নড়াইলের সদর উপজেলার কলেজ ছাত্র দীপ্ত সাহা (২২) হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজন ও ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেল রাখার অভিযোগে একজনসহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে যশোর জেলা পিবিআই। এসময় ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ও পরদিন রোববার ভোরে অভিযান চালিয়ে নড়াইল সদর ও নড়াগাতি থানা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নড়াইল সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের শিশির সরকারের ছেলে সুমন সরকার (৩০), সরোজিত বিশ্বাসের ছেলে সজীব কুমার বিশ্বাস (২২), গৌতম রায়ের ছেলে আকাশ রায় (২১)। ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেলসহ নড়াগাতি থানার যোগানিয়া গ্রামের মৃত মিরাজ সিকদারের ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন ওরফে বদির (৩২)।
পিবিআই জানায়, দীপ্ত সাহা গত শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে হোগলা ডাঙ্গা এলাকায় নামযজ্ঞের মেলায় দেখার উদ্দেশে নিজের ব্যবহৃত অ্যাপাসি ৪ ভি মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন দ্বীপ্ত। পরদিন শনিবার বেলা ১১টার দিকে দীপ্তর বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে উত্তম নামের একজন তার মাছের ঘেরে কাজে গিয়ে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে হাত-পা বাধা অবস্থায় ঘেরের কিনারা থেকে কলেজ ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই যশোর। ছায়া তদন্তকালীন সময়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সুমন সরকার,সজীব কুমার বিশ্বাস ও আকাশ রায়কে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মর্মে সন্দেহ হলে শনিবার রাতে তাদের নিজ নিজ বাড়ি হতে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রোববার ভোর রাতে নড়াগাতি থানাধীন বিলাহর মাঠে জনৈক সবুর এর কলাই ক্ষেত থেকে দীপ্ত সাহার মোটরসাইকেলসহ আসামি সাদ্দামকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মর্মে স্বীকার করে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামী সুমন সরকার, সজীব কুমার বিশ্বাস, আকাশ রায় ও ভিকটিম দীপ্ত সকলেই মাদকাসক্ত। তারা একসাথে বসেই মাদক সেবন করতো। টাকার জন্য দীপ্তকে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন তিন আসামি। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত শুক্রবার দীপ্তকে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন তারা। এরপর দীপ্তকে গাঁজা বানাতে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে নায়লনের সুতা দিয়ে দীপ্তর গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন আকাশ ও সজীব। পরে পকেট থেকে মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে দীপ্তর মরদেহ পাশের পুকুরে ফেলে চলে যান তারা। এরপর আসামি সুমনকে ফোন করে হত্যার বিষয়টি জানায় আকাশ ও সজীব। দীপ্তর মোটরসাইকেলে তেল কিনার জন্য টাকার প্রয়োজন। আসামী সুমন টাকার ব্যবস্থা করছি বলে ফোন কেটে দেয়। সজীব ও আকাশ মোটরসাইকেল নিয়ে বারইপাড়া খেয়াঘাট পার হয়ে কালিয়া বাজার থেকে মোটরসাইকেলে ৫০ টাকার তেল ভরে। মোটরসাইকেলেটি বিক্রির জন্য অপর পলাতক আসামি সজিবের কাছে রেখে আসেন তারা। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চোরাই মোটরসাইকেল রাখার অভিযোগে আসামি সাদ্দামকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) যশোর অঞ্চলের পরিদর্শক শামীম মুসা জানান নড়াইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদা এর আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামিরা। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
-বাবু/এ.এস