যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে পূর্বঘোষিত গতকাল শনিবারের শান্তিপূর্ণ ইউনিয়ন পদযাত্রা কর্মসূচিতে দেশের ৪৩ জেলায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশি হামলায় ৫ শতাধিক নেতাকর্মী আহত, শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর-লুটপাট এবং ২ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
আজ রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে বর্তমান ফ্যাসিস্ট, বাকশালী আওয়ামী সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রাকে বানচাল করতে দলীয় সন্ত্রাসী ও কিছু সংখ্যক পুলিশেকে লেলিয়ে দিয়েছিল। গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির পদযাত্রায় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলা ও গুলিবর্ষণ করে।’
নরসিংদীর পলাশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের মিছিল থেকে ব্যানার ছিনিয়ে নেয়, যশোরে ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ অমিতের ওপর ডিবি পুলিশ বর্বরচিত হামলা চালায় বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন ড. মোশাররফ হোসেন।
নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হামলায় আহত ছাড়াও ড. মোশাররফ অভিযোগ করেন, সিরাজগঞ্জে এমপির নেতৃত্বে মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, গরু-ছাগল নিয়ে যাচ্ছে, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, কালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনিছুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার ছাড়াও জামালপুরের সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনকালে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ফেনীর সদর, ফুলগাজী, পশুরাম, ছাগলনাইয়া পদযাত্রা কর্মসূচিতেও হামলা হয়েছে। নওগাঁ, পটুয়াখালী, পিরোজপুরেও পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে।
ড. মোশাররফ বলেন, ‘নোয়াখালীর সদরে কবিরহাট পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু, কামরুল হুদা লিটন, ফজলুল হক খোকনের বাড়িসহ ও চাটখিলের তিনটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা এবং পুলিশ হামলা করে বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। সে সময় পৌর মেয়র মোস্তফা কামাল, আবু তাহের কোম্পানি, আয়াত হোসেন বাপ্পি মারাত্মকভাবে আহত হন। এছাড়া চাটখিল, সেনবাগ বেগমগঞ্জ কর্মসূচিতে সশস্ত্র হামলা করেছে। নোয়াখালী সদরে হামলায় গুরুতর আহত সুমন ভান্ডারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকায় আনা হয়েছে।’
মানিকগঞ্জ, ঝালকাঠি, গাজীপুর, চট্টগ্রাম উত্তর, নেত্রকোনা, বরগুনা, বাগেরহাট, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও, নাটোর, টাঙ্গাইল, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ দক্ষিণ, ভোলা, বরিশাল, খুলনা, লক্ষীপুর, মাগুরা, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ উত্তর, ঢাকা, পঞ্চগড়, কক্সবাজা, পাবনা, নড়াইল, রংপুর, লালমনিরহাট ও কুমিল্লা জেলায় শান্তিপূর্ণ ইউনিয়ন পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ হামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেন ড. মোশাররফ।
ড. মোশাররফ আরও বলেন, ‘ভোটারবিহীন অবৈধ এই সরকারের বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। নির্যাতনের মাত্রা যত বাড়বে, সরকারের বিদায় ঘণ্টা ততই ত্বরান্বিত হবে। তাই আমি বলতে চাই, এখনও সময় আছে জনগণের ভাষা বুঝে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে সংসদ বাতিল করে পদত্যাগ করুন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বলতে চাই, নিরীহ, নিরাপরাধ জনগণের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ করুন। সকল অত্যাচার নির্যাতন বন্ধ করে গ্রেপ্তার রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। আমি গ্রেপ্তার সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের সুস্থতা কামনা করছি। এইসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আওয়ামী নামধারী প্রশাসনের কতিপয় চিহ্নিত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।
বাবু/এ আর