পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় হাজিরা দিতে ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট আদালতে যাচ্ছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার ট্রাম্পের বহুল আলোচিত এই মামলার হাজিরার আগে আদালত চত্বরে ইতোমধ্যে জড়ো হতে শুরু করেছেন শত শত সমর্থক।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কোনও প্রেসিডেন্ট হিসেবে আদালতে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৭৬ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আদালতে হাজির হয়ে পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলবেন।
স্টরমির সাথে যৌন সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখতে ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠলেও ট্রাম্প তা অস্বীকার করেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন দু’বার অভিশংসিত হওয়া সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ‘রাজনৈতিক নিপীড়নের’ শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।
অন্যদিকে, এই মামলাকে নিজের শক্তিশালী সমর্থন বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি। ইতোমধ্যে এই মামলায় লড়াইয়ের জন্য সমর্থকদের কাছ থেকে লাখ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছেন আগামী বছর হোয়াইট হাউসে ফেরার ঘোষণা দেওয়া ট্রাম্প।
তার একজন আইনজীবী সিএনএনকে বলেছেন, হলওয়ে দিয়ে আদালতের দিকে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার পরিকল্পনা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালের দিকে ম্যানহাটনের আদালত চত্বরে যাওয়ার জন্য ট্রাম্প ফিফথ অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত তার গগনচুম্বী ট্রাম্প টাওয়ার ভবন ত্যাগ করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। পরে সেখানে গিয়ে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন।
আদালতে ট্রাম্পের হাজিরার আগে ম্যানহাটনে হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আকাশে হেলিকপ্টারের চক্করও চলছে। মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ট্রাম্পের আদালতে হাজির হওয়ার দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করার কথা রয়েছে। যদিও আদালতের ভেতরে ভিডিও ক্যামেরা নেওয়ার অনুমতি নেই।
• পরিকল্পনা কী?
আদালতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের কথা রয়েছে আজ। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বেলা ২টা ১৫ মিনিটে শুরু হবে এই মামলার শুনানি। এর আগে, সোমবার ফ্লোরিডার পাম বিচের মার-এ-লাগো রিসোর্ট থেকে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে নিউইয়র্কে আসেন ট্রাম্প।
মঙ্গলবার ট্রাম্প টাওয়ার ছেড়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে ম্যানহাটনের অপরাধ আদালতে হাজির হবেন তিনি। যেখানে দুপুর সোয়া ২টায় সাজা ঘোষণার জন্য বিচারকের মুখোমুখি করা হবে তাকে।
• আত্মসমর্পণ করার পর কী হবে ট্রাম্পের?
কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে প্রত্যেক সন্দেহভাজন অপরাধীর মতো ট্রাম্পের যাবতীয় তথ্য আদালতের কর্মকর্তাদের কাছে রাখা একটি বড় বইতে লিপিবদ্ধ করা হবে। বর্তমানে সবকিছু কম্পিউটার-ভিত্তিক হলেও প্রক্রিয়াটি মূলত একই।
আদালতের কর্মকর্তারা ট্রাম্পের পুরো নাম, বয়স, জন্ম তারিখ, উচ্চতা এবং ওজন লিখবেন। সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কোনও পুরোনো ওয়ারেন্ট আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করে দেখবেন তারা। পরে তার আঙুলের ছাপ নেবেন— তবে আঙুলের ওপর কালি দিয়ে ঘোরাতে পারবেন না কর্মকর্তারা। কম্পিউটারে তার ছবি তুলবেন আদালতের কর্মকর্তারা।
নিউইয়র্কে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণত প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে অনেক সময় তা চার ঘণ্টা পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। কিন্তু আদালতে ট্রাম্পের পৌঁছানোর সময় অন্য কেউ না থাকায় এটি আরও দ্রুত সম্পন্ন হবে। এরপর তিনি বিচারকের সামনে যাবেন।
• শুনানিতে কী হয়?
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে খোলাসা করা হবে এবং অভিযোগগুলো উচ্চস্বরে পড়া হবে। যদিও ট্রাম্প আদালতকে জনসাধারণের জন্য অভিযোগ পাঠ বাতিলের অনুরোধ জানাতে পারবেন।
পরে তিনি কীভাবে অভিযোগের প্রতি সাড়া দেবেন তা জানতে চাওয়া হবে। তখন তিনি জবাবে ‘অপরাধী নন’ বলে জানাবেন। এরপর ট্রাম্পের অ্যাটর্নি জো টাকোপিনা, সুসান নেচেলেস এবং টড ব্ল্যাঞ্চ বিচারক ও জেলা অ্যাটর্নির অফিসের সাথে কাজ করবেন। পরের বার আদালতে ফিরে আসার তারিখ নির্ধারণের ব্ষিয়ে বিচারকের সাথে কথা বলবেন তারা।
সাবেক এই প্রেসিডেন্টের অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের শুরুতে সাংবাদিকরা ছবি তোলার অনুমতি পাবেন বলে এর আগেই আদালতের বিচারক আদেশ জারি করেছেন।
• গ্রেপ্তার হতে পারেন ট্রাম্প?
কৌশলগত দিক থেকে এই প্রশ্নের জবাব, হ্যাঁ। যখন তার আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ হবে, তখন থেকেই তাকে গ্রেপ্তার এবং হেফাজত বিবেচনা করা হবে।
তবে তাকে অন্যান্য আসামির মতো হাতকড়া পরানো হবে না। তাকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হবে না। কারণ তিনি দেশটির সিক্রেট সার্ভিস সুরক্ষার আওতাধীন এবং সাবেক একজন প্রেসিডেন্ট। আর বিচারকের সামনে হাজির করার আগে সব আসামিকে হাতকড়া পরানো হয় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও হয়।
• আদালত থেকে বেরিয়ে আসবেন ট্রাম্প?
এই প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, হ্যাঁ। গত কয়েক বছরে নিউইয়র্কের জামিন আইন সংশোধন করা হয়েছে। এর মানে ট্রাম্পকে জামিন ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হবে। কারণ তার বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত অভিযোগের জন্য জামিনের আবেদন করার প্রয়োজন নেই।
তবে ম্যানহাটন জেলা আদালতের বিচারক জুয়ান মার্চান ফ্লাইটের ঝুঁকি বিবেচনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জামিন-সহ বা ছাড়াই হেফাজতে রাখার আদেশ দিতে পারেন। তখন ট্রাম্পের আইনজীবীরা যুক্তি দেবেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সাবেক প্রেসিডেন্টের সম্পর্ক দৃঢ় এবং যেহেতু তিনি একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সে কারণে তার পালানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। এসব বিবেচনায় তাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত।
• এরপরে কী ঘটবে?
আদালতের বিচারক ও আইনি দল মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করবেন। আদালতে হাজিরা দেওয়ার পরবর্তী সময়সীমা নির্ধারণ করবেন তারা। এ সময় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগের তথ্য তার আইনজীবীদের কাছে হস্তান্তর করবে জেলা অ্যাটর্নির অফিস।
সূত্র: এপি, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস।
বাবু/মম