বান্দরবানের রুমা উপজেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) হামলার ভয়ে পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপিপাড়ার ৫০টি মারমা পরিবারের ২৩৩ জন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। তারা বর্তমানে উপজেলা সদরে মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভবনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের দুর্গম মুয়ালপিপাড়া থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের ভয়ে পালিয়ে এসেছে ৫০টি মারমা পরিবার। তাদের মধ্যে ১১২ জন পুরুষ ও ১২১ জন নারী রয়েছেন।
আশ্রয় নেওয়া মারমা পরিবারের কয়েকজন জানান, পাইন্দু ইউনিয়নের দুর্গম মুয়ালপিপাড়ায় ৮০টি বম পরিবার ও ৫০টি মারমা পরিবার বসবাস করে। মারমা পরিবারগুলোকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য পাচারের অভিযোগ এনে কেএনএফের সদস্যরা বেশ কিছু দিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছেন। মারমাদের বড় ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাইয়ের মধ্যেই স্থানীয় বাসিন্দা মংনাক মারমা (৪০) এবং মংবাসিং মারমাকে (৩৮) ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে কেএনএফের সদস্যরা। তারা দুজন বর্তমানে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের নির্যাতনের পর থেকে মারমাপাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা কেএনএফের বাধার মুখে এত দিন পালাতে পারেননি। গত বুধবার রাতে সামাজিক অনুষ্ঠান থাকার সুযোগে ঘর থেকে বের হয়ে তারা রুমা সদরে পালিয়ে আসেন।
এদিকে মুয়ালপিপাড়া থেকে ৫০টি মারমা পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসার ঘটনায় গত বুধবার সকালে রুমা মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন প্রাঙ্গণে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এ সময় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন মারমা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গুরুসহ রুমা বাজারের সচেতন নাগরিক সমাজ। এ সময় বক্তব্য দেন রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উহ্লচিং মারমা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুম্রাউ মারমা, পাইন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শৈমং মারমা, মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুইপ্রুচিং মারমা।
রুমা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, মুয়ালপিপাড়া থকে ঘর ছেড়ে আসা মারমা পরিবারগুলোকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দেখভাল করছেন। তারা কেন চলে এসেছেন সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা বলেন, মুয়ালপিপাড়া থেকে কেএনএফের ভয়ে পালিয়ে আসা ৫০টি মারমা পরিবারকে সদরের মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভবনে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এর আগেও গত ৬ এপ্রিল খামতামপাড়ায় গোলাগুলিতে ৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর আতঙ্কে পালিয়ে এসে ২০টি পরিবার রুমা উপজেলার বাম কমিউনিটি হলে আশ্রয় নিয়েছিল।
বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |