ইউক্রেনে জ্বালানিসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে রুশ হামলায় ব্যাপক বিদ্যুৎ সংকটে পড়েছে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল। ইউক্রেনে শীতকালকে ঘিরে বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা থাকে। হিমশীতল আবহাওয়ায় ঘর উষ্ণ রাখতে এর বিকল্প নেই। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া মূল স্থাপনাগুলোতে হামলা শুরু করায় স্থবির হয়ে পড়েছে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলের জনজীবন।
এর মধ্যেই উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোটের (ন্যাটো) সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ বলছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শীত, তুষারপাত ও হিমশীতল আবহাওয়াকে নিজের সুবিধার কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনায় ছিলেন। আর এটি শুধু যুদ্ধের মাঠে নয়, ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধেও।
সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুদিনের বৈঠক শেষে স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন এখন শীতকালকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। এটি ভয়াবহ। এ ছাড়া আরও হামলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এ কারণেই ন্যাটোর মিত্ররা ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন বাড়িয়েছে।’
এদিকে, রোববার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেছেন, রুশ সেনারা নতুন করে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যতক্ষণ তাদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র থাকবে, ততক্ষণ তারা থামবে না। এসব মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এ বিষয়ে গতকাল সোমবার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলেনস্কি।
এর আগে জ্বালানি স্থাপনায় রাশিয়ার হামলা ও গণহত্যার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেন ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল অ্যান্দ্রি কস্টিন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের পুরো জাতিকে লক্ষ্য করে মূল স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। তবে রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গতকাল সোমবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার একের পর এক হামলায় ইউক্রেনজুড়ে লাখো মানুষ হিমশীতল আবহাওয়ার মধ্যেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরাতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে মাসের শুরুতে খেরসন অঞ্চল ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আসার পর সেখানে আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
তবে কিয়েভসহ ১৪টি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংকট চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। প্রসিকিউটর জেনারেল বলছেন, ইউক্রেনে ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে তার কার্যালয় ৪৯ হাজারের বেশি যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন অপরাধের তদন্ত করছে।
এর মধ্যে গত সপ্তাহে ব্যাপক মাত্রায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে ৫০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছিল ইউক্রেন।
ইউক্রেনের জাতীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনারগো বলছে, বিদ্যুতের মূল অবকাঠামোগুলো ঠিক করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও মেরামতের কাজে আরও সময় লাগছে।
এদিকে ইউক্রেনজুড়ে তীব্র শীত ও তুষারপাতে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় সারা দেশে হাইপোথার্মিয়ায় মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
-বাবু/এ.এস