সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫ ৩০ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
রক্ত দান করি, জীবন বাঁচাই
মো. আরাফাত রহমান
প্রকাশ: বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩, ১২:৫৫ PM

বিনামূল্যে রক্তদানে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৪ জুন পালিত হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’ এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। প্রত্যেকেরই নিরাপদ রক্ত প্রাপ্তির নিশ্চয়তা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য, সমস্ত দেশের স্বেচ্ছাসেবক ও দাতা প্রয়োজন যারা নিয়মিত রক্ত দেয়। সীমাবদ্ধ গতিশীলতা এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও রক্তদাতারা রক্তদানের জন্য প্রয়োজনীয় রোগীদের রক্ত এবং প্লাজমা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।

এ দিবসটির সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হল বিশ্বের রক্তদাতাদের ধন্যবাদ জানানো, নিয়মিত, অবৈতনিক রক্তদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা, জনগণের সংহতি ও সামাজিক সম্প্রীতি বাড়াতে রক্তদানের মূল্যবোধ প্রচার করা, যুবকদের রক্তদানের জন্য মানবিক আহ্বানকে গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা এবং অন্যকেও এটি করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা এবং স্বাস্থ্যেও প্রচারে অংশীদার হিসেবে যুবকদের সম্ভাবনা তুলে ধরা।

প্রতিবছর ৮ কোটি ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান হয়। অথচ এর মাত্র ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে, যেখানে বাস করে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ মানুষ। উন্নত দেশে বেশিরভাগ রক্তদাতাই হলেন স্বেচ্ছায় রক্তদাতা, যারা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে রক্তদান করেন। দরিদ্র দেশগুলোতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা বেশ কম, বেশিরভাগ রক্তদাতাই কেবল তাদের পরিচিতজনদেও প্রয়োজনে রক্তদান করে থাকেন। বেশির ভাগ রক্তদাতাই সমাজসেবামূলক কাজ হিসেবে রক্তদান করেন।

একজন রক্তদাতা কতদিন পরপর রক্তদান করতে পারবেন তা নির্ভর করে তিনি কী দান করছেন তার ওপর এবং যে দেশে রক্তদান সম্পন্ন হচ্ছে সে দেশের আইনের উপর। তবে প্রতি চারমাস অন্তর অর্থাৎ ১২০ দিন পর পর মানবদেহে নতুন রক্ত তৈরি হয়। গৃহীত রক্তের পরিমাণ ও পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত ৫০০ মিলিলিটার রক্ত নেওয়া হয়। পরিসঞ্চালনে ব্যবহৃত বেশির ভাগ রক্ত উপাদানই অল্প আয়ুবিশিষ্ট।

রক্তদানের পূর্বে রক্তদাতার কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা অবশ্য জরুরি। বয়স পুরুষদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৭ বছর, এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর থেকে ৫৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে, শারীরিক ওজন মেয়েদের ক্ষেত্রে ৪৭ কেজি এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ৫০ কেজি বা এর বেশি হতে হবে। তবে, উচ্চতা অনযায়ী ওজন ঠিক আছে কিনা ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে হবে। প্লাটিলেট দিতে হলে ওজন কমপক্ষে ৫৫ কেজি হতে হবে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, ব্লাড প্রেসার এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে হবে, উচ্চরক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে যদি প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং এর জন্য কোন প্রকার ঔষধ সেবন না করলে রক্তদান করা যাবে, ডায়বেটিকস রোগীরা রক্তদান না করাই উত্তম। তবে কোনো প্রকার ওষুধ গ্রহণ না করা অবস্থায় যদি ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অন্য কেনো রক্তদাতা খুঁজে না পেলে তখন রক্ত দেওয়া যাবে।

শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ এ্যাজমা, হাঁপানি যাদের আছে যাদের এবং নিয়মিত ওষুধ ও ইনহেলার গ্রহণ করলে রক্ত দিতে পারবে না। মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪ মাস অন্তর-অন্তর এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩ মাস অন্তর-অন্তর রক্তদান করা যাবে। খুব বেশি জরুরি না হলে পুরুষরা ৪ মাস অন্তর-অন্তর রক্ত দান করা উত্তম। হার্ট এবং কিডনিজনিত কোনো সমস্যা থাকলে রক্ত দান করতে পারবে না। শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে রক্তদান করা যাবে না। মাদকাসক্ত হলে রক্ত দিতে পারবে না। রক্তবাহিত জটিল রোগ যেমন- ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিস, এইডস, চর্মরোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিকস, টাইফয়েড এবং বাতজ্বর থাকলে রক্তদান করা যাবে না। মায়েদের ক্ষেত্রে শিশু বুকের দুধ গ্রহণ করা অবস্থায় রক্তদান করা যাবেনা। শিশু জন্মের ১৫ মাস পর রক্ত দান করতে পারবে, যদি বুকের দুধ না খায়। কোনো কারণে গর্ভপাত হলে কমপক্ষে ৬ মাস পর রক্ত দান করা যাবে না।

কোনো বিশেষ ধরনের ওষুধ খাওয়ার ৭ থেকে ৩০ দিন পর রক্তদান করা যাবে। নরমাল এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের ৭ দিন পর রক্তদান করা যায়। তবে বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক রয়েছে যেগুলো সেবন করলে কমপক্ষে ৩০ দিন পর রক্তদান করতে হয়। কোনো প্রকার টিকা বা ভ্যাকসিনগ্রহণ করলে কমপক্ষে ২৮ দিন পর রক্তদান করা যাবে। তবে কিছু টিকা রয়েছে, যেগুলো গ্রহণ করলে কমপক্ষে ৩ মাস পর রক্তদান করা যাবে। এজন্যে ডাক্তারের সাথে আলাপ করে রক্তদান করা উচিত। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হলে কমপক্ষে ১ বছর পর রক্তদান করা যাবে। হেপাটাইটিস বি ও সি আক্রান্ত হলে কখনো রক্তদান করতে পারবে না। যক্ষ্মা হলে পূর্ণমাত্রার ওষুধ সেবনের ২ বছর পর রক্তদান করা যাবে।

রক্তদানের প্রথম ও প্রধান কারণ, একজনের দানকৃত রক্ত আরেকজন মানুষের জীবন বাঁচাবে। রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোনম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয় এবং রক্তদানের ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্ত কণিকার জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। বছরে ৩ বার রক্তদান শরীরে লোহিত কণিকা প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলার সাথে সাথে নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়িয়ে দেয়। রক্তদান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়। নিয়মিত রক্তদান করলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

লেখক : কলামিস্ট ও চাকরিজীবী

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত