মনস্তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায় এনে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, এদেশের জলবায়ু ও মাটি কৃষির মাটি। বাংলার সবচেয়ে বড় সম্পদ কৃষি। কৃষি বাংলার প্রাণ, বাঙালির মুখের হাসি। বাঙালি মনোজগতের দার্শনিক বঙ্গবন্ধু। তিনি জানেন, কৃষি মিশে আছে বাঙালির রক্তে। দেশের ৮৫ শতাংশ লোক কৃষির ওপর নির্ভশীল। তাই উন্নয়নের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হবে কৃষি। এমন এক সময় ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ বেঁধেছে যখন কোভিড-১৯ মহামারির বিধ্বংসী প্রভাব থেকে বিশ্ব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। যুদ্ধ ও করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক মন্দা সম্মুখীন হচ্ছে পুরো বিশ্ব। এর ফলে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে জরুরি। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়েছে। এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে সমর্থন করার কারণে রাশিয়া হয় তো যুদ্ধের নানা কৌশল খুঁজছে এমন ধারণাই স্পস্ট।
আদিকাল থেকে আজকের আধুনিক সভ্যতায় রূপান্তরের প্রতিটি স্তরে মানুষের প্রচেষ্টা রয়েছে। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি আবিষ্কারের মাধ্যমে আমাদের জীবন ও সভ্যতা হয়েছে গতিময় ও সমৃদ্ধ। একটা সময় মানুষ অনাহারে বেশি মারা যেত, খাদ্য উৎপাদনের পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষের এত বেশি জ্ঞান ছিল না। আজকে মানুষ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে আবিষ্কার করে চলেছে বিস্ময়কর সব প্রযুক্তি। তারই ধারাবাহিকতায় বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিজ্ঞানের অনবদ্য আবিষ্কার জৈবপ্রযুক্তিভিত্তিক ফসল বা বায়োটেকনোলজি। এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি ফসল থেকে কাক্সিক্ষত জিন সংগ্রহ করে অন্য একটি ফসলে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ফসলের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন করা যায়। সরাসরি জিন প্রতিস্থাপন ছাড়াও এই প্রযুক্তিটির মাধ্যমে ফসলের নিজস্ব যে জেনেটিক বৈশিষ্ট্য আছে তাতে পরিবর্তন করেও কাক্সিক্ষত বৈশিষ্ট্য আনা সম্ভব।
জেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে উৎপাদিত ফসলকে ট্রান্সজেনিক ফসল তথা জেনেটিক্যালি মডিফাইড (জিএমও) ফসল বলা হয়। সারাবিশ্বে জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, খাদ্য উৎপাদনও সেই হারে বাড়াতে হলে জিএমও ফসল উৎপাদনের এখন কোনো বিকল্প নেই। ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১০ বিলিয়নে। এই বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা মেটাতে হলে খাদ্য উৎপাদনের হার বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য হারে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে, যার ফলে চাষের জমি সম্প্রসারণের সুযোগ কম। ক্রমহ্রাসমান ফসলি জমিতে বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদনে আমাদের সাহায্য করবে জিএমও ফসল উৎপাদন। জিএমও ফসল অনেকাংশেই রোগবালাই, পোকামাকড় ও খরা সহনশীল। ফলে ফসলের উৎপাদন কয়েকগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। কৃষির সাথে নতুন প্রযুক্তি যোগ করে আমরা আরো অধিক ফলনশীল, অর্থনৈতিকভাবে আরো মজবুত জাতিতে পরিণত হতে পারি।
দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ দেশের কৃষিতে পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি। খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি মোকাবেলায় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই এবং এই উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো জৈবপ্রযুক্তিভিত্তিক ফসল। আশার বাণী হচ্ছে, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারিভাবে জিএমও ফসলের গবেষণা ও বিপণন কার্যক্রমকে বেগবান করতে নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। উচ্চমাত্রায় ফলনশীল জিএমও ফসল উদ্ভাবন নিয়ে এখন প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগসহিষ্ণু ও কৃষকের ব্যয় কমানোর উদ্দেশ্য থেকেই বিভিন্ন সংস্থা ও ইনস্টিটিউট এখন এসব গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত ধান, আলু, বেগুন ও তুলার বিভিন্ন জিএমও ভ্যারাইটি উন্নয়নকে ঘিরেই এসব গবেষণা চলছে।
এরই মধ্যে কৃষিতে জিএমও ফসলের বেশ কিছু সফল প্রয়োগ দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের পরমাণু কৃষি ইনস্টিটিউট এ ব্যাপারে গবেষণা করে যাচ্ছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা অল্প সময়ে অধিক ফলন এবং রোগজীবাণু প্রতিরোধকারী জাতের প্রত্যাশা করতে পারি। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ এর ১৭টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম প্রধান লক্ষ্যমাত্রা হলো প্রতিটি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন অত্যাবশ্যক। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বায়োটেকনোলজি ভিত্তিক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি। সয়াবিন, তুলা, সুগারবিট, ধান, বেগুন, মসুর, পেঁপেসহ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শতাধিক জিএমও ফসল বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হচ্ছে। বিশ্বে মোট উৎপাদিত ভুট্টা, তুলা, সয়াবিন ও সুগারবিটের ৭০-৯০ শতাংশ আসে জিএমও জাত থেকে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো এরই মধ্যে জিএমও ফসলের উৎপাদন অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। জিএমও ফসল উৎপাদনে আমেরিকা শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে, যেখানে প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি জিএমও ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভারত, কানাডা ও চীন জিএমও ফসল উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।
উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও জিএমও ফসলের উৎপাদন ও গবেষণা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। কৃষির সাথে নতুন প্রযুক্তি যোগ করে, আমরা আরো অধিক ফলনশীল, অর্থনৈতিকভাবে আরো মজবুত জাতিতে পরিণত হতে পারি। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ দেশের কৃষিতে পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে, যা দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য হুমকি। খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি মোকাবেলায় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস, সমুদ্রসম্পদ, জ্ঞান আদান-প্রদান, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। সার্ক কার্যকর না হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার বাজারে চালের সরবরাহ ঠিক রাখতে এ মুহূর্তে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর একটি হলো কূটনীতির মাধ্যমে চালের আমদানি বাড়ানো। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অনেক দেশই এখন খাদ্যপণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রতিবেশীসহ রপ্তানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতেই হচ্ছে বাংলাদেশকে। আবার গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের অর্থনীতির মেরুদণ্ড এখন কৃষিখাত। দেশটি আবার চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতিতে চাল কূটনীতিকেই ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে দুই দেশেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এখন প্রতিবেশী ভারত থেকেও চাল আমদানি বাড়াতে জোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গত বছরের শেষ দিকে বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ভারত থেকে চাল আমদানিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার্ষিক কোটা চাওয়া হয়। এ প্রস্তাব নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে ভারতও। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি আদর্শ জোট হয়ে উঠেছে। ইইউর কোনো দেশে আর্থিক বা খাদ্যসংকট দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট জোট দেশটিকে সহায়তায় এগিয়ে আসে। খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশ থেকে খাদ্য ঘাটতির দেশে পণ্য সরবরাহ করা হয়। আর্থিক সংকটের সময়ও অর্থ প্রদান করে সহায়তা করার উদাহরণও রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সার্কের যাত্রা হয়েছিল এ অঞ্চলের সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে। কিন্তু সেটি সফল হয়ে উঠতে পারেনি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই এখন মূলভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। এটিকে আরো এগিয়ে নিতে হবে।
চাল কূটনীতিকে সমুদ্র কূটনীতি, পরিবেশ কূটনীতি, প্রাকৃতিক সম্পদ কূটনীতির মতো ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ করার সুযোগ রয়েছে। ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে গ্যাস আমদানি করছে, শ্রীলংকাকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। বাংলাদেশও প্রতিবেশী ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।
২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী মন্দা ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। ২০২৩ সালে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। আগামী বছর বিশ্বে ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) বলেছে, খাবারের অভাব এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শুধু দুর্ভিক্ষই হবে তা নয়, বরং এর জেরে বিভিন্ন দেশে বৈষম্য ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, করোনা মহামারি, সংঘর্ষ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০১৯ সালের পর বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে সাড়ে ৩৪ কোটি ছাড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘর্ষের ফলে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া ২০২৩ সালে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ও রপ্তানি হ্রাস পাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিবছরই বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি করে। এক্ষেত্রে বিশ্ববাজার অস্থির হয়ে উঠলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় কী করা হবে তার পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মিয়ানমারসহ খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করায় মনোযোগ দিতে হবে। কারণ চলমান যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে খাদ্য উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আর রাশিয়ার উৎপাদিত খাদ্য নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে।
সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং অন্য দেশগুলোকে তাদের খাদ্যনিরাপত্তার কারণে খাদ্যের ঘাটতি নিজেদের পূরণ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলো উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। এতদিন তেল ও গ্যাস নিয়ে বিশ্ব রাজনীতি দেখেছি, এখন আরেক রাজনীতির খেলায় খাদ্যই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। এই খাদ্য রাজনীতির খেলায় শুধু উন্নয়নশীল দেশ নয়, উন্নত দেশগুলোও হুমকির মধ্যে পড়বে।
যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আশ্বাস দিয়েছেন, আমাদের পর্যাপ্ত খাবার আছে। তবু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু অনেক খাদ্যপণ্য আমাদের বিদেশের সরবরাহের ওপর নির্ভর করতে হয়। হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমনিতেই সারা বছরই পণ্যের মৌসুমী সংকটের মধ্যে পড়ি। খাদ্য সংকটের মতো অবস্থার সৃষ্টি হলে উন্নত দেশগুলো তাদের খাদ্যঘাটতি মোকাবেলায় খাদ্য মজুদ করে রাখতে পারে। বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যেভাবে নীরব অর্থনৈতিক মন্দা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খাদ্যঘাটতি মোকাবেলা করার লক্ষ্যে এখনই প্রস্তুত থাকতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, খাদ্যঘাটতি মেটাতে প্রতি ইঞ্চি জায়গা আবাদের আওতায় আনতে হবে। জনগণকে খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাই এ ব্যাপারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে কৃষি উৎপাদন সম্প্রসারণে। সরকার, এনজিও, প্রশাসন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর কর্মীরা প্রচার কাজে সম্পৃক্ত হবে যাতে জনগণকে পতিত জায়গা খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে অনুপ্রাণিত করা যায়। পরিকল্পনা ও সদিচ্ছা থাকলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়সম্পূর্ণ হতে তেমন বেগ পেতে হবে না। দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট
-বাবু/এ.এস