গাজীপুরের শ্রীপুরে ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা দ্বিতীয় দিনের মতো কাজ বন্ধ করে সকাল থেকেই কারখানার ভিতরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করে বিক্ষোভ করছে। তারা কার্ড পাঞ্চ করে নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা ভিতরে এবং কিছু পুরুষ শ্রমিক কারখানার অবস্থান করছে। কর্তৃপক্ষ সকাল থেকে কারখানা ফটকে পুলিশ মোতায়েন করেছে। রবিবার (১৪ মে) সকাল ৮ টায় তারা কারখানায় প্রবেশ করে শান্তি পূর্ণ অবস্থান নিয়েছে।
ফিনিশিং সেকশনের ফাহাদ ও নূর মোহাম্মদসহ তার সহকর্মী শ্রমিকেরা জানায়, এপ্রিল মাসের বেতন ১২ তারিখের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও কারখানা কর্র্তৃপক্ষ তাদেরকে বেতন দিচ্ছে না। শ্রমিকেরা কারখানায় কাজ বন্ধ করে আন্দোলনসহ বিক্ষোভ করতে পারে এমন খবর পেয়ে শনিবার (১৩ মে) সকালে কারখানার প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়। পরে তারা গেইটে আসলে প্রত্যেককে নিরাপত্তা প্রহরীদের দিয়ে চেক করে কারখানায় প্রবেশের অনুমতি দেয়। শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার ভিতরে খোলা জায়গায় অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্রমিকেরা কারখানার বাহিরে এসে রাজেন্দ্রপুর-কাপাসিয়া সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে শ্রীপুর উপজেলা সহকরাী কমিশনার (ভূমি) মো: আল-মামুনসহ গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও শ্রীপুর থানা পুলিশ কারখানায় এসে মালিকের সাথে কথা বলে।
পরে তারা শ্রমিকদেরকে রবিবার (১৪ মে) বেলা ১১ টায় মালিক নিজে বসার আশ্বাস দিলে বিকেল ৪ টায় তারা অবরোধ তুলে নেয় এবং ওই দিনের জন্য কারখানার সাধারণ ছুটি ঘোষনা করে। দিনের শ্রমিকদের সাধারণ ছুটি ঘোষনা করলেও রাতের শিফটের কয়েকটি বিভাগের শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে বাধ্য করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন, শিল্প ও থানা পুলিশের ঘোষনা অনুযায়ী শ্রমিকেরা রবিবার (১৪ মে) সকালে কারখানায় প্রবেশ করে কার্ড পাঞ্চ খোলা মাঠে (অ্যাসেম্বলী পেয়েন্টে) শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়। তবে কিছু শ্রমকি বাহিরে অবস্থান নিয়েছে। সকাল থেকেই কারখানার সামনে শিল্প পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেয়।
সুইং আপরটের ও শ্রমিক প্রতিনিধি সেলিান আক্তার, আকলিমাসহ অনান্য শ্রমিকেরা জানায়, বেলা ১১ টায় কারখানায় মালিক আসার কথা থাকলেও দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মালিক কারখানায় উপস্থিত না হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের একটাই দাবী মালিক আসতে হবে এবং আমাদের বকেয়া বেতনসহ সকল বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। তাছাড়া প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে বেতন পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করে দিতে হবে। নাইট বিল, ওভারটাইম বিল, ইনসেনটিভ বিল, স্টাফদের নিয়মিত অনান্য কাজের বিলগুলো নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে।
তারা আরো জানায়, শ্রমিক না থাকার অযুহাতে একজন শ্রমিককে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো যাবে না। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীণ এবং অর্জিত ছুটির টাকা শ্রম আইন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করতে হবে। নিয়ম অনুয়ায়ী চাকুরি ছেড়ে দিলে সার্ভিস বেনিফিট পরিশোধ করতে হবে। যখন তখন বিভিন্ন অযুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও জোর পূর্ব শ্রমিকদের ডিউটি করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কারখানার স্টাফদের তিন মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস পরিাশোধ এবং শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা না পর্যন্ত শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাবে। কারখানায় প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে।
কারখানার মহা ব্যবস্থাপক (জিএম-প্রশাসন) ক্যাপ্টেন (অব:) আরিফ জানান, আমি এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। আসুস্থ থাকায় আমি বাসায় অবস্থান করছি।
ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস্ লিমিটেড কারখানার হেড অফিসের মানব সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা বিদ্যুৎ জানান, আমি ঢাকা অফিসে বসি। আমার কাছে যেমন ম্যাসেজে এসেছে তা হলো স্থানীয়ভাবে কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, শিল্প ও থানা পুলিশ সমন্বয়ে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি টিম গঠন করে মালিকের সাথে বসার কথা রয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের শ্রীপুর জোনের ইনচার্জ হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা কারখানায় অবস্থান করছি। বেলা ১১ টায় মালিক কারখানায় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত উপস্থিত হয়নি। শ্রমিকেরা তাদের দাবী দাওয়া নিয়ে কারাখান ভিতরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছে। আমরা প্রশাসনের সকল পর্যায়ের প্রতিনিধি মালিকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।
-বাবু/সাদরিনা