বুধবার ২ জুলাই ২০২৫ ১৮ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ২ জুলাই ২০২৫
ফ্রিল্যান্সিং করে ২৪ বছর বয়সেই কোটিপতি
আবু নাঈম, পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩, ১১:৫৮ AM আপডেট: ০৮.০৪.২০২৩ ১২:০৪ PM

২৪ বছরের তরুন শাহিনুর রহমান। বাবার একমাত্র ছেলে তিনি। কৃষক বাবার স্বপ্ন ছিলো ছেলে তার কৃষি কাজের সহযোগী হবেন। তবে শাহিনুরের নিজের স্বপ্ন ছিলো প্রকৌশলী হবার। কিন্তু এর কোনটিই হননি তিনি। বেছে নিয়েছেন ফ্রিল্যান্সিং তথা অনলাইনে উপার্জনের পথ। এখন ঘরে বসেই আয় করছেন প্রচুর বৈদশিক মুদ্রা। পথচলার কয়েকবছরেই কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। নিজের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন এলাকার বেশ কজন তরুনেরও।

শাহিনুর রহমানের বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বড়দাপ এলাকায়। তিনি সেখানকার দবিরুল ইসলাম ও রহিমা বেগম দম্পতির ছেলে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণরত আছেন তিনি।

দুরন্তপনা শাহিনুরের শৈশব মোটেও ভালো ছিলোনা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট শাহিনুর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তবে অভাবের সংসারে পড়ালেখা চালিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পরে তার। তারপরও নিজের মনোবল ঠিক রেখে বাদ দেননি পড়ালেখা। বড় বোন শারমীন আক্তার এবং দুলাভাইর সহযোগিতায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন প্রকৌশলী হবার। জেএসসি পাশ করেন জিপিএ-৫ পেয়ে। এরই মধ্যে ছন্দপতন ঘটে শাহিনুরের সব স্বপ্নের। অভিভাবক তুল্য দুলাভাইয়ের অকাল প্রয়াণে সব কিছুই হয়ে যায় এলোমেলো। হতাশা নেমে আসে পুরো পরিবারে। তবে পিছু হটেননি শাহিনুর, টানাপোরনের মধ্য দিয়েই ২০১৬ সালে এসএসসি পাশ করেন এবং ভর্তি হন একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে। পাশাপাশি শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ। এ কাজে শুরুর দিকে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা উপার্জন হলেও এখন তার প্রতিমাসে আয় হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।

সম্প্রতি সঙ্গে কথা বলেন স্বপ্নবাজ এই সফল উদ্যোক্তা। তিনি জানান, শুরুর দিকের জার্নিটা মোটেও সহজ ছিলোনা। পদে পদে ছিলো নানান প্রতিবন্ধকতা। তবে প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম তাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। এখন তার উপার্জনেই চলছে পুরো পরিবার। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজেও অবদান রাখছেন তিনি।

শাহিনুর রহমান বলেন, ‘দুলাভাইর মৃত্যুর পর বোন এবং ভাগ্নের দায়িত্ব এসে পড়ে বাবার উপর। এ অবস্থায় টানাপোরনের সংসারে আমার পড়ালেখা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য টিউশনির পাশাপাশি নিজেকে স্বাবলম্বী করার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতো সবসময়। একটা সময় ফ্রিল্যান্সিং এর বিষয়টি মাথায় আসে কিন্তু একটি ল্যাপটপের অভাবে পারতেছিলামনা। বাড়ি থেকে ল্যাপটপ কিনে চাইলে বাবা অপারগতা প্রকাশ করেন। এত করে বুঝিয়েও যখন পাচ্ছিলামনা তখন বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেই। এক পর্যায়ে বাবা কিস্তিতে একটা ল্যাপটপ কিনে দেন, সেই দিয়ে পথচলা শুরু।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম কাজ শুরু করি অনলাইন মার্কেটিং প্লেস ‘আপওয়ার্কে’। ২০১৭ সাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসলেও প্রথম আয়ের দেখা পাই ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর। এই মার্কেট প্লেস থেকে এ যাবত উপার্জন করেছি এক লাখ ২৬ হাজার মার্কিন ডলার। পাশাপাশি ‘ফাইভার’ নামক মার্কেট প্লেস থেকে ৫ হাজার মার্কিন ডলার উত্তোল করেছি। এছাড়া আমার নিজের প্রতিষ্ঠান ‘লিড ডিসকোভারি’ থেকে প্রচুর ডলার উপার্জন করছি। গত ফেব্রুয়ারী এবং মার্চ মাসে টোটাল আয় করেছি ১১ লাখ টাকা। আমার ‘লিড ডিসকোভারি’ নামক প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু যুবকের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ে আগ্রহিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। আমার কাছে প্রশিক্ষণ নেয়া প্রায় ২০ জন সফল ফ্রিল্যান্সার হয়েছেন।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে অনলাইন উপার্জনে ঝুকলেন কেন?- জানতে চাইলে শাহিনুর বলেন, ‘ডিপ্লোমা পাশ করে চাকরি করতে চাইলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা বেতন পেতাম। সরকারি চাকরি হলে হয়তো আরেকটু বেশি হবে। কিন্তু বৈধ উপায়ে মাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করা কখনোই সম্ভবনা। অনেকেই বলে সরকারি চাকরির শেষে একটা মোটা অংকের টাকা পাওয়া যায়। তাদের উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্য হলো- আমি যদি প্রতিমাসে অনলাইন থেকে এক লাখ টাকাও আয় করি, সব খরচ বাদে আমার সঞ্চয় থাকবে কমপক্ষে ৮০ হাজার টাকা। ১০ বছর পরে এই জমানো টাকাটা কি মোটা অংকে দাঁড়াবেনা?’

যারা নতুন ফ্রিল্যান্সার হতে চায়, তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি- জানতে চাইলে বলেন, ‘অনেক সময় নতুনরা ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে। এতে অনেকের মনবোল নষ্ট হয়ে যায়। ভালো প্লাটফর্ম থেকে কাজ শিখতে পারলে ভবিষ্যত উজ্জল। তবে পরিশ্রম এবং ধৈর্য্যের বিকল্প নেই।’

এদিকে, একমাত্র ছেলের এমন সফলতায় গর্বের শেষ নেই বাবা দবিরুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ছোটবেলায় অনেক দুষ্ট ছিলো। আমি কৃষি কাজ করি, কিন্তু তাকে কাজে নিতে পারতামনা। যখন ল্যাপটপ-মোবাইল নিয়ে বসে থাকতো ভাবতাম ছেলেটা বেপরোয়া হয়ে গেছে। সে ভালো কিছু করবে স্বপ্নেও ভাবিনি। আলহামদুলিল্লাহ প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি করেছে। আমার ছেলেকে নিয়ে আমার গর্বের শেষ নেই।’ ছেলের জন্য দোয়া চেয়েছেন তিনি।

প্রতিবেশি এ্যাড. ফরহাদ বলেন, ‘আমি জানতাম শাহিন ইঞ্জিনিয়ার হবে, কিন্তু এত পরিমাণ টাকা উপার্জন করে প্রথমে বিশ্বাস করিনি। আমাদের এলাকার ছোট ভাই এত অল্প বয়সে তার যে সাফল্য তাতে আমরা গর্ববোধ করি। তাকে সবরকম ভালো কাজে পাশে পাই। সে এগিয়ে যাবে, তার মাধ্যমে অনেকের বেকারত্ব ঘুচবে এই প্রত্যাশা আমাদের।’

আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকুল হালিম বলেন, ‘আমি জেনেছি শাহিনুর একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেকোন সাপোর্ট প্রয়োজন হলে আমরা তার পাশে থাকবো। এছাড়া আমাদের বেকার যুবকরা যেন ফ্রিল্যান্সিং এ উদ্বুদ্ধ হয় এবং বেকারত্ব ঘুচাতে ভূমিকা রাখে এজন্য শাহিনুরের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে একটি সেমিনার করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত