প্রায় সাড়ে চার বছর পর আগামী ১১ শে মার্চ ময়মনসিংহে আসছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন বিকেল ২টায় নগরীর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশকে ঘিরে ময়মনসিংহ নগরী নিরাপত্তার চাদরে ডেকে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাছুম আহম্মেদ ভূঞা। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে বিভাগজুড়ে উৎসব বিরাজ করছে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশে প্রায় দশ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটবে বলে আমরা আশা করছি। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৩২০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে পোষাকাদারি ছাড়াও সাদা পোষাকে দ্বায়িত্ব পালন করবে কয়েক শত পুলিশ সদস্য। সেই সঙ্গে নগরীর যানযট নিরসন ও নগরবাসির ভোগান্তি লাগবে জেলা ট্রাফিক বিভাগের সাথে সমন্বয় করে পৃথক ভাবে নানা উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। মোটকথা প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশের শতভাগ নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। এতে কোন ধরনের শঙ্কা বা আশঙ্কা নেই বলেও জানান এসপি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে উচ্ছ্বসিত ময়মনসিংহবাসি। তাঁকে বরণ করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। আর এ কারণেই ময়মনসিংহের উন্নয়নে একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দফতরে ইতোমধ্যে প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দফতরের নির্দেশিত প্রকল্পগুলো ওইদিন উদ্বোধন করা হবে। সে লক্ষ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি নেয়া আছে। তবে কি পরিমাণ বা কতগুলি প্রকল্প উদ্বোধন হবে, তা সুনির্দ্দিষ্ট করে এখনই বলা যাবে না।
নগরীতে বন্ধ থাকবে ইজিবাইক ও রিকসা চলাচল :
প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ সফর উপলক্ষে যানজট নিরসন ও নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের লক্ষ্যে নগরীতে ইজিবাইক ও রিকসা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)। ফলে বৃহস্পতিবার (আজ) সকাল ৬টা থেকে ১১ মার্চ শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত নগরীতে ব্যাটারি চালিত সব ইজিবাইক চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত নগরীতে সকল মোটর রিকশা (মোটা চাকার রিকশা) চলাচলও বন্ধ থাকবে।
জনসভায় নেতাকর্মীদের আনতে ৮টি বিশেষ ট্রেন বরাদ্ধ :
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় নেতাকর্মীদের আনতে আটটি বিশেষ ট্রেন বরাদ্ধ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে ময়মনসিংহ থেকে আটটি রেলপথে বিশেষ এসব ট্রেন চলবে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টায় ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনের স্টেশন সুপারিন্টেডেন্ট এস.এম নাজমুল হক খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ৩মার্চ রেলওয়ের সহকারী চীফ অপারেটিং সুপারিন্টেনডেন্ট (পূর্ব) কামাল আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত অফিসিয়ালি এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আগামী ১১ মার্চ ময়মনসিংহ জেলায় যাতায়াতের জন্য গফরগাঁও-ময়মনসিংহ, নান্দাইল-ময়মনসিংহ, দেওয়ানগঞ্জ বাজার-জামালপুর ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান-ময়মনসিংহ, গৌরীপুর-ময়মনসিংহ, ঈশ্বরগঞ্জ-ময়মনসিংহ, জারিয়া-ঝাঞ্জাইল-ময়মনসিংহ রেলপথে আটটি স্পেশাল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়েছে। ফলে এদিন ২৭১-২৭৮ জারিয়া লোকাল, ২৬১-২৬৪ মোহনগঞ্জ লোকাল, ২৫৫-২৫৬ দেওয়ানগঞ্জ লোকাল, ৭৫-৭৬ ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস, তুরাগ ১, ২, ৩, ৪ এবং টাঙ্গাইল কমিউটার ১ ও ২ ট্রেনগুলোর চলাচল বন্ধ থাকবে।
ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার আগমনে এই অঞ্চলের সাংগঠনিক অবস্থা আরও শক্তিশালী হবে এবং নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা হবে। যা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে দিকনির্দেশনা দেবেন তা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে সক্ষম হব। যা আমাদের দলকে সুসংগঠিত করা এবং আগামী নির্বাচনে বিজয়ী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম জানান, আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সমাবেশ হলেও আমরা মহাজোটের অন্য দলগুলোকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে এবং মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে যোগ দিবেন বলে জানিয়েছেন। তাই এটি মহাজোটের মহাসমাবেশে পরিণত হবে।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাদা পোশাকের গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তায় প্রায় ৩ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি বাইরের জেলা থেকেও এখানে পুলিশ সদস্য আসবে। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ মঞ্চের প্রথম সারিতে নিরাপত্তায় থাকবে এপিবিএন। ট্র্যাফিকের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের যেসব দোকান রয়েছে সেগুলোতে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। নিরাপত্তার প্রশ্নে যেসব বিষয় জড়িত প্রত্যেকটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা কোনও ছাড় দেব না।
-বাবু/এ.এস