আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনে চট্টগ্রাম বেতার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করার মাধ্যমে পূর্ব বাংলার পুলিশ, ইপিআর ও সেনাবাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরা পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। স্বাধীনতার এই ৫৩ বছরে স্বাধীনতা ধারণ ও রক্ষার্থে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা কার্যক্রম নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- সুদীপ চাকমা
'আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি-আমাদের মর্যাদার মুক্তি':
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে দেয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্বালাময়ী বক্তব্যটি আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গে দেওয়া বক্তব্যের থেকে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা ভৌগলিক স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু তিনি তার ভাষণে আরো বলেছেন মুক্তির সংগ্রামের কথা। এই মুক্তি শুধু আমাদের ভৌগলিক মুক্তি নয় আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি, বাক-স্বাধীনতার মুক্তি। সেই লক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নের রোল মডেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াবে। তাই এবারের স্লোগান হওয়া উচিত- 'আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি-আমাদের মর্যাদার মুক্তি'।
ড. মোহা: হাবিবুর রহমান,
সহযোগী অধ্যাপক,
ইংরেজী বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় মানুষ গড়ার কারখানা:
স্বাধীনতার ৫৩ বছরে প্রত্যাশা তো অনেকই। আমরা প্রযুক্তির সংস্পর্শে নিরন্তর সমৃদ্ধ হচ্ছি। দেশে স্ট্রাকচারাল অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু প্রদীপের নিচেও থাকে অন্ধকার, আর তাই হয়তো দ্রব্যমূল্যের উলম্ফন আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে। ব্যাপারটা সাময়িক আশা করতে পারি, প্রত্যাশা করি কেবল আমার নয়, আমাদের সকলের সন্তানই থাকবে 'দুধে ভাতে।' বিশ্ববিদ্যালয় মানুষ গড়ার কারখানা। এই প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের যদি পড়ালেখার পাশাপাশি সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে অর্থাৎ সকল প্রকারের কুপমন্ডুকতার ঊর্ধ্বে গিয়ে, প্রগতিশীল ধারায় পরিচালিত করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত করে তাদের মননকে বিকশিত করা হয়, তাহলে দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে আমরা দেশ-রক্ষাকবচ হিসেবে এই শিক্ষার্থীদেরকেই পাব।
ড. কামরুন নাহার শীলা,
সহযোগী অধ্যাপক,
বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রাখছে :
বাংলাদেশ সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় একটা ভূমিকা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন তা দক্ষ জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে স্বার্থক হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন পাঠ্যক্রম তৈরির পাশাপাশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জাতীয়তাবোধ, মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। তাহলে আমাদের প্রত্যাশার বাংলাদেশ তৈরি হবে। আমরা এমন একটা সুন্দর বাংলাদেশ চাই যেখানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান তালে বাস করতে পারবে। সেখানে জাতীয়তাবোধের পাশাপাশি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক চর্চা ও সকলেই সমান অধিকার ভোগ করবে।
মোহাম্মদ আইনুল হক,
সহযোগী অধ্যাপক,
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
অবকাঠামো দিক থেকে বাংলাদেশ যথেষ্ট এগিয়ে:
৫৩ বছরে আমাদের প্রাপ্তি অনেক। অবকাঠামো দিক থেকে বাংলাদেশ এখন যথেষ্ট এগিয়ে। কিন্তু প্রাপ্তির সাথে অপ্রাপ্তিও রয়েছে। এখনও মেয়েরা সন্ধ্যা হলে একা বাহিরে যেতে ভয় পায়, একটা স্বাধীন দেশে এমনটা কেন হবে! শিক্ষার জায়গায় বলা যায়, শিক্ষা কমিশনের যে রূপরেখা ছিল সেটা আমরা এখনও বাস্তবায়ন করতে পারিনি। প্রাথমিক থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত কর্মমূখী শিক্ষা ব্যবস্থার যে বড় ধরনের পরিবর্তন সেই তুলনায় শিক্ষকদের যে প্রশিক্ষণ দরকার তা আমরা করছি না। আমরা পাঠ্য বইয়ে সৃজনশীল অর্ন্তভূক্ত করলাম কিন্তু গাইড সংস্কৃতি সেটাকে নষ্ট করলো। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু লিখতে দিলে লিখিত নথির বাইরে সে কিছুই চিন্তা করতে পারছে না। প্রত্যাশা থাকবে আমরা অর্থাৎ বাংলাদেশ এই সংকট কাটিয়ে উঠবে।
শারমিন রেজওয়ানা,
সহকারী অধ্যাপক,
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
বাবু/জেএম