আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হবে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সকল কেন্দ্রে ইভিএম বসানো হয়েছে, প্রতিস্থাপন করা হয়েছে সিসি-টিভি। নিয়মিত টহল দিচ্ছে নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও প্রশাসনের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।
কেসিসির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, কেসিসি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও ভয়হীন করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএমসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। সিটিটিভি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাড়ে আট হাজার সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। সব মিলিয়ে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ভোটাররা যাতে নির্বিগ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন তার জন্য সকল পরিবেশর তৈরি করা হয়েছে।
রিটার্নিং কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার কেসিসি নির্বাচনে মোট ১৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে পাঁচজন মেয়র প্রার্থী, ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। কাউন্সিলর পদে সাধারণ ওয়ার্ডের দুজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে কেসিসির মোট ভোটার সংখ্যা পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা দুই লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন ও নারী ভোটারের সংখ্যা দুই লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন। ভোটা কেন্দ্র ২৮৯টি ও ভোট কক্ষ এক হাজার ৭৩২টি। সব কেন্দ্রে ভোট হবে ইভিএমে।
নির্বাচনে কেসিসির মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাতীয় পার্টির (জাপা) শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা), জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল) ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান (টেবিল ঘড়ি) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের জন্য ২৮৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, এক হাজার ৭৩২ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও তিন হাজার ৪৬৪ জন পোলিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রায় ৬ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী কাজ করছেন। আর নিরাপত্তা নিশ্চিতে খুলনা মহানগরীতে ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গত শনিবার সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা ভোটকেন্দ্রসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় চার হাজার ৭০০ পুলিশ সদস্য, তিন হাজার ৮৪৮ জন আনসার সদস্য ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে আট হাজারের অধিক সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে ফেলা হয়েছে পুরো খুলনা মহানগরীকে। এসবের পাশাপাশি থাকবে র্যাবের ১৬টি দল, স্টাইকিং ফোর্স, রিজার্ভ পুলিশ ও সাদা পোশাকে বিশেষ নজরদারি।
১৬১টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
কেসিসির ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১২৮টি কেন্দ্রকে সাধারণ ও ১৬১ কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। সাধারণ কেন্দ্রের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।
ভোটের মাঠে ৩১ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
এছাড়া ভোটকেন্দ্রগুলোতে দুই হাজার ৩১০টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রতি বুথের সামনে একটি ও কেন্দ্রের বাইরের অংশে দুটি করে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ওয়ার্ড ভিত্তিক ১ জন) ও ১০ জন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (প্রতি তিন ওয়ার্ড মিলে এক জন) দায়িত্ব পালন করছেন।
আজ সাধারণ ছুটি
কেসিসি নির্বাচন উপলক্ষ্যে আজ সোমবার খুলনা মহানগরী এলাকায় ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক ভোট গ্রহণের দিন অর্থাৎ ১২ জুন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত আওয়ামী লীগের দুই নেতা
কেসিসি নির্বাচনে দুটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুইজন আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন, নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এস এম খুরশিদ আহম্মেদ টোনা ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জেড এ মাহমুদ ডন। গত ১৬ মে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে একজন মাত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এছাড়া ঋণ খেলাপির কারণে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. শমসের আলী মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। আপিলেও তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর টোনা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর ডন মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।
বৈধ অস্ত্র বহন, প্রদর্শন ও চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা
নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কেসিসি এলাকার মধ্যে ১০ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র বহন, প্রদর্শন ও চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া মোটরসাইকেল ও যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শনিবার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞা স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি গণবিজ্ঞপ্তিতে এ সব তথ্য জানানো হয়েছে।
বাবু/জেএম