চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দী ৩ প্রার্থী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট ও ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশ তাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে গত ৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোহাম্মদ রমজান আলীর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট স্থগিত করায় তিনিও নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে থাকছেন। তবে এখন পর্যন্ত রমজান আলীর পক্ষে তেমন কোন প্রচার প্রচারনা দেখা যায়নি ৷
বাংলাদেশে ইতিপূর্বে একটি সংসদীয় আসনে এক মেয়াদ কালের মধ্যে তিনজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার তেমন নজির নেই। চলতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ মৃত্যুবরণ করলে আসনটি শূন্য হয়। এর আগে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ নেতা মইন উদ্দিন খান বাদল সংসদ নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করলে পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে এসেছিলেন মোছলেম উদ্দিন আহমদ। ফলে এক মেয়াদে একই সংসদীয় আসনে ৩য় বারের মতন সংসদ সদস্য নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে আগামী ২৭ এপ্রিল।
আগামী ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ আসনটির উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। এবারের উপ-নির্বাচনে বিএনপি দলীয় কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় অনেকটা নিশ্চিত বিজয়ের পথেই হাটছেন নৌকার প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ। যদিও তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুটি ইসলামি দলের কেন্দ্রীয় নেতা। একজন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব সেহাব উদ্দীন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ। অন্যজন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন। তবে এই দুই প্রার্থী ইতিপূর্বে এই আসনে দুটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন।
২০২০ সালের উপ-নির্বাচনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চেয়ার প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন মাত্র ৯৯২ ভোট। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ (মোমবাতি) পেয়েছিলেন ৫,৭৭০ ভোট। এই আসনে বিগত দুটি নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দী ছিলেন বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান। যদিও তিনি দুটি নির্বাচনেই বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদের পক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বেশ তৎপর আছেন। সেই সাথে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা নোমান আল মাহমুদের পক্ষে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন৷ নৌকা প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ বলেছেন, ‘এই আসন থেকে নির্বাচিত দুজন প্রয়াত সংসদ-সদস্য এলাকার উন্নয়নে যে ভূমিকা ও অবদান রেখে গেছেন, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই আমার নির্বাচনি অঙ্গীকার।’
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এস এম ফরিদ উদ্দীন বলেছেন, ‘নির্বাচিত হলে চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস, রাহাজানি ও ইভটিজিংসহ যাবতীয় অপরাধ রোধে এলাকার জনবহুল স্পটসমূহ ক্রমান্বয়ে সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।’
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী সেহাব উদ্দীন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় বলেছেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। আমাদের নির্বাচিত করে দেখুন। নির্বাচনের আগে ও পরের বিষয়টি মিল থাকে কী না। এ উপ-নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিগত দুই বছরের টাইম লাইন চেক করে দেখুন তারা জনগণের দাবি বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেছেন কী না।"
চট্টগ্রাম মহানগরের কিছু এলাকা এবং কর্ণফুলী নদীর অপর প্রান্তের বোয়ালখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৬৩ হাজার ৫৪৩ জন ও নারী ভোটার দুই লাখ ৫৪ হাজার ১০৯ জন। আগামী ২৭ এপ্রিল আসনটির সব গুলো কেন্দ্রেই ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাবু/জেএম