নেত্রকোনার শস্য ভান্ডার খ্যাত কেন্দুয়া উপজেলা। এ উপজেলায় গত বছর বন্যায় বোরো ধানের ফলন হারানোর পর এ বছর বি-২৮ জাতের বোরোতে বেশি ফলনের ভরসা রাখা কৃষকদের এখন ঘিরে ধরেছে ব্লাষ্ট রোগে এই ধান হারানোর আশঙ্কাও। ফলে ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি বছরের খাবার কীভাবে জুটবে, সেই দুঃশ্চিন্তায় কাটছে তাদের।
স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে ব্লাস্ট রোগের প্রধান কারণ হলো আবহাওয়া জনিত তারতম্য। বিশেষ করে দিনে তাপমাত্রা বেশি আর রাতে ঠান্ডা পরায় এ রোগের সৃষ্টি।
এ রোগ অতিতেও ছিল তবে নিয়ম অনুযায়ী সঠিক সময়ে ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগ করা হলে এরোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া যেত।
এ রোগ সাধারণত বি-২৮ জাতীয় ধানে বেশিরভাগ আক্রমণ করে। এ জাতীয় ধান দীর্ঘ দিন ধরে মাঠে থাকায় প্রতিরোধ ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাওয়ার কারণে অধিক পরিমাণে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগে এ রোগ সহজে আক্রমণ করে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কেন্দুয়া উপজেলায় ২০ হাজার ৭শ ১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। অন্য জাতের ফলন ভালো হলেও ব্রি-২৮ জাতের ক্ষেতে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে ব্লাস্ট রোগ। এতে অধিকাংশ জমির ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। আক্রান্ত জমিতে শীষ থাকলেও তাতে নেই চাল।
কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফফরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির আলম ভূঞা বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন হাওর এলাকা। এই এলাকায় যারাই এবার ব্রি-২৮ জাতের বোরো ধান চাষ করেছেন, তাদের সবার ফসলই ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে চিরাং ইউনিয়নের পূর্বরায় গ্রামের কৃষক খোকন ও ছিলিমপুর গ্রামের কৃষক রুবেল জানায়, যারাই আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান আবাদ করেছেন তাদের সবার ক্ষেতেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে একমাত্র ফসল বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল উপজেলার কৃষকগণ।
গত সপ্তাহে ব্লাষ্ট রোগ দমনে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বোরো ধান ফসলের ব্লাষ্ট ও বিএলবি রোগ দমনে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তারিক আজিজ কে আহবায়ক ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আতিকুর রহমান কে সদস্য সচিব করে সাত সদিস্যের একটি স্কোয়াড গঠন করা হয়।এই স্কোয়াডের সদস্যরা আক্রান্ত এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে কৃষকদের মাঝে ব্লাষ্ট রোগ নিয়ে সচেতনতামুলক সভা করছেন এবং ব্লাষ্ট রোগ দমনে কি কি করনীয় সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরন করছেন।
এ ব্যাপারে কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, ম্যাগ্নাপারথি গ্রিসা ( Magnaporthe grisea) নামক ছত্রাক দ্বারা ধানের ব্লাষ্ট রোগ হয়ে থাকে। ধানের ধংসাত্বক রোগগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। তিনি আরো বলেন উপজেলার হাওর ইউনিয়ন বিশেষ করে মোজাফফরপুর এবং চিরাং ইউনিয়নে এই ব্লাষ্ট রোগের প্রকোপ বেশি। কেন্দুয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত বোরোক্ষেতে সমস্যা সমাধানে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ছত্রাক নাশক স্প্রে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’বার করে জমিতে দিতে বলা হয়েছে। এটি আবহাওয়া জনিত রোগ। পাশাপাশি একই ধরনের ধানের আবাদ না করে যেসব জাতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, তা আবাদের পরামর্শ শুরু থেকেই দিচ্ছি।
-বাবু/এ.এস