কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আর মাত্র ৩ দিন বাকি। আগামী ১২ জুন সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনি উত্তাপ ততই বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকদের ব্যস্ততা ও অস্থিরতা।
দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রতিদিন সকাল হতে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়, দোকানপাটে ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করছেন এবং প্রচারপত্র বিতরণ করে ভোট চাচ্ছেন। ফাঁকে ফাঁকে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পথসভা ও বৈঠক করছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভোট চাচ্ছেন। রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর গণসংযোগে যোগ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও।
প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের পদচারণায় কক্সবাজার পৌরসভার পুরো এলাকা এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের আমেজ ও উত্তাপ শহরের সীমানা ছেড়ে আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। সবার দৃষ্টি এখন মেয়র পদপ্রার্থীদের দিকে। এ নির্বাচনে কে হচ্ছেন পরবর্তী পৌর পিতা, কার গলায় ঝুলবে বিজয়ের মালা।
কক্সবাজার পৌরসভার এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনি প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। তাঁরা মেয়র পদে দলের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীকে বিজয়ী করতে জেলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় জোরেশোরে কাজ শুরু করেছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে নানা হিসাব নিকাশ করে নির্বাচনি কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সকাল হতে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পানি সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক রাহুল বড়ুয়া আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।
অপরদিকে নারকেল গাছ প্রতীক নিয়ে সমানভাবে পাল্লা দিয়ে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিজয় হতে নিজের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মায়ের পক্ষে কর্মকৌশল তৈরি করে প্রতিদিন মাঠে নামছেন।
এই ভোটে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখানোর জন্য মুখিয়ে আছে ভোটাররা। তাদের চোখ এখন আগামী সোমবারের নির্বাচনের দিকে। কে জিতবে তা নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। কিন্তু নির্বাচনে বেশিভাগ ভোটারই নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীকে এগিয়ে রাখছেন। তারা বলছেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জিতবে।
তবে ভোটাররা মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীকে এগিয়ে রাখলেও তা মানতে নারাজ নারকেল গাছ প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা। তারা বলছেন, ৩০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতবেন মাসেদুল হক রাশেদ।
নির্বাচন নিয়ে চায়ের দোকানদার মো. শফির সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, নির্বাচনে নারকেল গাছই জিতবে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা তা বলা মুশকিল। কথা হয় কাপড়ের দোকানদারের সঙ্গে, তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে কে এগিয়ে রয়েছেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কী না? জবাবে তিনি বলেন, ভোটে নারকেল গাছ জিতবে। আর সুষ্ঠু নির্বাচনও হবে।
নির্বাচিত হলে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাসেদুল হক রাশেদ বলেন, কক্সবাজার শহরকে আধুনিক পর্যটন শহরে পরিণত করবো। এই শহর হবে একটা নিরাপদ ও আধুনিক শহর। যে শহরে থাকবে সব সুযোগ-সুবিধা। এই শহর হবে একটা অসাম্প্রদায়িক শহর।
নৌকা প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, জীবনে কখনও চাঁদাবাজি করিনি। আমার কোনো বাহিনী নেই। শহরে শান্তিতে থাকতে চাইলে মাহবুবকে বেছে নেবেন। কোনো গডফাদারের উত্থান যেন কক্সবাজার শহরে না হয়। এটা হতে দিয়েন না। ধমকের সুরে কথা বলবে এমন কাউকে আপনারা ভোট দিয়েন না।
বাবু/জেএম