শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫ ২১ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫
শাহবাগ মোড়ে প্রথম আলো সম্পাদকের কুশপুতুল পোড়ালেন ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩, ৬:১৬ PM

অবরোধ কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামান সামি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে জাতির বিবেক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজপথে নেমেছে। বর্তমানে এ দেশের একটি জাতীয় দৈনিক স্বাধীনতা শব্দটিকে ব্যবহার করে মিথ্যাচার করেছে এবং শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে। ১০ টাকার বিনিময়ে তারা একটি শিশুকে নিয়ে মিথ্যা নিউজ করিয়েছে।’

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী’ আখ্যা দিয়ে তাকে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।

শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে তাদের এই কর্মসূচি চলে। ওই সময় তারা মতিউর রহমানের কুশপুতুলও দাহ করে।

অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী। এ অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড়ের চারপাশের সড়কে যান চলাচল আটকে ছিল। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। অনেককে হেঁটে মোড় পার হয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়, তবে এই অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়নি বলে দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতারা।

এ কর্মসূচিতে উপস্থিত বক্তাদের দাবি, প্রথম আলোর সম্পাদক সাংবাদিকতার নামে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন এবং প্রতিনিয়ত তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গুজব চর্চায় লিপ্ত আছেন।

তাদের ভাষ্য, মতিউর রহমান রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিশু হত্যার হোতা এবং বাসন্তীকাণ্ডের পরম্পরায় জাকিরকাণ্ডের মঞ্চায়নকারী। চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশনের (শিশুকে কাজে লাগিয়ে সুবিধা আদায়) দায়ে মতিউর রহমান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছেন।

অবরোধ কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামান সামি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে জাতির বিবেক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজপথে নেমেছে। বর্তমানে এ দেশের একটি জাতীয় দৈনিক স্বাধীনতা শব্দটিকে ব্যবহার করে মিথ্যাচার করেছে এবং শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে। ১০ টাকার বিনিময়ে তারা একটি শিশুকে নিয়ে মিথ্যা নিউজ করিয়েছে।

‘তারা বলছে ডাল চাল ডাল মাংসের স্বাধীনতা লাগবে, কিন্তু আমরা তথ্যের কোনো নিরাপত্তা পাচ্ছি না। মিথ্যা সংবাদ এবং গুজব দিয়ে তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করে রেখেছে। এই গুজব এবং প্রথম আলো সম্পাদকের বিচারের দাবিতে আমাদের এই অবস্থান।’

জনদুর্ভোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি না আজকের প্রোগ্রামের কারণে সাধারণ মানুষের কোনো দুর্ভোগ হয়েছে। আমরা মনে করি, তারাও আমাদের দাবির সাথে একমত পোষণ করেছে। তাদেরকে সাথে নিয়েই ছাত্রসমাজ তাদের দাবি জানিয়েছে।’

>>শামসুজ্জামান শামসের মুক্তি দাবি

এদিকে ছাত্রলীগের কর্মসূচির একই সময়ে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

ওই সময় বক্তারা শামস নির্দোষ দাবি করে তার নিঃশর্ত মুক্তি চান এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি করেন।

মানববন্ধনে শামসের বন্ধু ও সংবাদকর্মী ইমন রহমান বলেন, ‘শামসুজ্জামান শামস আজ জেলে। এই গণমাধ্যমকর্মীর মুক্তির দাবিতে আজকে আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। এই নিউজে শামসের কোনো দোষ নেই। ছবি এবং বক্তব্য ভিন্ন হওয়া এটি যদি দোষের হয়, তাহলে সেটি প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ করেছে। যদিও তারা ১৭ মিনিট পরে ছবিটি প্রত্যাহার করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরাও মানুষ। তাদেরও ভুল হতে পারে, কিন্তু সে জন্য তাকে জেলে ঢোকাতে হবে, এটা কোনোভাবেই কাম্য না। জনগণ যদি খেতে না পারে সেটা তারা অবশ্যই বলবে।

‘এই বলার অধিকারটাই তার স্বাধীনতা। আর আমি একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে সেই কথাটা লিখব। এটাই আমার স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা খর্ব করার অধিকার কারও নেই।’

>>প্রেক্ষাপট

স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যাতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে একজন শ্রমিকের ক্ষোভের বার্তা ছিল।

প্রতিবেদনটিতে স্মৃতিসৌধে ফুল বিক্রেতা শিশু সবুজ মিয়ার বক্তব্যও ছিল। একই প্রতিবেদনে জাকির হোসেন নামে দিনমজুরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’

প্রতিবেদনটির ভিত্তিতে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে ফটো কার্ড ছাপা হয়েছিল। এতে উদ্ধৃতিটি ছিল দিনমজুর জাকিরের আর ছবি ছিল ফুল বিক্রেতা সবুজ মিয়ার।

ওই পোস্টে ছবি, উদ্ধৃতির এ গরমিলের পর প্রথম আলোর পক্ষ থেকে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। পরবর্তী সময়ে সংশোধনী দেয় সংবাদমাধ্যমটি।

এ নিয়ে একাত্তর টিভিতে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাত বছরের শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক ছবি তুলেছেন বলে দাবি ওই শিশু ও তার পরিবারের।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, এ ধরনের সংবাদের মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রথম আলোর প্রতিবেদন রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছে।

প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে প্রতিবেদক শামসুজ্জামান ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের নামে। রাজধানীর রমনা থানায় করা মামলায় কারাগারে রয়েছেন শামসুজ্জামান।

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  প্রথম আলো   ছাত্রলীগ  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত