ফরিদপুরে ৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ৪টি সংসদীয় আসন। এই ৪টি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ মাঠে রয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা নেত্রী। বড় দুই দলেরই নেতারা তাদের দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। কেউ কেউ একে অন্যকে টেক্কা দিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এই ৪টি আসনে পুরানো প্রার্থীদের পাশাপাশি বড় দুই দলেরই একাধিক নতুন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন।
দীর্ঘ একযুগ পর ঘোষণা করা হয়েছে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। যদিও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি দলটি। তার পরও সরকার পতনের আন্দোলনের পাশাপাশি ভিতরে ভিতরে দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতারা।
ফরিদপুর-১ (মধুখালী-বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা) :
এ আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিগত দিনের নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন এ আসন থেকে। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মঞ্জুর হোসেন বুলবুল, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান, মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহ্মুদা বেগম কৃক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলাম, হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান দিলীপ রায়, আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য সৈয়দ শামীম রেজা প্রমুখ। এছাড়া গুঞ্জন রয়েছে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম।
ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা-কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন) :
এই আসনটি দুটি উপজেলা ও একটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী, নতুন মুখ হিসেবে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন, আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের ফরিদপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক কাজী আব্দুস সোবহান। জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া। কাজী আব্দুস সোবহান এলাকায় বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া। সেই সময় তার পক্ষে এ আসনের বেশির ভাগ নেতাকর্মী সমর্থন দিয়েছিলেন। পরে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে জামাল হোসেন মিয়া মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। আগামী নির্বাচনে তিনি দলের পক্ষে মনোনয়ন চাইবেন বলে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মেজর (অব.) আ ত মা হালিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ মিয়া।
বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে রয়েছেন দলের সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের কন্যা ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল।
ফরিদপুর-৩ (সদর) :
এ আসনটি সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের নির্বাচনগুলোয় এ আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে এটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। বর্তমানে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নানা নাটকীয়তা চলছে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। দীর্ঘ আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি রাজনীতি থেকে দূর রয়েছেন। তার সংসদ সদস্য পদটিও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এ আসন থেকে নির্বাচন করতে মাঠে নেমেছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। বিএনপি থেকে এ আসনে নির্বাচন করতে মাঠে রয়েছেন চৌধুরী কামাল ইউসুফের কন্যা, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ।
ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) :
এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। তবে বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহ হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরীর কাছে। আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গ সংগঠনের কোনো পদে না থেকেও দুই দুইবার বিজয়ী হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী। বর্তমানে তিনি আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এবার তিনি আওয়ামী লীগ থেকেই মনোনয়ন চাইবেন এমনটি তিনি একাধিক সভা-সমাবেশে বলেছেন। এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি কাজী জাফরউল্ল্যাহ।
বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন পেতে মাঠে কাজ করছেন দলের ভাঙ্গা উপজেলা সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলমগীর কবির। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে নির্বাচন করতে মাঠে রয়েছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন।
-বাবু/এ.এস