বুধবার ২৫ জুন ২০২৫ ১১ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ২৫ জুন ২০২৫
চট্টগ্রাম-১০ উপনির্বাচনে আ.লীগের ১০ মনোনয়ন প্রত্যাশী
কামরুজ্জামান রনি, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩, ৪:৪৯ PM
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশবিদেশের নানান মহল থেকে যখন নানা মুখি চাপ বাড়ছে তখন সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে সেসব শূন্য আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে বাড়তি চাপে পড়তে হচ্ছে দলটির নীতি নির্ধারক মহলের। কারণ এসব নির্বাচনে দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ডজন ডজন নেতারা মনোনয়ন চেয়ে থাকেন৷ এতো বিপুল প্রত্যাশীদের মাঝ থেকে একজনকে মনোনয়ন দেয়াটা কিছুটা কঠিন।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে একাধিকবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে আসনটি খালি হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১০ আসনটিতে আগামী ৩০ জুলাই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে চলতি সংসদের মেয়াদ রয়েছে মাত্র তিন মাসের কিছু বেশি। তবে মেয়াদ যতদিনই থাকুক, রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রায় সবাই চান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে। ফলে আসন্ন চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা৷ প্রধান বিরোধী জোট বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোন নির্বাচনে দলীয় ভাবে অংশ না নেয়ার কারণে যে-ই নৌকার মাঝি হবেন তিনি সহজেই নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ চট্টগ্রাম -৮ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষন করে এই সহজ জয়ের আশায় দিন দিন আ'লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা বাড়ছে৷ 

ইতিমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই প্রকাশ্য প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা জানান দিলেও সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নাম থাকা নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় দু'জন নেতা এখন পর্যন্ত সরাসরি নিজেদের ইচ্ছা জানান দেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জানিয়েছে, "আমরা এখনো ডা. আফসারুল আমীন ভাইয়ের মতন একজন নেতার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সেখানে উনার আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করার কথা বলাটা সমীচীন হবে না। চট্টগ্রামে ১৪ দলের সমন্বায়ক ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন হজ পালনের জন্য বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিকজনের দাবি, "সুজন ভাই এখন পর্যন্ত উপনির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়ার কথা বলেননি। তবে তিনি বরাবরই দলীয় সিদ্ধান্তে চলার মানুষ৷"

এই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা একেএম বেলায়েত হোসেন৷ ১৯৫৮ সালে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে জড়িত বেলায়েত হোসেন ৮২ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির সদস্য ছিলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নগর কমিটির সহ সভাপতি এবং বর্তমান কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজের জীবনের সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে বেলায়েত হোসেন বলেন, "বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করে আজকের দিন পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় আছি৷ জীবনের এই সময়ে আমার এলাকার জনসাধারণের জন্য কিছু করার সুযোগ চাই।" বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, "এক এগারো এর সময় প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেফতার হলে আমি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলাম। সেই দুর্দিনে, দলের দুঃসময়ে নানামুখি প্রলোভন ও হুমকিতে এক মুহূর্তের জন্য নেত্রীর প্রশ্নে কারো সাথে আপোশ করিনি।"

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন দুই যুবলীগ নেতা। যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য, বর্তমানে আওয়ামী লীগে সৈয়দ মাহমুদুল হক এবং চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক, নগর আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু। এই দুজন আবারো এই আসনে উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন৷ এই বিষয়ে মাহমুদুল হক বলেন, "আমি এই আসনের বাসিন্দা হিসেবে এই আসনের জনপ্রতিনিধি হতে চাইবো"৷ অন্যদিকে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, "আমি এই আসনের প্রতিটি জনপদে নিজের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি এখানকার বাসিন্দাদের পাশে সবসময় ছিলাম। করোনাসহ সব ধরনের দুর্যোগ, দুর্দিনে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি৷" এই দুই সাবেক যুবলীগ নেতার মধ্যে মহিউদ্দিন বাচ্চুর পাল্লাকে ভারি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে একই সাথে যুবলীগের দীর্ঘদিনের আহ্বায়কের দ্বায়িত্ব পালন করায় মহিউদ্দিন বাচ্চু ভালো অবস্থানে রয়েছেন৷ তবে প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী যুবলীগের সাবেক দুই যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা ও ফরিদ মাহমুদ মনোনয়ন চাইলে মহিউদ্দিন বাচ্চু কিছুটা বেকায়দায় পড়তে পারে৷ তবে সাবেক এই নগর যুবলীগ নেতারা দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত মানতে এবং নৌকাকে বিজয়ী করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন৷  

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এম এ আজিজ এবং জহুর আহমদ চৌধুরীর নাম বরাবরই আলোচনায় থাকে৷ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ এই দুই সহচরের পরিবারের সাথে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে৷ এই দুই পরিবারের দুই সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে৷ প্রয়াত এমএ আজিজের ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, জহুর আহমদ চৌধুরীর ছেলে হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান নিজ নিজ অবস্থান থেকে মনোনয়ন পেতে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে জানা গেছে৷ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার বরাবরই স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় থাকলেও জহুর আহমদ চৌধুরীর সন্তান হেলাল উদ্দিন তুফান অতোটা সক্রিয় নন৷ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের ঘনিষ্ঠ নোমান আল মাহমুদকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি ভোটে বিজয়ী করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন৷ চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে আ জ ম নাছিরের পছন্দের তালিকায় এম এ আজিজের সন্তান সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার রয়েছেন৷ 

এই দুই পরিবারের পাশাপাশি প্রয়াত ডা. আফসারুল আমীনের পরিবারের একাধিক সদস্য মনোনয়ন চাইতে পারেন৷ প্রয়াত সংসদ সদস্যের ছোট দুই ভাইয়ের পাশাপাশি মরহুমের ছেলে ফয়সাল আমীন মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত চাচা-ভাতিজা তিনজনই একত্রে মনোনয়ন চাইবেন নাকি পরিবারের পক্ষ থেকে যে কোন একজন মনোনয়ন চাইবেন সেটা নিয়ে এখনো পারিবারিক ভাবে কোন কথা হয়নি। আমীন পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে আফসারুল আমীনের শরীরে ক্যান্সার ধরা পরার পর থেকে তার ছোট ভাই নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এরশাদুল আমীন সংসদ নির্বাচন করবেন বলে শোনা গেলেও আরেক ছোট ভাই ডা. আরিফুল আমীন তেমন সক্রিয় ছিলেন না৷ তবে পাবলিক সেন্টিমেন্ট বিবেচনায় স্বল্প মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রয়াত সংসদ সদস্যের ছেলেকে জাতীয় সংসদে বাবার শূন্য আসনে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে৷ 

এছাড়াও আসন্ন উপনির্বাচনে মনোয়ন প্রত্যাশী ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদের সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ নজরুল৷ চসিক মেয়র রেজাউল করিমের ঘনিষ্ঠ এই আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় মনোনয়ন পেলে চট্টগ্রাম-১০ আসনে ড. আফসারুল আমিনের অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করতে চান বলে জানান৷ মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়া মনজুরুল আলম মঞ্জু ও তার ছেলের নাম নাম শোনা গেলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কিছু জানাননি৷ তবে বিএনপি'র সার্থ সম্পর্ক ত্যাগের পর চট্টগ্রামে সংসদ নির্বাচন ও মেয়র নির্বাচনে বরারবই সাবেক মেয়র মঞ্জুর নামটি উঠে আসে৷ এসব প্রত্যাশীদের বাহিরে অন্তত আরো দু'জন শিল্পপতি আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তাবে এখনই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক হয়েছে৷ 

উল্লেখ্য, আগামী ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৪ জুলাই। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৬ জুলাই, আপিল দায়ের করা যাবে ৭ থেকে ৯ জুলাই, আফিস নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১১ জুলাই। এছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ জুলাই এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৩ জুলাই। আসনটির উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় সব কেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে৷

বাবু/জেএম 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত