কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের ভোট সোমবার (১২ জুন)। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই চলছে নানা বিশ্লেষণ, হিসাব-নিকাশ। বিশেষ করে কোন মেয়র প্রার্থীর কোন এলাকায় বা কেন্দ্রে ভোট বেশি জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর সমর্থকরা উৎসবমুখর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার চেয়ারম্যান মরহুম মোজাম্মেল হকের পুত্র বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের ভরসা তৃণমূল নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের সাধারণ ভোটার।
নতুন ভোটার, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সচেতন সমর্থন, জাতীয় নির্বাচন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের তৎপরতা ও সংখ্যালঘু ভোটের হিসাব-নিকাশ নির্ধারণ করবে জয়-পরাজয়। আগামী শনিবার এই পৌরসভা নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন। তাই প্রধান দুই প্রার্থীই এখন ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা দলীয় মেয়রপ্রার্থীর জন্য ভোট না চেয়ে শুধু নিজের জন্যই ভোট চাইছেন।
পৌরসভার অলিগলিতে শুধু কাউন্সিলর প্রার্থীদের একক স্লোগান শোনা যায়। বুধবার (৭ জুন) কক্সবাজার পৌর শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
শহর আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, প্রায় ৪৩ কেন্দ্রে হবে ভোট। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গঠিত নির্বাচনী মনিটরিং টিম প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ভোটারদের ঘরে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের পরিবার মানুষকে জিম্মি করে এবং দখলবাজি করে অবৈধ উপার্জনের বর্ণনা দিতেও শোনা গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলীয় সমর্থনে ভোটের মাঠে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন মেয়র প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী। তবে নিজের অনুসারীদের নিয়ে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে প্রতিদিনই প্রচারণা চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ।
মূলত মাসেদুল হক রাশেদের নির্বাচনী কাজগুলো তার এক ভাই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল আরেক ভাই কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল নিজের হাতেই করছেন, নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে। শহরের ১ ও ২নং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রয়েছে তার নিয়ন্ত্রণে। সমিতি পাড়া, বৃহত্তর নুনিয়াছড়া ও মোহাজের পাড়ায় ভোটারদের আকর্ষণের চেষ্টায় এগিয়ে মাসেদুল হক রাশেদ। তবে অন্য এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা শক্ত অবস্থানে থাকায় মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর ভোট ব্যাংক ভারী হতে পারে।
নৌকার প্রার্থীর অবস্থা জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক গঠিত নির্বাচনী মনিটরিং কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মাহাবুবুল হক মুকুল বলেন, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। অনেকে অনেক কিছু করতে চাইবে কিন্তু ভোটাররা নৌকার মনোনীত প্রার্থীকেই ভোট দেবেন- এই প্রতাশা। কারণ, মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর মতো ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে এই শহরের ভোটাররা মেনে নিয়েছেন।
কক্সবাজার পৌরসভার ভোট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার কক্সবাজার পৌরসভায় ভোটার বেড়েছে ৩০ হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সচেতন নাগরিক। ফলে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে নতুন ভোটাররা হবেন বড় ফ্যাক্টর। নতুন ভোটারদের গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদসহ অন্য মেয়র প্রার্থীরা। শেষ সময়ে প্রার্থীরা গণসংযোগে মনোযোগ দিচ্ছেন। পৌরসভার এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে ভোটারদের খোঁজে ছুটে যাচ্ছেন তারা। প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের পদচারণায় কক্সবাজার শহরের পুরো এলাকা এখন মুখরিত। নির্বাচনের আমেজ ও উত্তাপ শহরের সীমানা ছেড়ে আশপাশ এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীকে বিজয়ী করতে জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করছেন। ভোটের মাঠে নিজের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ ও আধুনিক নগর গড়তে হলে নৌকার বিকল্প নেই। কক্সবাজার পৌরবাসীর সুখে- দুঃখে পাশে ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। আমি আশাকরি কক্সবাজার পৌরবাসী স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেবেন।
অন্যদিকে সমানভাবে পাল্লা দিয়ে নারকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ দিনভর প্রচার চালিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ভাইকে বিজয়ী করতে কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল নিজেদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রার্থীর পক্ষে কর্ম-কৌশল তৈরি করে প্রতিদিন মাঠে নামছেন।
তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন। কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মোট মেয়র প্রার্থী ৫জন। ১২টি সাধারণ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ৫৬ জন ও ৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ১৬ জন।
বাবু/জেএম