স্টেডিয়ামগুলোর ভেতর থেকে বিয়ার বিক্রির স্থানগুলো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ কাতার একটি ইসলামি রাষ্ট্র, প্রথাগতভাবেই এখানে মদ্যপানের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে।
কাতারে বিলাসবহুল আন্তর্জাতিক হোটেল কিংবা রিসোর্ট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন সব রেস্তোরাঁয় অ্যালকোহল বিক্রি নিষিদ্ধ।
অবশ্য ফিফার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, স্টেডিয়ামের ভিআইপি অতিথি স্ট্যান্ডে পর্যাপ্ত বিয়ার পাওয়া যাবে। তাছাড়া দোহায় অবস্থিত ফিফার ফ্যান জোন, কিছু প্রাইভেট ফ্যান জোন ও ৩৫টি হোটেল- রেস্তোরাঁয় বিয়ার পাওয়া যাবে।
বিশ্বকাপের ফ্যান ফেস্টিভাল হবে দোহার আল বিদ্দা পার্কে। যেখানে প্রতি ৫০০ মিলিলিটার বাডউইজার বিয়ারের মুল্য পড়বে ৫০ কাতারি রিয়াল বা প্রায় এক হাজার ৫০০ টাকা। তাছাড়া, স্টেডিয়ামের বাইরে প্রতিটি পার্কে একটি করে বিয়ার স্ট্যান্ড থাকবে। তবে সেক্ষেত্রে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হবে।
অনেকের মতে, শেষ মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ও কাতার কর্তৃপক্ষ কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি না হলে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে বাডউইজার।
অন্যদিকে, অনেকেই বিষয়টিকে বিয়ার বিক্রি নিষিদ্ধ করায় কাতারের বিপক্ষে যে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছিল তার প্রতি বুড়ো আঙুল প্রদর্শন হিসেবে দেখছেন। তার মানে, কঠোর সমালোচনা সত্ত্বেও কাতার তার রক্ষণশীল মুসলিম সংস্কৃতি ধরে রাখতে সফল হয়েছে।
স্টেডিয়ামে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার কিছুক্ষণ আগে, বাডউইজার কর্তৃপক্ষ একটি টুইটে লেখে, বিষয়টি অগ্রহযোগ্য। যদিও টুইটটি পরে ডিলিট করে দেয় বিয়ার প্রস্তুতকারী কোম্পানিটি।
কাতার কতৃপক্ষ বলছে, উপসাগরীয় ও এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর বিপুলসংখ্যক ফুটবলভক্ত কাতারে অবস্থান করছেন। মদ পান করা তাদের সংস্কৃতির অংশ নয় ও মদ্যপানে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাই সবার জন্য নিরাপদ ও উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ফুটবল সমর্থক সমিতি (এফএসএ) বিয়ার বিক্রি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের সময় নিয়ে সমালোচনা করেছে। সংগঠনটির এক মুখপাত্র বলেন, খেলা দেখতে আসা সবাই বিয়ার খান এমন নয়। শেষ সময়ে কাতার কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত দুঃখজনক।
‘আয়োজক দেশের এমন হটকারী সিদ্ধান্তে ফুটবলপ্রেমীদের আবাসন, পরিবহন বা সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো নিয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেগুলো আদৌ পূরণ করা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।’
বাবু/এসএম