বুধবার ১৮ জুন ২০২৫ ৪ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ১৮ জুন ২০২৫
স্বাধীনতা পুরস্কার এবং কবি আসাদ চৌধুরী
সাহানা চৌধুরী
প্রকাশ: রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩, ৩:৩১ PM

কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার, লেখক, অনুবাদক, সাংবাদিক, শিক্ষক, টেলিভিশনে অনুষ্ঠান সঞ্চালক এমন নানা গুণে গুণান্বিত হলেও আসাদ চৌধুরীর সর্বাধিক পরিচিতি কবি হিসেবেই। তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় একজন মানবিক মানুষ। কর্মসূত্রে জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে রাজধানী ঢাকা নগরীতে। চষে বেড়িয়েছেন দেশের নানা প্রান্ত। বিদেশেও ঘুরে ঘুরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। যৌবনে যোগ দিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। কাজ করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। জন্মস্থান বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়াকে নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় অনুদান সংগ্রহে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তাঁর শ্রম বৃথা যায়নি। ৩৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মিত হয়েছে। প্রতিবেশীদের মনে সাহস দেওয়ার জন্য তিনি নিজে উলানিয়াতে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এসব তাঁর মানবিক চিন্তার পরিচয়। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে তাঁর হৃদয় তৃপ্ত হয়। তাই কারো উপকার করতে পারলে চোখে মুখে আত্মতৃপ্তির হাসি দেখতে পাই। মানুষের জন্য কাজ করে বিনিময়ে পেয়েছেন ভালোবাসা। বাংলা একাডেমির বইমেলা কিংবা যেকোনো স্থানে কবি আসাদ চৌধুরীকে দেখতে পেলে ভক্তকূল তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য বিশাল লাইন ধরেন। তিনিও কাউকে নিরাশ করেননি। স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে সবার আবদার পূরণ করেন। এক জীবনে এত মানুষের ভালোবাসা পাওয়াটা কম কথা নয়।

কর্মময় জীবনে নানা পুরস্কার পেয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী। রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক পেয়েছেন তিনি। বাংলা একাডেমি পুরস্কারও পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ থেকে যাবেÑ যদি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারটি না পান। বর্তমানে অসুস্থ হয়ে কানাডার টরোন্টো হাসপাতালে শয্যাশয়ী কবি আসাদ চৌধুরী। কবির বড় স্বপ্ন-স্বাধীনতা পুরস্কারটি নিজ হাতে গ্রহণের। আমাদের দেশে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করার রেওয়াজ রয়েছে। আমি মনে করি জীবিত ব্যক্তির হাতে পুরস্কার যে আবেগ তৈরি করে তা মরণোত্তর দিলে পরিবারের সদস্যদের হাতে সেই আবেগ কাজ করে না। জানি না, আসাদ চৌধুরীর স্বপ্নপূরণ হবে কিনা। তবে আমরা আশাবাদীÑ তাঁর কর্মময় জীবনের মূল্যায়ন হয়তো হবে।

এখন আর এপার বাংলা ওপার বাংলায় বাঙালির বসবাস সীমাবদ্ধ নেই। বরং বিশ্বের এমন কোনো রাষ্ট্র পাওয়া যাবে না যেখানে বাঙালি নেই। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য সর্বত্র বাঙালির সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাঁরা শুধু ওইসব এলাকায় বসবাসই করছে না। বরং নিজস্ব কৃষ্টি-কালচার ছড়িয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি বিপুল বাঙালির স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ শেষে নিউইয়র্কে শেষ হয়েছে চার দিনব্যাপী ৩২তম বাংলা বইমেলা। স্থানীয় সময় সোমবার (১৭ জুলাই) মেলার শেষ দিনে নিউইয়র্কের কুইন্সের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে বইপ্রেমী ও সংস্কৃতিমনাদের ঢল নেমেছিল। পুরো দিনের কর্মসূচিতে শিশু-কিশোরদের প্রাধান্য ছিল। শুক্রবার (১৪ জুলাই) ফিতা কেটে বইমেলার উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) সিতারা বেগম, বীর প্রতীক।

বইমেলার ৩২তম আসরে বাংলাদেশ থেকে ২৫টি প্রকাশনা সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের দশটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। আগের মেলার তুলনায় এবার বেশি স্টল ছিল। বিক্রিও হয়েছে প্রায় এক লাখ ডলার। এবার মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী। সোমবার মেলার শেষ দিনটি রাখা হয়েছিল শিশু কিশোরদের জন্য। তাদের আয়োজনে এবং অংশগ্রহণে ছিল নাচ-গান, কবিতা আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারতের কলকাতা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে লেখক-পাঠকেরা যোগ দিয়েছেন বইমেলায়। চারদিনের এই মেলা হয়ে উঠেছিল বিশ্ব বাঙালির মিলনমেলা। এ ধরনের একটা আয়োজন করতে পেরে আয়োজকরা খুশি।

আগেই বলেছি, আসাদ চৌধুরী অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু বিদেশের মাটিতে তাঁর এবার মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়াটা আমাদের মধ্যে অনেক আবেগ তৈরি করেছে। রোববার মেলার ৩য় দিন সন্ধ্যায় কবি আসাদ চৌধুরীর পক্ষে ক্রেস্ট ও তিন হাজার ডলার প্রাইজমানি গ্রহণ করি আমি ও আমাদের কন্যা নুসরাত জাহান চৌধুরী। পুরস্কারটি তুলে দেন জিএফবি গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক ভূঁইয়া । এই পুরস্কারটি কবি আসাদ চৌধুরী নিজ হাতে গ্রহণ করতে পারলে নিশ্চয় অনেক আনন্দ পেতেন। কিন্তু শয্যাশয়ী কবির পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। জানি না, স্বাধীনতা পুরস্কার তিনি নিজ হাতে গ্রহণের সুযোগ পাবেন কিনা। এটাও জানি না কর্তৃপক্ষ আর কত সময় গড়ালে তার নামটি বিবেচনায় নেবেন। যারা স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরা সবাই গুণী ও সম্মানিত মানুষ। তবে আসাদ চৌধুরীর এ পুরস্কার আরও আগেই পাওয়া উচিত ছিল। কেন পেলেন না, তা নীতিনির্ধারকরাই ভালো জানেন।

লেখক : কবি আসাদ চৌধুরীর সহধর্মিণী

বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত