শুরু হলো পলাশ ফোটার দিন, শিমুল ফোটার দিন। আজ পহেলা ফাল্গুন। তারুণ্যের মননে বসন্তের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে ঋতুর রানি বসন্ত। ‘আজি প্রাণে প্রাণে মিলবে প্রাণ-হূদয়ে উঠিবে প্রেমের তুফান। ফুলের সৌরভে মেতে উঠবে চারপাশ-প্রেমহীন হ্রদয়ে জেগে উঠবে ব্যাকুলতার হাঁসফাঁস।’
সৃষ্টির চিরায়ত নিয়ম মেনে ফাল্গুন যখন আসে, চারদিকের রঙিন সাজে প্রকৃতি হাসে। ফাল্গুনের উদাস হাওয়া, শিমুল, পলাশ, আর কৃষ্ণচূড়া, গাছে গাছে বাসন্তী রঙের কচি পাতার অপরূপ শোভায় ছড়িয়ে পড়ে। সাথে যোগ হয় কোকিলের মন পাগল করা কুহুতান। ঋতুর রানি বসন্তের খেতাবটি যেন প্রকৃতির রঙ-রূপ-রসে টইটম্বুর।
ঐতিহ্যগতভাবে বসন্তকাল একটি উৎসবমুখর ঋতু। শীতের মৌনতা ভেঙ্গে বাংলার প্রকৃতিতে আজ এসেছে বসন্ত। চারদিকে রঙ্গিন ফুলের সমারোহ। চতুর্দিকের মতো নিরব হয়ে বসে থাকেনি উপকূলের অক্সফোর্ড খ্যাত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
নোয়াখালীর বিভিন্ন জায়গায় বসন্ত উৎসব চললেও প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বাসন্তী সাজে সজ্জিত বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল আজকের নোবিপ্রবি। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ আজ এসেছিলেন ১০১ একরের এই ক্যাম্পাসে ঘুরতে। লাল, হলুদ, বাসন্তীসহ নানা রঙের পাঞ্জাবি আর ফতুয়া পরেছেন ছেলেরা। আর মেয়েরা এসেছেন লাল-হলুদ-বাসন্তী শাড়ি পড়ে, সঙ্গে খোঁপায় গাঁদা ফুল। সারাদিনব্যাপী দেখা যায় কেউ কেউ ছবি তুলছেন, কেউ বা আবার শান্তি নিকেতনে দিচ্ছেন গানের আড্ডা।
ফাল্গুনে কোকিল না ডাকলে, পলাশ শিমুল না ফুটলে বসন্ত কি পূর্ণতা পায়। এরই সাথে বাসন্তী শাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীরা বেরিয়ে পড়ে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে বসন্তের উচ্ছ্বাসে। প্রেমিক-প্রেমিকারা এই দিনে একে অপরকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন ফুলের বুকেট, চকলেট, টিপ, গয়না। ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা এক শিক্ষার্থী বলেন, "শিক্ষার্থীরা আজ তাদের হৃদয়ে লিখবেন নতুন কবিতা- প্রেমের অমিয় বাণীর ঢালি সাজিয়ে।"
তারই সাথে আজকে ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আয়োজনে দুইদিনব্যাপী সন্ধি উৎসব(২.০) এর শেষ দিন। নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন কয়েকজন। কেউ সেখান থেকে কিনেছেন ফুল, কেউবা কিনেছেন মালা, ফুলের তৈরি ক্রাউন। সেগুলো উপহার হিসেবে দিয়েছেন প্রিয় মানুষকে।
শিক্ষা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিলা দাশ পহেলা ফাল্গুনের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। ছোট বেলা থেকেই পহেলা ফাল্গুনের প্রতি আমার আলাদা একটা টান কাজ করে। পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখ এসব উৎসব আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। এসব উৎসব আমাদের সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশও বটে। এর মধ্য দিয়ে আমরা সবাই একত্র হওয়ার সুযোগ পাই।’
প্রসঙ্গত, আজ পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দুই উৎসবকে ঘিরে জোড়া উৎসবের আমেজ দেশজুড়ে। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে পরিবর্তন আনায় পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একদিনেই উদযাপন করছে উৎসবপ্রিয় বাঙালি।
বাবু/এসআর