বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫ ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫
সক্রিয় জাল টাকার কারবারিরা
ইমরান আলী
প্রকাশ: বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩, ১২:০২ PM

# অনলাইন অফলাইন দুটোতেই চলছে কেনাবেচা 
# বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি

উৎসব আসলেই সক্রিয় হয় জাল টাকা চক্রের কারবারিরা। সারাদেশে এ জাল টাকা ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এই চক্রটি। সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ফের সক্রিয় হচ্ছে এ চক্রের সদস্যরা। কারবারিরা সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছে জাল টাকা। তবে এই চক্রের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি এ চক্রের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা জাল টাকা বিক্রি করার জন্য সামাজিক প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। গোয়েন্দারা বলছে, টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে সবাই সচেতন না হলে এ চক্রের দ্বারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি রাজধানীর ধলপুরে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মানের জাল বাংলাদেশি টাকা ও ভারতীয় রুপি তৈরির কারখানার সন্ধান পায় ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি জানায়, ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা মার্কেটে ছড়িয়ে দেওয়ার টার্গেট করে বাসা ভাড়া নেয় জাল মুদ্রার কারবারি চক্র। উদ্দেশ্য ছিল রমজানের মধ্যে ও ঈদ উপলক্ষে বিপুল পরিমাণে জালটাকা তৈরি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া।

এ চক্রের বিষয়ে ডিএমপির লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, পবিত্র রমজানের মধ্যে ও আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে করোনা মহামারি পরবর্তী সুষ্ঠু পরিবেশে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক মহাযজ্ঞ চলছে। রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে জালনোট কারবারিরা বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দিচ্ছে এমন গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়। ওই তথ্য যাচাই বাছাই ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং জাল মুদ্রা কারবারি চক্রের বেশ কিছু সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন ইতোমধ্যে আমরা জাল টাকা তৈরি চক্রের সদস্যদের অবস্থান শনাক্ত করে কাজ করছি।

এদিকে জাল টাকার কারবার এখন অনলাইনেও দেখা যায়। বিভিন্ন পেজ খুলে জাল টাকার বিজ্ঞাপন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে দেশের যে কোনো স্থানে নিরাপত্তার সঙ্গে পৌঁছে দেওয়া হবে। আবার ইনবক্সে যোগাযোগের জন্যও বলা হচ্ছে। কারবারি চক্রের সদস্যরা বলছে, কুরিয়ার সার্ভিস অথবা তাদের দেওয়া নির্দিষ্ট জায়গায় গেলেই মিলবে জাল নোট। এ সময় তারা হুঁশিয়ার করে বলছে, আমাদের নির্দিষ্ট জায়গায় না আসলে জালনোট দেওয়া হবে না। তা ছাড়া পুলিশকে বললে ভয়াবহ পরিণতি হবে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ভাবে বিজ্ঞাপন করছে জাল টাকা চক্রের সদস্যরা। তবে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট অপরাধ দমন সংস্থা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইন প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধী চক্র যেমন সক্রিয় হচ্ছে তেমনি জাল টাকার কারবারিরাও বসে নেই। জাল টাকার কারবারিরা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের কারবার চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকার কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠছে। গ্রাহক পেতে তারা অনলাইন প্লাটফর্মকে বেছে নিচ্ছে। আবার প্রতারণার কাজেও এ পেজগুলোকে অনলাইন প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কর্মকর্তারা বলছেন, সাইবার টিম এগুলো মনিটরিং করছে। সময়মত এ চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হবে।

অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে জাল টাকা : 
অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাল টাকা চক্রের সদস্যরা সম্প্রতি ফেসবুকে নানা ধরনের জাল টাকা সংক্রান্ত পেজ খুলেছে। সেখানে তারা বিজ্ঞাপণ দিয়েছে। কম রেটে জাল টাকা সরবরাহ করা হয়। যোগাযোগের জন্য ইনবক্স এবং মোবাইল নম্বরও (হোয়াটসঅ্যাপ) দিচ্ছে। কারবারিরা বলছে, নির্দিষ্ট জায়গায় গেলেই পাবেন জাল টাকা। তবে সাবধান পুলিশকে জানালে আপনি নিজেই ঝামেলায় পড়বেন। এ বিষয়ে জালটাকা চক্রের কারবারিদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। এ সময় তারা জানায়, উক্ত নম্বরে যোগাযোগ করলেই মিলবে জাল টাকা। তবে এক লক্ষ জাল টাকা ১৫ হাজার টাকার নিচে দেওয়া হবে না। যদি এ প্রস্তাবে রাজি থাকেন তাহলে উক্ত নম্বরটিতে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে পারেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ‘জাল টাকা কম দামে বিক্রি করি’ একটি পেজ রয়েছে। সেখানে জাল টাকার বিষয়ে নানা ধরনের তথ্যও দেওয়া হয়েছে। এ রকম অন্তত বেশ কয়েকটি পেজের খোঁজ পাওয়া গেছে। সেখানে ঈদকে সামনে রেখে বলা হচ্ছে যে কোন নোট তারা সরবরাহ করতে পারবে। দেশের যে কোনো জেলা হলেও সমস্যা নাই।

যা বলছে সাইবার টিম :
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার মনিটরিং টিমের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে নানা ধরনের অপরাধীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে এতে পিছিয়ে নেই জাল টাকার কারবারিরা। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে ডিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, জাল টাকা তৈরিতে সারাদেশে সক্রিয় চক্রের বিষয়ে বেশ কয়েকটি তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে মূল হোতাদের নামও উঠে এসেছে। এই মূল হোতারা হলো- ইমন, জামান, জাকির, সেলিম, হামির, সিহাব, হুমায়ন কবির, বিহারি সুমন, আমজাদ, কাওসার, সেলিম বেপারি, সাইফুল ওরফে রিকশা সাইফুল, খশরু ও সাগর। পুলিশ বলছে, এরা সবাই গোয়েন্দা নজরে রয়েছে।

জেল থেকে বের হয়ে জাল চক্র সক্রিয় হয় :
বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার জাল টাকার কারবারিদের জিজ্ঞাসাবাদেই তাদের বিষয়ে তথ্য মিলে। এসব চক্র আগে উৎসবকে ঘিরে জাল টাকা তৈরি করত। এখন তারা সারাবছরই জাল টাকা তৈরি করে বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। চক্রের হোতাদের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলাও রয়েছে। প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে তিন থেকে ছয় মাসের বেশি কেউ জেল খাটেনি বলে ডিবি পুলিশের একটি তথ্যে জানা গেছে। ওই তথ্য বলছে, এরা জামিনে বেরিয়ে আবার একই অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। কারণ তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এজন্য আবারো অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়।

সচেতনতাই একমাত্র রক্ষাকবচ :
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুনুর অর রশিদ বলেন, ঈদ বা বড় বড় উৎসব গুলোতে জাল টাকা প্রস্তুতকারক ও কারবারিদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। সম্প্রতি বেশ কিছু কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা বাইরে আছে তাদের নজরে রাখা হয়েছে। প্রতিদিনই অভিযান চলছে। পুলিশ রোজার আগ থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যাতে কেউ জাল নোট বাজারে ছাড়তে না পারে। উদ্ধার হওয়া জাল টাকা আগের টাকার চেয়ে অনেক বেশি নিখুঁত উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাল টাকা সাধারণ চোখে বোঝা খুবই কঠিন যে এটা জাল। তবে অরজিনাল টাকা কিছুটা খসখসে এবং জাল টাকা বেশি মসৃণ হয়। এক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার আহবান করছি সাথে কাউকে সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ রইলো।

এ বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অনেক জাল চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি। চলতি বছরেও বাণিজ্যমেলা থেকে কোটি টাকার বেশি জাল নোট বাজারে ছাড়ার চক্রকে ধরা হয়েছে। ধরার পর আমরা জানতে পেরেছি তারা ১০ বছর ধরে এমন জাল টাকা তৈরি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতো। তিনি বলেন, এসব জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ডিলার রয়েছে তারা কৌশলে কাজ করে। সবাই টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে একটু সচেতন হলে এসব থেকে রেহাই পেতে পারে।

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত