বুধবার ২ জুলাই ২০২৫ ১৮ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ২ জুলাই ২০২৫
অভিজ্ঞ ও ত্যাগী রাজনীতিবিদ আজমত উল্লাহকে রেখে
জাহাঙ্গীরের মাকে কেন মানুষ ভোট দেবেন
গাজীপুর সিটি নির্বাচন
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: রবিবার, ২১ মে, ২০২৩, ৭:০১ PM
গাজীপুরের মানুষ কেন একজন দক্ষ অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, সাবেক সফল গাজীপুর পৌর মেয়র, উচ্চ শিক্ষিত ও সৎ ব্যক্তি আজমত উল্লাহ খানকে বাদ দিয়ে একজন অনিভজ্ঞ গৃহবধূকে ভোট দেবেন ? আর কেনই বা বিতর্কিত ও বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর আলম তার মাকে হঠাৎ করে রাজনীতি ও নির্বাচনের মাঠে নিয়ে আসলেন ? এর পেছনে তার উদ্দেশ্যই বা কী ? তাহলে জাহাঙ্গীর কি আগে থেকেই অনুমান করতে পেরেছিলেন, ঋণ খেলাপি ও মামলা-মোকদ্দমার কারণে তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাবে? আর সে জন্যই তার মাকে দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ? আসলে এসবের পেছনে হঠাৎ গাজীপুরের রাজনীতির মাঠে আলোচিত-সমালোচিত জাহাঙ্গীরের উদ্দেশ্যই বা কী ? এসব প্রশ্ন এখন গাজীপুরের সচেতন ভোটার ও রাজনৈতিক সচেতন মানুষের মুখে মুখে। 

গত কয়েক দিন গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নারী-পুরুষ ভোটার ও রাজনৈতিক সচেতন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব প্রশ্নের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আটটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা হয়েছে। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হলে জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দল থেকে বহিষ্কারের ৭ দিন পর ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ভিডিওতে তাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করতে এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখা যায়।   

দল থেকে বহিষ্কারের পর ক্ষমা চেয়ে এবং ভবিষ্যতে দলের কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না, এমন মুচলিকা দিয়ে জাহাীঙ্গর দলীয় সদস্য পদ ফিরে পেলেও এবার আওয়ামী লীগ তাকে চুড়ান্তভাবে বহিষ্কার করেছে।

ঐসময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা তথা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার জন্য ইতোপূর্বে আপনাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার/অব্যাহতি প্রদান করা হয়। আপনার বিরুদ্ধে আনীত সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ স্বীকার করে আপনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

এমতাবস্থায়, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১৭(৬) ও ৪৭ (২) ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করে আপনার প্রেরিত লিখিত আবেদন পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে আপনার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করা হলো।

কিন্তু ক্ষমা প্রার্থনা করে দলের সদস্য পদ ফিরে পাওয়ার পর থেকেই জাহাঙ্গীরের আচার-আচরণের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। বিশেষ করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার ঔদ্ধত্যমূলক বক্তব্য, দলীয় সিদ্ধান্ত বরখেলাপ করে মনোনয়নপত্র দাখিল এবং দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ তাকে গত ২০ জানুয়ারি স্থায়ীভাবে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করে।

এর পরেও জাহাঙ্গীর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী একটি গোষ্টীর প্ররোচনায় এবং গোপনে বিএনপি-জামায়াতের হাতকে শক্তিশালী করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীর তার মাকে নিয়ে মাঠে নেমেছে। এসবের একমাত্র উদ্দেশ্য অত্যন্ত যোগ্য, সৎ এবং দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লাহকে ক্ষতি করা। জাহাঙ্গীরের এসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সুষ্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়, গত কয়েক দিনে আজমত উল্লাহর বিরুদ্ধে বক্তব্য থেকেই। 

গাজীপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ রাজনীতিবিদ আজমত উল্লা খান ১৯৬৯ সালে তৎকালিন টঙ্গী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন থেকে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু। ’৭২ সালে ভাওয়াল গড় জেলা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। ’৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ’৭৮ সালে শ্রমিকলীগ টঙ্গী আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক ভাওয়াল গড় ছাত্রলীগ। ’৭৯ সাল থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত এক টানা টঙ্গী থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ’৯১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, ’৯৬ ও ২০০৩ সালে পর-পর দুইবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, ’১৫ সালে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ’১৮ সালে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য পদ লাভ করেন। বর্তমানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আইন ও বিধি উপ-কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। 

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন এড. আজমত উল্লা খান। তার রাজনৈতিক উত্থান শুরু ১৯৯৫ সালে টঙ্গী পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর । তিন মেয়াদে তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর টঙ্গীতে আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি হিসেবে তিনি গুরু দায়িত্ব পালন করেন। অপরদিকে আজমত উল্লাহর তুলনায় জাহাঙ্গীর নিতান্তই শিশু। ২০১৮ সালে অনেকটা আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে গাজীপুর সিটির মেয়র নির্বাচনের আগে অনেকটা লোক চক্ষুর অন্তরালেই ছিলেন জাহাঙ্গীর। তার সর্বোচ্চ রাজনীতির সীমা ছিল উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব।

গাজীপুরের সাধারণ ভোটারদের মূল্যায়ন আজমত উল্লাহর সঙ্গে কোনো তুলনাতেই আসতে পারেন না জাহাঙ্গীর আলম। তাছাড়া বিগত সিটি নির্বাচনে দলীয় নেতা আজমত উল্লাহ যেভাবে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে থেকে বিজয় ছিনিয়ে এনছিলেন, এবারও মানুষ আশা করেছিল জাহাঙ্গীরও আজমত উল্লাহর পাশে থেকে তার প্রতিদান দেবেন। কিন্তু হয়েছে তার বিপরীত। তাছাড়া কুটকৌশলে জাহাঙ্গীর তার মাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে যে নোংড়া ও হিংসাত্মক প্রতিশোধের পথ বেছে নিয়েছেন, গাজীপুরের মানুষ তা ভালভাবে নেয়নি। 

অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহর মত একজন প্রবীণ, ত্যাগী ও আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকের সঙ্গে কোনো বিচারেই জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে না। জাহাঙ্গীর আলমের মা নিতান্তই গৃহবধূ ও গাজীপুরবাসীর কাছে অপরিচিত জায়েদা খাতুনকে প্রার্থী করার পেছনে যে গভীর ষড়যন্ত্র আছে, মানুষ আস্তে আস্তে সেটা বুঝতে শুরু করেছে। ফলে প্রথম দিকে জাহাঙ্গীরের পেছনে কিছু লোকজ থাকলেও এখন তারা সবাই সটকে পড়েছে। বলা যায় জাহাঙ্গীর এখন নিজের ষড়যন্ত্রের ও অপরাজনীতির ফাঁদে নিজেই আটকা পড়েছেন বলে মনে করছেন গাজীপুরের সচেতন ভোটাররা। 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  গাজীপুর   নির্বাচন   রাজনীতিবিদ   







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত