শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫ ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সীমান্তে অবাধে চলছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চোরাচালান
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা
প্রকাশ: বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩, ৭:৫৪ PM আপডেট: ১৯.০৪.২০২৩ ৭:৫৬ PM
ওপারে ভারত এপারে বাংলাদেশ এর মধ্যে সীমান্ত ঘেরা উপজেলা কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর। উপজেলা দুটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে দিয়ে দিন দুপরে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে ভারতীয় আমদানিকৃত নিষিদ্ধ বিভিন্ন পণ্য।

আর আমদানীর বৈধতা আছে এসকল পণ্য সরকারের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবাধে দেশে নিয়ে আসছে এই দুই উপজেলার চোরাকারবারিরা। ফলে ওই দুই উপজেলা এলাকায় বাড়ছে চোরাচালান প্রবণতা। চোরাচালান ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করার পরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারি চক্র।

স্থানীয়রা বলছেন, কাচা টাকার লোভ আর বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন চোরাকারবারে। যদিও জেলা পুলিশের দাবি সীমান্তে অপরাধ ঠেকাতে কাজ করছে বিজিবি,পুলিশ, র‌্যাব বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী।

সূত্র জানায়, নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় প্রতিনিয়ত নতুন-নতুন কৌশলে চলছে চোরাচালান। দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের চোখের সামনে দিয়ে জেলার বেশ কয়েকটি সীমান্ত পথ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে চিনি, সুপারি, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কসমেটিক, শুঁটকি মাছ, মোরগ, মেলামাইনপ্লেট, ক্রেকার, পটেটো, মটরসহ বিভিন্ন ব্যান্ডের পণ্য-সামগ্রী।

আর ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে মরণ নেশা মাদক, টেন্ডুপাতার নাসির বিড়ি,গরুসহ বিভিন্ন পণ্য সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে সীমান্ত গ্রামগুলোর অনেকেই এখন চোরাকারবারের সাথে জড়িত রয়েছে। তবে প্রশাসনের দাবি সীমান্ত সুরক্ষা ও চোরাচালান বন্ধে বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। এদিকে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দিনের বেলা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করা দেশীয় নানা ধরণের পণ্য। ভোরে ও সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সীমান্তের কয়েকটি এলাকা দিয়ে দেশে অবাধে আসে ফেনসডিল, মদ ও আমদানি নিষিদ্ধ নানা পণ্য। ফলে এ সকল কিছু ঠেকাতে দরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত তদারকি ও নিয়মিত অভিযান দাবি করেন এই দুই উপজেলার সীমান্তে বসবাসরত এলাকাবাসীরা।

এদিকে কলমাকান্দা উপজেলায় ভারতের মেঘালয় সীমান্ত লেঙ্গুড়া, খারনৈ, রংছাতি এই তিন ইউনিয়ন সীমান্তে চোরাচালানের বাণিজ্য বন্দর যেন গড়ে উঠেছে। যদি কোন এক খবরের পাতায় প্রকাশিত হয় কোন এক সচিত্র প্রতিবেদন তবে প্রশাসন একটু নড়ে চড়ে বসে,তৎপর অভিযানে দু'একটা চোরাচালান জব্দ করে, তারপর আধাআধি বখরাতে সবকিছু হাপিস হয়ে যায়, এভাবেই আরো বেড়ে যাচ্ছে চোরাচালান বৃদ্ধি, কিন্তু এতেই কী যথেষ্ট, পুলিশ প্রশাসন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন সীমান্ত পিলার পয়েন্ট ১১৭০ ভরতপুর, ১১৭১ কালোপানি, তকলেট বাড়ি, পাচঁ লেঙ্গুড়া, পূর্বে ১১৭২ সাত শহীদ মাজার,কাঠালবাড়ী, জগনাথপুর, চেংনী, কচুগড়া,গোবিন্দপুর, উত্তর গোড়াগাও, পাতলাবন, সন্ন্যাসী পাড়া,বেতগড়া, বরুয়াকোনা, পাঁচগাও সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা, রাত ২টা থেকে ভোর ৫টা অবধি চোরাকারবারিরা চোরাচালান এপার থেকে ওপারে আনা নেয়া করে থাকে। সীমান্ত এলাকার লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, এসব মালামাল পাথর-বালুর ভেতর দিয়ে, দূর পাল্লা বাসে ও সীমান্ত চরা দিয়ে চোরাচালান কারবারিরা রাতের বেলায় পরিবহন করে থাকে। এসব মালামালের ধরন-চিনি ও ভারতীয় বিভিন্ন ব্যান্ডের মদ, চাইনিস পিস্তল, মেশিনারিজ সরংঞ্জাম, (মটর সাইকেল স্কুটি) বিভিন্ন মডেলের মোবাইল, ব্যান্ডের শাড়ি লেহেঙ্গা, কম্বল, কসমেটিক, সুপারি, গরু, চা, চিনি, সাবান-সেম্পু তেল, তেজ পাতা ইত্যাদি।

এসব চোরাচালান পাচারকালে চোরাইকারবারিদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হল অকিটকি। জানা যায়, অকিটকিতে দু'সীমান্তের চোরাইকারবারিরা পাহাড়ের আনাচে কানাচে বসে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। কোন কোন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এসব চোরাচালান পাচার করলে সহজ হবে, কেবল তারাই শুধু জানতে পারবে, অন্য কেউ নয়। এই দুই উপজেলার সীমান্তে অকিটকিই এখন তাদের কাছে একমাত্র চোরাচালান বাণিজ্য উৎসবের মাধ্যম।

আর এই চোরাচালানকারিদের গডফাদার (মাহাজন) হলেন, কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের কালোপানি এলাকার রাবার্ট নখরেক, তারই বড় ছেলে সুজয় মান্দা ওপার থেকে এপারে এসব মালামাল সাপ্লাই করে থাকে, মহাজন রবার্ট নখরেক সেই চোরাচালান বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করে। তাদের সাথে আরো সমন্বয়কারীরা হল, লেঙ্গুড়া ইউপি'র ফুলবাড়িয়া এলাকার ভূবন নখরেক (গরু জমাদার) মজিদ, গফুর, কান্দাপাড়া-নাজমুল, শান্ত, মাজারুল, আল আমিন। ওরা ভারতের সীমান্ত মাকবুল জোড়া (ওপার সীমান্তের ফায়ারের) বাড়ি রাস্তা দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত গনেশ্বরী নদী দিয়ে চোরাচালান আনা নেয়া করে। অপরদিকে বার্মা বর্ডার হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দা লেঙ্গুড়া কালোপানি চরা হয়ে ইন্ডিয়া প্রবেশ করে এই চোরাচালান।

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:   কলমাকান্দা   দুর্গাপুর  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত