বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫ ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫
ডিসি সম্মেলন
প্রাথমিকে পোষ্য কোটা বাতিল ও মিড ডে মিল চালুর প্রস্তাব তোলা হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১১:৫০ PM
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা বাতিল, শিক্ষার্থী সংখ্যা কম থাকলে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূতকরণ এবং মিড ডে মিল চালুসহ আট দফা সুপারিশ করেছেন জেলা প্রশাসকরা। আগামী ২৪ জানুয়ারি ডিসি সম্মেলনের প্রথম দিনের তৃতীয় সেশনে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।

শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা বাতিল

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো জেলা প্রশাসকদের সুপারিশে দেখা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পোষ্য কোটা বাতিল করার সুপারিশ করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক। তার সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপজেলাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অধিক যোগ্যতা থাকার পরও পোষ্য কোটা থাকায় কোটাধারী দুর্বল প্রার্থীরা শিক্ষক পদে নিয়োগ পাচ্ছে।

এতে বলা হয়েছে, একই পরিবারে চাকরিজীবীর সংখ্যা বেড়ে যায়, দরিদ্র পরিবার/মেধাবী প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাই পোষ্য কোটা বাতিল করা হলে মেধারভিত্তিতে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব হবে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত তৈরি

সরকারি অর্থ অপচয় রোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যৌক্তিক অনুপাত বজায় রাখতে স্বল্প শিক্ষার্থী বিশিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূতকরণ করতে সুপারিশ করেছেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঠিক অনুপাত তৈরি হলে শিক্ষকের মান বৃদ্ধি পাবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

মিড ডে মিল চালু

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মিড ডে মিল’ চালুর প্রস্তাব করেছেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক। তার সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকার ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে বর্তমান প্রজন্মকে যোগ্য করে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের সূতিকাগার হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে পড়ালেখার পাশাপাশি শিশুর দেহ-মনের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটাতে মিড ডে মিল চালু করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সদর উপজেলায় চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চরাঞ্চলে অবস্থিত। এসব বিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। চরাঞ্চলে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। তাদের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ানো প্রয়োজন। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি দেশের ১০৪টি উপজেলায় চালু ছিল। এটি গত বছরের জুনে শেষ হয়।

এছাড়া শিশুর পুষ্টি ঘাটতি পূরণ, বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তি, নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি, ঝড়ে পড়া রোধ, যথাসময়ে শিক্ষাচক্র সমাপ্তকরণ ইত্যাদি দিক বিবেচনায় দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্যান্য সুপারিশে দেখা গেছে, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক উপজেলা শিক্ষা কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। তার যুক্তি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কমিটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিদ্যালয় পরিদর্শন ও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। তিনি এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করতে সুপারিশ করেন।

সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তার শূন্যপদে জনবল নিয়োগের সুপারিশ করেছেন নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক। তার সুপারিশে বলা হয়েছে, নেত্রকোনায় ৪৬টি সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদের মধ্যে ২৫টি শূন্য রয়েছে। এ জেলায় কর্মচারীর পদ ৫৮টির মধ্যে ২৭টি শূন্য। ১০ বছর ধরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই দ্রুত নন-ক্যাডার থেকে এসব পদে জনবল নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক হাওরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি ২৫ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত কার্যকর করা, বগুড়া জেলা প্রশাসক দুই শিফটের বিদ্যালয়ে তিনজন ও এক শিফটে কমপক্ষে ছয়জন শিক্ষককে নিয়োগ ও লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক জাতীয়করণ করা সরকারি বিদ্যালয়ে শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেন।

জানা গেছে, তিন দিনব্যাপী চলতি বছরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। সম্মেলন শেষ হবে ২৬ জানুয়ারি। এরই মধ্যে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে এ সংক্রান্ত নথি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আগের দুই বছর (২০২০ ও ২০২১) ডিসি সম্মেলন হয়নি। এরপর ২০২২ সালের সম্মেলন হয় গত বছরের ১৮-২০ জানুয়ারি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এটাই বর্তমান সরকারের শেষ ডিসি সম্মেলন। সে হিসেবে এ সম্মেলন বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. হেলাল মাহমুদ বলেন, ডিসি সম্মেলন ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সব জেলার ডিসিদের কাছ থেকে প্রস্তাব নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই হয়েছে। প্রস্তাবগুলো বই আকারে প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ২৪ জানুয়ারি সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সেখান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থাকবেন। তবে কার্য অধিবেশনগুলো গত সম্মেলনের মতো রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।

সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনাসামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য করোনা মহামারির আগে সাধারণত প্রতি বছর জুলাই মাসে ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হতো।

ডিসি সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ডিসিদের কার্য-অধিবেশন, একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনা, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও একটি সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। এবারের সম্মেলনেও এসব আনুষ্ঠানিকতা থাকছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

বাবু/এসআর 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত