লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় তিস্তা নদীতে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজের ৩৪ ঘন্টা পর আরেক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নিখোঁজ তিন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হল।
আজ সোমবার বিকেল সাড়ে চারটা ও গতকাল রোববার দুপুর দেড়টা ও রাত আটটার দিকে উপজেলার সিঙ্গিমারী ধুবনী (হাজীরমোড়) গ্রামের তিস্তা নদী থেকে সফিকুল ইসলাম, ফজলুর রহমান ও আহেদুল ইসলামে লাশ উদ্ধার করেন রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরির দল। এরআগে গত রোববার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার সিঙ্গিমারী ধুবনী (হাজীরমোড়) গ্রামের তিস্তা নদীতে এ নৌকা ডুবির এ ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে নিখোঁজ তিন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে ও রাতে সফিকুল ইসলাম (৪৫) ও ফজলুর রহমান (৬০) লাশ উদ্ধার করা হয়। সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের ধুবনী গ্রামের বাসিন্দা ও সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের বাসিন্দা আহেদুল ইসলাম (৫০)।
হাতীবান্ধা উপজেলা ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানাগেছে, রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ছয় সদস্যর একটি ডুবরীর দল ঘটনাস্থলে নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছেন। এতে নেতৃত্ব দেন লালমনিরহাট জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক ওয়াদুদ হোসেন। তবে রাত আটটার পর উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। পরে আজ সোমবার সকাল থেকে আবারও দুপুর একটা পযর্ন্ত উদ্ধার অভিযান চালায় রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরির দল ।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, গত রোববার লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ নৌকা ডুবির ঘটনা তদন্তের জন্য লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টিএমএ মোমিনকে প্রধান করে লালমনিরহাট জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ- সহকারী পরিচালক ওয়াদুদ হোসেনকে সদস্য করে দুই সদস্যর কমিটি ঘোষণা করেন। পরে আজ সোমবার সকালে ওই তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরির্দশ করে স্থানীয় ও প্রত্যাক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নেন।
স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানাগেছে, গত রোববার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের ধুবনী (হাজীরমোড়) গ্রামের পশ্চিম পাড়ের চেয়ারম্যান ঘাট থেকে তিস্তা নদীতে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে কয়েকজন কৃষি শ্রমিক নদীর ওপারে চরে জমিতে রোপা আমন ধান রোপণের উদ্দেশ্য রওনা দেন । এ সময় তিস্তা নদীর মাঝ বরাবর তাদের বহনকরা নৌকাটির ইঞ্জিন বিকল হলে নদী প্রবল ঢেউয়ে নৌকাটির উল্টে নদীতে ডুবে যায়। এ সময় সঙ্গে থাকা অন্য শ্রমিকরা সাতার কেটে এ পারে আসলেও সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামে বাসিন্দার ওই তিন কৃষি শ্রমিক নদীর পানিতে ডুবে নিখোঁজ হন। পরে খবর পেয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। পরে রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ছয় সদস্যর ডুবরী দল ঘটনাস্থলে এসে নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। উদ্ধারকারীর দল গত রোববার নদীর ভাটির এক-দেড় কিলোমিটার দূর থেকে প্রথমে সফিকুল ইসলাম ও দ্বিতীয় দফায় ফজলুর রহমান ও আজ সোমবার বিকেলে আহেদুল ইসলামের লাশ নদীতে ভেসে উঠে।
স্থানীয় লোকজন জানান, কয়েকদিন থেকে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বন্যায় পরিণত হয়েছে। এতে নদীর প্রচন্ড স্রোত দেখা দিয়েছে। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে একটি ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকায় অতিরিক্ত লোকজন উঠায় নৌকাটি নদীর মাঝ বরাবর প্রচন্ড ডেউয়ে উল্টে যায়। এতে তিন ব্যক্তি নদীতে ডুবে নিখোঁজ হন।
এ সময় নিখোঁজ আহেদুলের বড় ভাই আজিজুল ইসলাম বলেন, আমার ছোট ভাই একজন দিনমজুর। তার পাঁচ ছেলে-মেয়ে রয়েছে। পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী সে। আজ সকালে কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে জানতে পারি সে নদীতে ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন। আজ তার লাশ উদ্ধার করা হল।
হাতীবান্ধা উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক তিস্তা নদীতে নিখোঁজ তিন ব্যক্তির মধ্যে তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আজ ভোর পাচঁটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত রাতে নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারের অভিযান চালানো হয়। এতে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার সম্ভব হয়নি। ফলে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরে বিকেলের দিকে নিখোঁজ ব্যক্তি লাশ নদীর পানি ভেসে উঠায় তা দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজনের নিকট খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টিএমএ মোমিন জানান, তারা আজ তদন্তের জন্য ঘটনাস্থল পরির্দশ করেছেন। এ সময় কী-ভাবে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। তা জানতে স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এই তদন্ত প্রতিবেদন দুই-একদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের নিকট জমা দিবে বলে জানান।
বাবু/জেএম