প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিকে বিবেচনায় নিয়ে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে (ইনাগুরাল লিডারস সেশন) গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এ কথা বলেন।
গুরুত্বপূর্ণ এ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের একটি দেশ, ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ধারণার আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জি২০ এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানাই। আসুন আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং একটি উন্নত বিশ্বের জন্য একসঙ্গে কাজ করি।
টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তিনি কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রথমত, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, একটি নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন যা এসডিজির সমান্তরালে সামগ্রিকভাবে বৈষম্যকে মোকাবিলা করবে। তৃতীয়ত, স্বল্পোন্নত দেশ, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়নের প্রয়োজন, তাদের উত্তরণের সময় এটি পূরণ করতে হবে। চতুর্থ, নারীসহ সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল ডিভাইডস’ সেতুবন্ধন রচনার প্রয়োজনীয়তার উপর দিতে হবে। পঞ্চমত, সব মানুষেরই ভালোভাবে জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক সম্প্রদায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যেন ভুলবেন না।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাউথ-সাউথ ও ত্রি-পক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করুন। এখানে অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, থিংক-ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জি২০ প্ল্যাটফর্মকে আরও অর্থবহ করার জন্য তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। আমরা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সহযোগিতায় মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য আপনার (মোদির) জোরালো উদ্যোগে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারি এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী যে মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকট জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে যুক্ত করে মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বস্তরে সাহসী, দৃঢ় এবং সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি দেশ হিসাবে স্বীকৃত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ জিডিপির দিক থেকে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে মাত্র এক দশকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ হয়েছে।
সূত্র: বাসস
বাবু/এসআর