বিশ্ব ব্যাংকের ‘বিশুদ্ধ বায়ু পাওয়ার চেষ্টা: দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ু দূষণ ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক গবেষণায় উঠে এসেছে দেশের ২০ ভাগ অকাল মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ। বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বায়ু দূষণের ১০টি শহরের মধ্যে ৯টিই দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত। এই ৯টির মধ্যে অন্যতম একটি ঢাকা। খারাপ বায়ু দূষণের জন্য বাংলাদেশে অকাল মৃত্যুর হার প্রায় ২০ শতাংশ এমন তথ্য জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
আজ মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিশ্বব্যাংক জানায়, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত দূষণকারী কণার উপস্থিতি থাকলে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য ধরে নেওয়া হয়।
অথচ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক ঘনবসতিপূর্ণ ও দরিদ্র এলাকাতেই দূষণের মাত্রা অন্তত ২০ গুণ বেশি। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি বছর অন্তত ২০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। একই কারণে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এই ধরনের চরম বায়ু দূষণের সংস্পর্শে শিশুদের মধ্যে স্টান্টিং এবং হ্রাসকৃত জ্ঞানীয় বিকাশ থেকে শুরু করে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং দীর্ঘস্থায়ী ও দুর্বল রোগের প্রভাব রয়েছে। এতে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বৃদ্ধিসহ দেশের উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং কর্মঘণ্টা নষ্ট করে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, বায়ু দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় প্রভাব ফেলে। সঠিক পদক্ষেপ ও নীতির মাধ্যমে বায়ু দূষণ রোধ সম্ভব জানিয়ে আবদুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বায়ু দূষণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে জাতীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি অঞ্চলিক (দক্ষিণ এশিয়া) পর্যায়েও সম্মিলিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাংক আরও জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি প্রধান এয়ারশেড চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে বাতাসের গুণমানে আত্মনির্ভরতা বেশি। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান, ইন্দো গাঙ্গেয় সমভূমিতে বিস্তৃত একটি সাধারণ এয়ারশেড শেয়ার করে। প্রতিটি এয়ারশেডের কণা বিভিন্ন উৎস এবং অবস্থান থেকে আসে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা, কাঠমান্ডু এবং কলম্বোর মতো অনেক শহরে, শুধুমাত্র এক-তৃতীয়াংশ বায়ু দূষণ শহরের মধ্যে উৎপন্ন হয়। বায়ু দূষণের আন্তঃসীমান্ত প্রকৃতিকে স্বীকৃতি দিয়ে, চারটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান প্রথমবারের মতো ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি এবং হিমালয়ের পাদদেশে বায়ুর গুণমান উন্নত করার জন্য কাঠমান্ডু রোডম্যাপ তৈরি করতে একমত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক সিসিলি ফ্রুম্যান জানান, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো একই এয়ারশেড-সাধারণ ভৌগোলিক এলাকা যেগুলো একই বায়ুর গুণমান বিরাজ করে, তারা যদি সমন্বিত পন্থা অবলম্বন করে তবেই বায়ু দূষণের উদ্বেগজনক মাত্রা কমাতে পারে। একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে এই দেশগুলো আরও দ্রুত ভালো ফলাফল পেতে পারে। বাংলাদেশ এবং আরও কয়েকটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বায়ুর মান উন্নত করতে নীতি গ্রহণ করেছে। তবে, জেলা ও দেশ পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিত আন্তঃসীমান্ত পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বিশ্ব ব্যাংক মনে করে, এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বৃহৎ কারখানা ও পরিবহন খাতের ওপর নজর দিয়ে নীতিগত ব্যবস্থা নিলে ‘আংশিক সাফল্য’ পাওয়া যেতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহত্তর অগ্রগতির জন্য কৃষি, আবাসিক রান্না ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে নীতিনির্ধারকদের। সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব- বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বাবু/জেএম