রাশিয়া বিদেশি ‘নাশকতাকারীদের’ ব্যবহার করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মলদোভার বর্তমান ইইউপন্থি সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মায়া সান্দু। গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও বলেছিলেন, মলদোভাকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া। এদিকে মলদোভার ‘সরকার উৎখাতে পুতিনের ষড়যন্ত্র’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউরোপের দরিদ্র দেশগুলোর একটি মলদোভা। ইউক্রেন ও রোমানিয়ার মাঝখানে ছোট্ট দেশ এটি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ মলদোভা প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। গত গ্রীষ্মে দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার আবেদন করে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ মলদোভাকে দারুণ চাপে ফেলে দিয়েছে। মলদোভার মোট জনসংখ্যা ২৬ লাখ। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সে দেশ থেকে প্রচুর মানুষ প্রাণ বাঁচাতে মলদোভায় আশ্রয় নিয়েছে। মস্কোপন্থি অঞ্চল ত্রান্সনিসত্রিয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় হয়েছে সান্দু সরকার।
যেখানে প্রায় দেড় হাজার রুশ সেনা ঘাঁটি গেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া দেশটির জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা শুরু করলে তার প্রভাব মলদোভাতেও পড়ে। ইউক্রেনের মতো মলদোভাতেও লোডশেডিং দেখা দেয়।
প্রেসিডেন্ট সান্দু অভিযোগ করে বলেন, রাশিয়া সেনাবাহিনীতে কাজ করছে এমন ব্যক্তিদের নাশকতায় ব্যবহারে পরিকল্পনা করেছে। তারা বেসামরিক পোশাক পরে ছদ্মবেশে হিংসাত্মক পদক্ষেপ নেওয়ার এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ ও জিম্মি করার চক্রান্ত করেছে।
সান্দু আরো বলেন, তথাকথিত বিরোধীরা বিক্ষোভ আয়োজনের মাধ্যমে ঐ চক্রান্তে জড়িত হয়েছে। তারা সাংবিধানিক সরকারকে উৎখাত করতে চায়। রাশিয়ার ঐ চক্রান্তে মন্টেনেগ্রো, বেলারুশ ও সার্বিয়ার নাগরিকরাও জড়িত আছেন। তারা মলদোভায় প্রবেশ করে নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। তিনি মলদোভার পার্লামেন্টকে এমন আইন অনুমোদনের অনুরোধ করেন যাতে দেশটির গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিভাগ (এসআইএস) জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে আরো দক্ষতার সঙ্গে লড়াই করতে পারে।
জানা যায়, মলদোভার প্রধান সোশ্যালিস্ট ও কমিউনিস্ট বিরোধী জোটের সঙ্গে মস্কোর দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মলদোভা শাসন করা সান্দুর পূর্বসূরি ইগর ডোডনও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। যদিও ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মলদোভা রোমানিয়ার সঙ্গে মিত্রতা গভীর করেছে।
এর আগে গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, মলদোভাকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া। কিয়েভের গোয়েন্দা সংস্থা এ তথ্য পেয়েছে। সান্দু গত সপ্তাহে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কাউন্সিলের শীর্ষ সম্মেলনে ইইউ নেতাদের কাছে জেলেনস্কি দেওয়া এই বিবৃতি তুলে ধরেন। জেলেনস্কির দাবি, ক্রেমলিন মলদোভাকে ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পনা আঁটছে। মলদোভার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরে অবশ্য নিশ্চিত করে যে ইউক্রেন এমন একটি নথি পেয়েছে, যাতে রাশিয়ার চক্রান্তের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। জেলেনস্কি ইইউ নেতাদের কাছে তার দাবি তুলে ধরার পরদিন মলদোভার প্রধানমন্ত্রী নাটালিয়া গ্যাভরিলিতা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এই ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে ইউক্রেনে ছোড়া রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র মলদোভার আকাশসীমা হয়ে ইউক্রেনে আছড়ে পড়ে। গত শুক্রবার তিনি দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দোরিন রেচানকে বেছে নেন বলে জানা যায়।
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মলদোভায় অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করছেন বলে যে খবর পাওয়া গেছে, তা গভীর উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান কিরবি। এক দিন আগে মলডোভার প্রেসিডেন্ট মায়া সান্ডু জানিয়েছিলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন তার সরকার উৎখাতের ছক কষছে।
কিরবি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অভ্যুত্থানের খবরগুলো যাচাই করেনি। তবে আমি বিশ্বাস করি, পুতিন এমন কাজ করতেই পারেন। আমরা মলদোভা সরকার এবং সে দেশের জনগণের সঙ্গে আছি।
বাবু/এ আর