দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে নানা সামুদ্রিক জীবের সমাগম দেখা যায়। বিভিন্ন প্রজাতির হাঙর সংরক্ষণের লক্ষ্যে সেখানে এক উদ্যোগ চলছে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর সুফল হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে।
পরিযায়ী নীল হাঙর দক্ষিণ আফ্রিকা উপকূলে প্রায়ই ঢুঁ মারে। পাফাডার জাতের লাজুক হাঙর এবং গালি শার্ক সমুদ্রের নিচে বাদামি অ্যালজির বনেই থাকতে ভালোবাসে। প্রায় ২০০ প্রজাতির হাঙর এমন জলজ উদ্ভিদের মাঝে বাস করে।
হাঙর বিশেষজ্ঞ রায়ান ডালি নিয়মিত এই প্রাণীর কার্যকলাপের ওপর নজর রাখেন। তার মতে, হাঙর সংরক্ষণ করতে হলে তাদের গতিবিধি, তারা কোথায় সময় কাটায়, সেসব আমাদের জানতে হবে। আমরা এই সব হাঙরের পিছু নিয়ে তাদের ক্রিটিকাল হ্যাবিট্যাট চিহ্নিত করতে পারি। তারপর সেই এলাকায় সুরক্ষার উন্নতি করতে পারি।
তিনি ও তার টিম হাঙরের গায়ে অ্যাকুস্টিক ট্রান্সমিটার লাগিয়ে প্রাণীগুলোর গতিবিধির ওপর নজর রাখেন। হাঙর সেই প্রক্রিয়া প্রায় টেরই পায় না। একবার ট্যাগ করা হলে ট্রান্সমিটার ছয় বছর পর্যন্ত সংকেত পাঠাতে পারে।
রায়ান ডালি জানালেন, গত কয়েক বছরে আমরা দশ থেকে বারো প্রজাতির একশোরও বেশি হাঙরের শরীরে ট্রান্সমিটার বসিয়েছি। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি। কয়েক বছর ধরে সেই প্রাণীর গতিবিধির ওপর নজর রেখে তাদের জন্য ক্রিটিকাল এরিয়া শনাক্ত করার আশা করছি।
ট্যাগ করা হাঙরের সংকেত গ্রহণ করতে সমুদ্রের তলদেশে দেড়শোরও বেশি রিসিভার বসানো হয়েছে। হাঙর সেগুলোর মধ্যে কোনো একটির কাছ দিয়ে গেলেই রিসিভার সেটির আইডি নম্বর নথিভুক্ত করে। সিগন্যালের পরিধি এক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। সেই অ্যাকুস্টিক রিসিভারগুলো নিয়মিত ডাঙায় তুলে এনে সংগৃহিত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।
হাঙর বিশেষজ্ঞ হিসেবে রায়ান ডালি বলেন, এই রিসিভারে তথ্য পেতে আমাদের সহযোগীদের বড় নেটওয়ার্কের সঙ্গে কাজ করতে হয়। ফলে আমাদের সংগৃহিত সব তথ্য এক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শেয়ার করা হয়। আমরা দেখতে পাই, হাঙর কোথায় গেছে, কোথায় সময় কাটিয়েছে। এভাবে আমরা এই প্রাণীর সংরক্ষণের জায়গাকে অগ্রাধিকার দিতে পারি।
যতকাল হাঙর সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতি জনসমর্থন থাকবে, এই কর্মসূচি ততদিন চালানো সম্ভব হবে। বয়স কম থাকতেই মানুষ সমুদ্রের এই শিকারি প্রাণীকে ভয় করে আসছে। হাঙরের প্রতি সার্বিক মনোভাবে পরিবর্তন এলে তবেই এই প্রাণীর সংরক্ষণ কাজ করবে। তার জন্য সচেতনতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
শার্ক এডুকেশন সেন্টারের জাস্টিন সোয়াৎর্স বলেন, মানসিকতা বদলে আমি পৃথিবীও এক ধাপ বদলে দিচ্ছি বলে বিশ্বাস করি। ৪০ জন শিক্ষার্থীর এক গ্রুপ পেয়ে একটি মাত্র শিশুর মানসিকতা বদলাতে পারলে, অথবা তারা বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের হাঙরের গুরুত্ব তুলে ধরলে আমরা ইতোমধ্যেই পরিবর্তন আনছি বলে মনে করি।
সংরক্ষণবাদীরা টোপের মধ্যেও পানির নিচের ক্যামেরা বসিয়ে আরো ছোট ও লাজুক হাঙর পর্যবেক্ষণ করছেন। উপকূল থেকে কিছুটা দূরে বাদামী অ্যালজির জঙ্গলে সেগুলো বিচরণ করে। টোপের লোভে সেই প্রাণী আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। তখন গবেষকরা মহাসাগরের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে মূল্যবান চিত্র পেতে পারেন।
টিমের তৈরি একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য খতিয়ে দেখে বিজ্ঞানীরা ফলাফল বিশ্লেষণ করতে পারেন। কেপ আরএডিডি সংগঠনের ডায়লান ইরিয়ন বলেন, আমরা একটি ওপেন সোর্স মেশিন লার্নিং সফ্টওয়্যার নিয়ে সেটিকে ফল্স বে এলাকার হাঙর ও অন্যান্য প্রজাতির মাছের কয়েকশো ছবি দেখিয়েছি। ভবিষ্যতে ভিডিও থেকে সেই সব প্রজাতি শনাক্ত করতে সেই সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে চাই।
তাদের গবেষণা ইতোমধ্যে অত্যন্ত গঠনমূলক প্রমাণিত হয়েছে। হাঙর সংরক্ষণের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়েছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মহাসাগর এলাকায় সংরক্ষিত অংশের অনুপাত পাঁচ শতাংশ বেড়ে গেছে। সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের সুরক্ষার লক্ষ্যে সংরক্ষণবাদীরা সেই অনুপাত আরো বাড়াতে চান।
বাবু/মম