শনিবার ২১ জুন ২০২৫ ৭ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২১ জুন ২০২৫
সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন করুন
গাজী আরিফ মান্নান
প্রকাশ: শুক্রবার, ৫ মে, ২০২৩, ৩:৫৯ PM

বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষকতা একটি মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানজনক পেশা। সকল দেশেই সব জায়গাতে শিক্ষকের কদর ও মূল্যায়ন বেশি। শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় সম্মানের পাশাপাশি তাদের বেতনও উচ্চতর স্কেলে দেওয়া হয়। শিক্ষকরা আর্থিক সুবিধা ছাড়াও রাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। সে হিসেবে উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধা একেবারেই নগণ্য। আমাদের দেশের শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন একজন  সরকারি অফিসের কেরানির চাইতেও কম। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ও মর্যাদা এখনো সেইভাবে রাষ্ট্র দিতে পারেনি, এজন্যই শিক্ষকরা এখনো সমাজে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সুন্দরভাবে চলতে পারলেও একজন প্রাথমিকের শিক্ষককে অনেক কষ্ট করে দিন/ মাস পার করতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সমাজে শিক্ষক ও তার পরিবার পারিপার্শ্বিকভাবে হেয় বা অবমূল্যায়িত হবে। রাষ্ট্রকে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে একজন শিক্ষক যেন তার পরিবার পরিজন নিয়ে সুন্দরভাবে সমাজে চলতে পারে। একজন শিক্ষক যদি মাসের বেতনের টাকায় ঠিকমত চলতে না পারেন, তবে তিনি শিক্ষার্থীদের ঠিকমত শিক্ষা দিতে পারবেন না।

প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি প্রধান শিক্ষকদের মতো সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রদান করা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেল, সেই বঙ্গবন্ধুর দলও প্রায় এক যুগ ধরে ক্ষমতায় কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্তরে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদায় রেখে দেওয়া হয়েছে। চরম একটা গ্রেড-বৈষম্যের শিকার হয়ে আছেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড নিছক কোনো দাবি নয়, এটা ন্যায্য অধিকার। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগের জন্য যোগ্যতা, স্নাতক সমমান (২য় বিভাগ) বেতন গ্রেড ১৩তম। পাশাপাশি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। পুলিশের উপপরিদর্শকের নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। হাসপাতালের নার্সদের নিয়োগের যোগ্যতা বিএসসি ইন নার্সিং, বেতন গ্রেড ১০ম। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার নিয়োগের যোগ্যতা ৪ বছর মেয়াদি কৃষি ডিপ্লোমা, বেতন গ্রেড ১০ম। ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক, বেতন গ্রেড ১০ম। শিক্ষকদের এই দাবি নিয়ে মানববন্ধন, আন্দোলনসহ সরকারের বিভিন্ন দফতর ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতেও ফলপ্রসূ বা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

শিক্ষক সমাজ বিভিন্নভাবে লাঞ্ছনা ও বঞ্ছনার শিকার বহুদিন থেকে। একজন শিক্ষক তার প্রাপ্য সম্মানটুকু যদি না পায় তাহলে সে কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিবে। শিক্ষক জ্ঞান বিতরণ করবে নিজের ও পরিবারের পেট খালি রেখে নাকি অন্যকোনো ধান্দায় লিপ্ত হয়ে। শিক্ষকতা পেশায় পদোন্নতি একবারেই নেই বললে চলে, এই কারণে শিক্ষকরা কাজে কর্মে নিরাশ হয়ে পড়ে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতির সুযোগ না থাকে, তাহলে তার এই পেশার প্রতি একঘেঁয়েমি বা বিরক্তি চলে আসবে। যোগ্যতা অনুসারে পদোন্নতির সুযোগ রাখলে, তিনি তার নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবেন। এতে কাজেও যেমন গতি আসবে এবং মনেও প্রশান্তি আসবে।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করতে হলে সবার আগে শিক্ষকদের চাহিদা পূরণ করতে হবে। শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে তাদের শিক্ষাদানে আরো বেশি উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করতে হবে। মেধাবী ছেলেমেয়েরা যেন শিক্ষকতা পেশায় আসতে পারে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। মেধাবীদের এই পেশার প্রতি আকৃষ্ট করতে বা ধরে রাখতে হলে সবধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে। শিক্ষকদের দেশ-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে হবে, তাহলে তারা নিজেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে পারবে।

পরিশেষে, একথা বলতে চাই যে, শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো সরকার বিবেচনা করে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজকে  উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করবেন এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাবেন এই কামনা করি।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত