লক্ষ্মীপুরে স্বামীর সাথে অভিমান করে নিজের তিন বছর তিন মাস বয়সী শিশুপুত্র আয়ানুর রহমান আয়ানকে গলাকেটে হত্যার দায়ে মা সাবিনা ইয়াছমিন শিল্পীকে (২৮) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত। একই সাথে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। রায়ের সময় আসামি সাবিনা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত সাবিনা সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মতলবপুর গ্রামের মৃত ছেরাজুল হকের মেয়ে।
২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের একটি ভাড়া বাড়িতে নিজের শিশুপুত্র আয়ানকে গলাকেটে হত্যা করে পাষণ্ড মা সাবিনা ইয়াছমিন শিল্পী। হত্যা মামলার বাদী শিশু আয়ানের দাদা মো. হুমায়ুন কবির (৬৭)।
মামলার এজাহার ও আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের দিকে লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের মো. হুমায়ুন কবিরের ছেলে আজিমুর রহমান আজিমের সাথে সাবিনা ইয়াছমিন শিল্পীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় আজিম সৌদি আরবে চলে যান। তাদের ঘরে আয়ানুর রহমান আয়ান নামে একটি শিশুপুত্রের জন্ম হয়।
সাবিনা ইয়াছমিন শিল্পী তার শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে শিশুপুত্র আয়ানকে নিয়ে লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের হারুন খাঁর বাড়িতে ভাড়া থাকতো। প্রবাসী স্বামী আজিমের সাথে পারিবারিক কলহ ছিল সাবিনার। ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোনে সাবিনার সাথে স্বামী আজিমের ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে আজিম শিল্পীকে তালাক দেওয়ার হুমকি দেয়। এতে স্বামীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওই রাতে সাবিনা তার ঘুমন্ত শিশুপুত্র আয়ানকে ধারালো বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। পরে সে নিজেই ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
পাশের কক্ষে তার শ্বশুর শাশুড়ী ছিল। শিল্পীর কক্ষ থেকে বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে তারা উঁকি দিয়ে দেখতে পায় শিল্পী আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। তারা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আয়ানের রক্তাক্ত মৃতদেহ খাটের উপর পড়ে থাকতে দেখে।
পরে পুলিশে খবর দিয়ে পুলিশ গিয়ে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। হত্যার ঘটনায় ওই রাতেই তার পাষণ্ড মা সাবিনাকে আটক করে পুলিশ।
পরদিন শিশুটির দাদা মো. হুমায়ূন কবির বাদি হয়ে পুত্রবধূ সাবিনা ইয়াছমিন শিল্পীকে আসামী করে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্ত করে সদর থানার সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল মিয়া। সাবিনা তার শিশুকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
২০২২ সালের ২ অক্টোবর আদালতে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন এতে সাবিনাকে হত্যার দায়ের অভিযুক্ত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে ঘটনার দেড় বছরের মধ্যে হত্যা মামালার রায় দিয়েছেন।
বাবু/জেএম