সোমবার ২৩ জুন ২০২৫ ৯ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ২৩ জুন ২০২৫
প্রশিক্ষণ ভিত্তিক শিক্ষা
বুশরা হুমায়রা এষা
প্রকাশ: শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩, ৯:১৭ PM আপডেট: ০৮.০৪.২০২৩ ২:৫৯ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় নির্বাচনের সময় এম আই এস নেয়ার উদ্দেশ্য ছিল ব্যবহারিক জ্ঞান এবং প্রযুক্তির প্রতি ভালোবাসা। সময়ের সাথে ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে প্রযুক্তির ওপর। আমাদের জীবনের অন্যতম অধ্যায় হবে ডিজিটাল সমাজ, এই চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করি এমআইএস বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে। শিক্ষক হিসেবে যখন নিজেকে প্রস্তুত করি তখনও সেই চিন্তায় থাকে যেন শিক্ষার্থীরাও ব্যবহারিক শিক্ষায় নিজেকে পারদর্শী করে তুলতে পারে। যোগাযোগ মাধ্যম এবং প্রতিষ্ঠান সংযুক্তি ব্যতীত কোনোভাবেই ছাত্রদের পারদর্শিতা তুলে ধরা সম্ভব নয়। সে চিন্তা থেকেই সকল ছাত্রদের নিয়ে ‘বেসিস সফট এক্সপো প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেই। করোনা ভাইরাসের প্রকোপের আগেও প্রতিবছর বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রদর্শনীতে ছাত্রদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেছি, যেমন ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’।

বুশরা হুমায়রা এষা

বুশরা হুমায়রা এষা









এ বছরও সেটির কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। ২০২৩ সালে করোনার পর ছিল বেসিস-এর উদ্যোগটি প্রথম এবং অন্যতম। সর্বমোট ৯০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে এবারের প্রদর্শনীতে যাবার পরিকল্পনা করি। যেহেতু প্রদর্শনীটি চারদিনব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টার রূপগঞ্জ’ এ অনুষ্ঠিত হয়েছে তাই বিনা বিলম্বে যে কোনোদিন ছাত্র-ছাত্রীদের যাবার বাধ্যবাধকতা বেঁধে দেই। অনেকেই অনীহা প্রকাশ করেছে, অথবা যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ থাকলেও যাওয়া-আসার বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। পরবর্তী সময়ে কুড়িল থেকে এক্সিবিশন সেন্টার, রূপগঞ্জ পর্যন্ত বেসিসের নিজস্ব বাস সুবিধা থাকার কারণে সবাই স্থান বিষয়ক জটিলতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। অবশ্যই এই প্রোগ্রামে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন হয়। তখন তারা অনুভব করতে থাকে প্রদর্শনীর এবারের আয়োজন অবশ্যই বিশেষ কিছুর।

প্রবেশ করে ডেটা এন্ট্রির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন দেখে আইডি কার্ড দিয়ে দেয় বুধ ভলান্টিয়াররা। এরপর বিশাল পথ পেরিয়ে প্রদর্শনীতে প্রবেশ করতেই বিশাল বিশাল ডিজিটাল ব্যানার, মাসকট চোখে পরে। দু’দিকে দুটি বিশাল হলরুম দেখতে পাচ্ছিলাম। হল রুম এক দিয়ে আমাদের অনুসন্ধান এবং জ্ঞান অন্বেষণের যাত্রা শুরু হয়। অসংখ্য স্টল এর মধ্যে কোনটা ছেড়ে কোনটা তে যাব সে বিষয়টা নিয়ে যথেষ্টই সন্দিহান অবস্থা ছিল সবার জন্যই। শেষপর্যন্ত শুরু করি বিটেলস এর স্টল দিয়ে। মজার বিষয় হলো যেতেই জানতে পারি তারা সকলেই ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং তারা কাজ করেন এ্যথিকাল হেকিং ও সাইবার সিকিউরিটিস নিয়ে। এভাবেই হলে পাকিজা, নেক্সট আইটি জিপিএস সিস্টেমস অনেকগুলো কোম্পানির সি ই ও এবং ডাইরেক্টরদের সঙ্গে কথা হয়। প্রত্যেকেই যথেষ্ট সময় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং একইসঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টা সময় নিয়েও এতগুলো কোম্পানিতে তথ্য জেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই কিছু কোম্পানির ভিজিটিং কার্ডে ও পরবর্তী সময় যোগাযোগের তথ্য নিয়ে আসি, যেন ভবিষ্যতে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থাপন করতে পারি।

" align=










বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বান্ডেলে ১৮ টি কোম্পানির বিষয়াদি নিয়ে এসে ভীষণ রকমের কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। ছাত্র-ছাত্রীদের অনুরোধ জানাই যে, তোমরা সিদ্ধান্ত নাও, তোমরা কোন কোন কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানাতে চাও? তাদের মধ্যে ভীষণ কৌতূহলী একজন লিস্ট করে নিয়ে আসে এবং থিওরি পড়ার সাথে সাথে ব্যবহারিক শিক্ষার সম্পর্ক খুঁজে বের করে। প্রথমে শিক্ষক হিসেবে নিজে কিছুটা সন্দিহান ছিলাম, কিন্তু পরে বুঝলাম ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ আছে। শুরু হলো ডিপার্টমেন্ট চেয়ারপারসনের অনুমতি, হল রুম বুকিং আমন্ত্রিত অতিথিদের সময় নির্ধারণ। ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদের প্রস্তুতি খেয়াল করে দেখলাম, পড়ার সাথে সাথে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উদ্দীপনা আরো বেড়ে যায়। নতুন নতুন সব আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। একজন খাবারের স্পন্সরের দায়িত্ব নিল, আরেকজন ভিডিও তৈরি করলো, অনেকেই মূল প্রোগ্রামের দায়িত্ব নিয়ে নিল, দুইজনকে অনেকটা ধরে বেঁধেই প্রোগ্রামের উপস্থাপনার গুরুভার দিলাম। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক ফারহানা ফেরদৌসী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে পরিচিত হন এবং স্বাগত জানান।

এ ডি এন ডিজিনেট-এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দ সোহায়েল রেজার মতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্বকে প্রযুক্তিগতভাবে এক নতুন রূপ দিয়েছে। মানুষের প্রয়োজনে, কাজের উপযোগিতা এবং সুবিধা বৃদ্ধিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মৃত্যুঞ্জয় দাস, ডিরেক্টর, নেক্সট আইটি ‘মার্ট ইন্টারঅ্যাকটিভ রেস্টুরেন্ট টেবিল’ এর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন যা একটি ‘ভবিষ্যত রেস্তোরাঁর টেবিল’। এটি ব্যবসার জন্য একটি অভিন্ন সুবিধা বয়ে নিয়ে এসেছে। ওয়েটারের পরিবর্তে ক্যাশলেস ট্রানজেকশনে, বাবুর্চির কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছাতে, নিরবচ্ছিন্ন কাজ করবে এ টেবিল। এছাড়াও অফিসের কাজ অথবা বিনোদন পেতে স্মার্ট ইন্টারঅ্যাকটিভ টেবিলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। একিসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি ডিরেক্টরস টেবিল নিয়েও কাজ করছে।

ড. চাষী এবং মেদিনা টেক এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নিবাহী কর্মকর্তা, মেদিনা আলী এবং নির্বাহী পরিচালক, আতিফ আহমেদ অক্ষরকে অসংখ্য প্রশ্নের মধ্য দিয়ে কিছু অল্পসংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে সময়ের স্বল্পতার কারণে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী এবং নির্বাহী পরিচালক আলোচনা করেছেন। কৃষক, উৎপাদিত পণ্য, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কৃষি সম্ভাবনা এবং ডেটা-কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপ-প্রয়োগ ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্নোত্তর পর্বটি ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি অধ্যায়। আমন্ত্রিত অতিথিরা ছাত্রদেরকে প্রশ্ন করার জন্য বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছিলেন। একটা সময় এত প্রশ্ন আসা শুরু হয়েছিল যে আমাদের জন্য সমাপ্তি টানা কঠিন হয়ে যায়। সময় শেষের পথে, কিন্তু আমাদের চেষ্টা ছিল সবাইকে সংযুক্ত রাখা। শেষ মুহূর্তে সব অতিথিরা নিজেদের কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ এবং ট্রেনিংয়ের জন্য আমন্ত্রণ দিয়েছেন।

আবার ভবিষ্যতে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করলে সকলেই আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে মানুষের সঙ্গে পরিচয় এবং ব্যস্ততা আমাদেরকে উৎসাহিত করে নতুন কিছু করার জন্য। অবশ্যই অস্বীকার করার মত নয় যে তার সবকিছুই বাস্তবায়ন করার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও বিভিন্ন দায়িত্বের চাপে তা পুরোপুরি হয়ে ওঠে না। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের একান্ত উদ্দীপনা লক্ষ্য সাধনের জন্য এক মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করে সফল একটি ব্যবহারিক শিক্ষা এবং আলোচনা সভা তাদেরকে পড়াশোনায় আরো বেশি মনোযোগী এবং উৎসাহী করে তুলেছে বলে মনে করি।

লেখক : সিনিয়র প্রভাষক, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

বাবু/এসআর

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  এম আই এস   প্রদর্শনী  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত