নদী ভাঙন এ যেন এক আতঙ্কের নাম, গত কয়েক বছর ধরে পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের শত-শত পরিবার। এরই মধ্যে ভিটেমাটি, ঘড়-বাড়ি, ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গিলে খেয়েছে এই পদ্মায়। নিঃস্ব হয়েছে শত-শত পরিবার, কারও কারও ঠাই হয়েছে রাস্তার পাশে। এরই মধ্যে আরেক আতঙ্ক যুক্ত হয়েছে পদ্মা নদীতে। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে শুরু হয়েছে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকটি অবৈধ ড্রেজার। তারপরও থামছে না অবৈধভাবে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন।
প্রতি বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। এরই মধ্যে পদ্মা ভাঙন ঠেকাতে হরিরামপুর উপজেলা রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নদী তীরবর্তী এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে নদী শাসনের কাজ করা হয়েছে। ভাঙন থেকে কিছুটা রক্ষা হলেও পদ্মা-নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে যুক্ত হয়েছে নতুন আতঙ্ক অবৈধ ড্রেজার। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন করে এই বালু চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ফলে নদী ভাঙন আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। এছারা বাধের কাজে আসা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এছারাও ছোট ছোট কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে রাতের আধারে চলে বালু উত্তোলন। ভোর হওয়ার পুর্বেই সটকে পরেন তারা। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে পাড় থেকে কয়েশ মিটার দুর থেকে এম ভি তানজিল জিসান লোড ড্রেজার নামক বালু উত্তোলন করে বেড়ি-বাঁধের কাজে আসা পানি উন্নয়ন বোর্ডে বালু দেন তারা, এমনটিই জানালেন ড্রেজারে থাকা পটুয়াখালী থেকে আসা মো. জাহিদ।
গত কয়েকদিন দিন যাবৎ পদ্মা-নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে তারা, অনুমতি কে দিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ড্রেজারের আরেক শ্রমিক বরিশালের আকাশ বলেন, আমরা শ্রমিক, অনুমতি কে দিয়েছে আমরা বলতে পারি না। বাধের কাজে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, আমরা বাধের কাজে আসছি, বালুর মান সম্বন্ধে জানা নেই, পদ্মার বালু কেটে পদ্মায় ফেলছি।
পদ্মা পাড়ের এতো কাছ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু কাটলে পারের অনেক ক্ষতি হবে, এমনটাই জানালেন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মজিবর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনলোডার দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বালু ব্যবসায়ীদের বালু সাপ্লায়ার পটুয়াখালী এক শ্রমিক বলেন, গত তিনদিনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে বালু দেয়া ড্রেজার থেকে ৫ বলগেট ১ টাকা ফুট দরে ক্রয় করে আনা হয়ছে। এই খবর পেয়ে উপজেলার এসিল্যান্ড এসে আনলোডারের পাইপ ভেঙে দিয়েছে। কামাল চেয়ারম্যান এখন আবার তাদের সাথে সমঝোতা করছে, প্রশাসনকেও ম্যানেজ করছে, সেখান থেকে আবার বালু কিনে সাপ্লাই দেয়ার পরিকল্পনা করছি।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নে বকচর, আলগীচরের খুব কাছে কয়েকশ মিটার দূর থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। সরকারের ভাল কাজে আমরা সব সময় আছি, কিন্ত পাড় থেকে সঠিক দূরত্বে বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে এলাকার জনগণ নিয়ে আমরা প্রতিহত করবো।
উপজেলার গোপিনাথপুর ৪ কি.মি এরিয়াজুরে জিও ব্যাগ ফেলে নদী শাসনে বাধের কাজে দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. নাহিদ জানান, এই কাজটা লস প্রজেক্ট, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমরা ড্রেজার দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে বালু কেটে বাধের কাজ করছি।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, পদ্মা-নদীর পাড় থেকে বালু কাটার অনুমতি দেয়া হয়নি। আর যদিও ভাল মানের বালু কেটে বাধের কাজ করেও থাকে, তবে পাড়ের কাছ থেকে কাটার কথা না। আর বাধের কাজে আসা ড্রেজার দিয়ে অনত্র বালু বিক্রয় করেছে, এটাও শুনেছি, উপজেলা এসিল্যান্ড মহোদয় সেখানে গিয়ে ব্যবস্থাও নিয়েছে। এরপর এমনটি হবার কথা না। যদি হয়, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে উপজেলা প্রশাসন।
বাবু/জেএম