বাংলাদেশ এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য) অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে অগ্রদূত হিসেবে আবির্ভূত হয় (খুব ভালো করা ৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৮তম)। বাংলাদেশ, বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে জেন্ডার সমতা, শিশু ও পাঁচ বছর বয়সের নিচে শিশুদের মৃত্যুহার কমানো, মাতৃমৃত্যুহার কমানো, টিকা গ্রহণের পরিধি বাড়ানো ও সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব কমানোর ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। আটটি অভীষ্টের মধ্যে অভীষ্ট ৭ (পরিবেশগত টেকসইতা) বাদ দিলে দেশে অর্জনের অন্যান্য অভীষ্টের সব কয়টিই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সমর্থ হয়। ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এমডিজি (২০০১-২০১৫) অর্জনে উন্নয়নশীল বিশ্বের অন্যতম বড় সাফল্যগাথা।
বাংলাদেশ দারিদ্র্যের নিকৃষ্ট সূচকগুলো পুরোপুরি উল্টে দিয়েছে। ২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুহার ৪০ শতাংশ কমেছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে ২০১৫—এই সময়ে দারিদ্র্য অর্ধেক কমেছে। ২০১৩ সালের জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে এমডিজি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্য যে ১৮টি দেশের কথা বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম।
এমডিজির ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৩টি দেশের প্রতিনিধিসহ ১৩৬ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুমোদন করেন। বাংলাদেশ শুরু থেকেই এসডিজি প্রণয়ন ও প্রক্রিয়ায় নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিল। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ১১টি অভীষ্ট নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ প্রণীত একটি প্রস্তাব জাতিসংঘে প্রেরণ করে। ২০১৫ সালের এসডিজি যখন চূড়ান্ত হয়, তখন দেখা যায় ১১টির মধ্যে ১০টি অভীষ্ট জাতিসংঘে গৃহীত ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ১০টির সঙ্গে মিলে যায় এবং বাকি একটি অভীষ্ট অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়।
এসডিজি শুরুর সময়কাল ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের সময়কাল একই হওয়ায় এসডিজির অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন দলিলের লক্ষ্য ও সূচকগুলোতে তা সমন্বিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে সরকার এসডিজি বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এসডিজি বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনা কমিটি গঠন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সমান পদমর্যাদার মুখ্য সমন্বয়ক এসডিজি পদ সৃষ্টি, এসডিজির অভীষ্ট, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কর্তৃক লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে ম্যাপিং, তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি বিশ্লেষণ, এসডিজি অর্থায়ন কৌশল : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট প্রণয়ন, জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি পর্যালোচনার জন্য জাতীয় এসডিজি পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামো, হোল অব সোসাইটি অ্যাপ্রচ গ্রহণ, এটুআই কর্তৃক এসডিজি তদারকির জন্য একটি ড্যাশবোর্ড তৈরি, যা এসডিজি ট্র্যাকার নামে পরিচিত, সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ, ব্যবসায়ী সংগঠন, এনজিও, উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বয়ে জাতীয়ভাবে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) কর্তৃক এসডিজি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা সম্মেলন আয়োজন, এসডিজি স্থানীয়করণের উদ্যোগ গ্রহণসহ অন্যান্য পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়নে প্রথম সাত বছরে (২০১৬-২০২২) মোটামুটি সাফল্য লাভ করে।
এই প্রেক্ষাপটে ২০১৬-২০ সালের পাঁচ বছরে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করায় জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় ও সমর্থনে সৃষ্ট ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক’ কর্তৃক ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এসডিজি প্রগ্রেস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক হলো জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যার মূল লক্ষ্যই হলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসডিজি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সাসটেইনেবিলিটির অধ্যাপক জেফ্রি স্যাকস এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।
অধ্যাপক জেফ্রি স্যাকস টেকসই উন্নয়নের এক উজ্জ্বল প্রবক্তা, জাতিসংঘের সিনিয়র উপদেষ্টা, বেস্ট সেলার লেখক এবং বর্তমান জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা। তাঁর নেতৃত্বে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক কর্তৃক বৈশ্বিক এসডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। প্রতিবেদনে বৈশ্বিক অগ্রগতির সঙ্গে বিভিন্ন দেশের এসডিজি অগ্রগতির ভিত্তিতে র্যাংকিং করা হয়। ২০১৬ সালের শেষে যখন প্রথম উন্নয়নশীল দেশসহ বৈশ্বিক অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, তখন ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের র্যাংকিং ছিল ১১৮। ২০২৩ সালে প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের র্যাংকিং ১৬৬টি দেশের মধ্যে ১০১তম। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে র্যাংকিংয়ে এখন বাংলাদেশের চেয়ে ভুটান (৬১), মালদ্বীপ (৬৮), শ্রীলঙ্কা (৮৩) ও নেপাল (৯৯) এগিয়ে রয়েছে।
এবার আসা যাক অভীষ্টগুলোর বিপরীতে দেশীয় অর্জন অগ্রগতি কতটুকু। এসডিজি ড্যাশবোর্ড থেকে দেখা যাচ্ছে, আটটি অভীষ্টের ক্ষেত্রে এখনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলো হলো অভীষ্ট ৩ সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, অভীষ্ট ৬ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, অভীষ্ট ৭ সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি, অভীষ্ট ১১ টেকসই নগর ও জনপদ, অভীষ্ট ১৪ জলজ জীবন, অভীষ্ট ১৫ স্থলজ জীবন, অভীষ্ট ১৬ শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং অভীষ্ট ১৭ অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারি। গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে আরো ছয়টি অভীষ্টে। অভীষ্ট ১ দারিদ্র্য বিলোপ, অভীষ্ট ২ ক্ষুধা মুক্তি, অভীষ্ট ৫ জেন্ডার সমতা, অভীষ্ট ৮ শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অভীষ্ট ৯ শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো, অভীষ্ট ১০ অসমতা হ্রাস। বাকিগুলোর মধ্যে একটিতে (অভীষ্ট ৪ গুণগত শিক্ষা) চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং দুটি অভীষ্টে (অভীষ্ট ১২ পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন, অভীষ্ট ১৩ জলবায়ু কার্যক্রম) অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে অর্জনের ধারাবাহিকতায় রয়েছে দুটি অভীষ্ট অভীষ্ট ৪ (গুণগত শিক্ষা) ও অভীষ্ট ১২। মাঝারি মানের অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে ছয়টি অভীষ্ট; অভীষ্ট ১ (দারিদ্র্য বিলোপ), অভীষ্ট ২ (ক্ষুধা মুক্তি), অভীষ্ট ৩ (সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ), অভীষ্ট ৬ (নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন), অভীষ্ট ৭ (সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি), অভীষ্ট ৯ (শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো)। অগ্রগতি স্থিতি অবস্থায় রয়েছে পাঁচটি অভীষ্টে। অভীষ্ট ৫ (জেন্ডার সমতা), অভীষ্ট ৮ (শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি), অভীষ্ট ১১ (টেকসই নগর ও জনপদ), অভীষ্ট ১৩ (জলবায়ু কার্যক্রম), অভীষ্ট ১৭ (অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারি)। সূচকগুলোর ক্ষেত্রে অভীষ্ট ২ (ক্ষুধা মুক্তি), অভীষ্ট ৩ (সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ)-এর ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি বেশি। যেমন অভীষ্ট ২ অপুষ্টি ও খর্বাকৃতি কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি বেশ দৃশ্যমান। আবার অভীষ্ট ৩-এর ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুহার, নবজাতকের মৃত্যুহার, পাঁচ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আগে থেকেই অনেক অগ্রগতি লাভ করেছে। অভীষ্ট ১৬-তে অগ্রগতি কম। শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক বেশি মনোযোগের প্রয়োজন রয়েছে। উপাত্তপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় ধরনের সাফল্য লাভ করেছে। প্রতিবেদনের হিসাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উপাত্তের ঘাটতি এখন মাত্র ২ শতাংশ। প্রথম দিকে উপাত্ত ঘাটতি ছিল তিন ভাগের এক ভাগ।
এসডিজির অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা কোথায় আছিবৈশ্বিক এসডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৩-এ বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, যদিও তা লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ছিল না। ২০২০ সালে করোনা আবির্ভাবের পর থেকে বিশ্বব্যাপী এসডিজি অগ্রগতি থেমে যায়। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংক্রান্ত অভীষ্ট; যেমন—অভীষ্ট ১৩ (জলবায়ু কার্যক্রম), অভীষ্ট ১৪ (জলজ জীবন), অভীষ্ট ১৫ (স্থলজ জীবন)-এর ক্ষেত্রে কার্যত অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এসডিজি প্রণোদনার অর্থায়নের ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের দেশ ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলার সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। আঞ্চলিকভাবে এসডিজি অগ্রগতির ক্ষেত্রে জাতিসংঘের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা বেশ হতাশাজনক। এই অঞ্চলের ক্ষেত্রে ১৭টি অভীষ্টের অগ্রগতি খুবই মন্থর। ২০১৭ সালে ৪.৪ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে অগ্রগতি মাত্র ১৪.৪ শতাংশে (অথচ দরকার ছিল ৫০ শতাংশ) দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এসডিজি অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা অঞ্চলগতভাবে পিছিয়ে আছি। বর্তমানে যে হারে অগ্রগতি হচ্ছে, তাতে বর্তমান ধারায় পুরোপুরি এসডিজি অর্জন করতে আরো ৪২ বছর সময় লাগবে (২০১৬-২০৩০ সময়সীমা)।
বাংলাদেশও ধারাবাহিকভাবে এসডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামে এসডিজি সম্পর্কিত ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ উপস্থাপন করে। এর পরে ২০১৮ সালে জিইডি থেকে প্রথম এসডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। ২০২০ ও সর্বশেষ ২০২২ সালের বাংলাদেশের এসডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে। দুই বছর পর পর করার উদ্দেশ্য ছিল, প্রতিবছর হালনাগাদ উপাত্ত পাওয়া যায় না। তা ছাড়া জাতীয় এসডিজি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা সম্মেলন, যেটি প্রতি দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়, তার সঙ্গে সংগতি রেখে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সর্বশেষ প্রতিবেদনে যে বিষয়টি উঠে এসেছে, সেটি হলো সারা বিশ্বের মতো করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত এসডিজি বাস্তবায়নকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ মোটামুটি সব অভীষ্টে ২০১৬ সাল থেকে অগ্রগতি সাধন করেছে, যদিও কভিডের কারণে অনেক কিছু থমকে ছিল।
বাংলাদেশ যে দুটি অভীষ্টে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে, সেগুলো হলো দারিদ্র্য বিলোপ ও গুণগত শিক্ষা। অন্য যেসব অভীষ্টে ভালো করছে, সেগুলো হলো ক্ষুধা মুক্তি, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, জেন্ডার সমতা, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন, সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি, শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো, টেকসই নগর ও জনপদ। যেসব অভীষ্টে বেশি নজর দিতে হবে, সেগুলো হলো শোভন কাজ সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জলজ জীবন রক্ষা এবং শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের সামনে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেটি হলো ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণের ফলে বাণিজ্য সুবিধায় যে অভিঘাত আসবে, সেটি মোকাবেলা করা। একদিকে এসডিজি বাস্তবায়ন, অন্যদিকে ২০২৬ সালের পর থেকে বাণিজ্য, বিশেষ করে রপ্তানিতে অনিশ্চয়তা, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তা ছাড়া বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা; যেমন—যুদ্ধবিগ্রহ, উন্নত দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদের হার, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মহামারি ও রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক কিছুই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সুতরাং বাংলাদেশের অগ্রগতি শুধু বাংলাদেশের হাতে নয়, বরং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে আরো বেশি উদ্ভাবনী সৃজনশীলতা ও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে, বিশেষত জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্নীতিমুক্ত সেবা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, উচ্চমূল্য রপ্তানি পণ্য সৃষ্টি, রপ্তানি বৈচিত্র্যায়ন এবং সর্বোপরি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে যোগাযোগ ও অংশীদারি বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্ডা এসডিজি অর্জনে সাফল্য বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজিকে পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়ে এসডিজি বাস্তবায়ন প্রাধান্য পেয়েছে। ফলে এর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হয়েছে কভিডের আগ পর্যন্ত। এখন কভিড নেই। তাই এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনে কার্যকর স্থানীয়করণের পাশাপাশি দরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়ন।
লেখক : সামষ্টিক পরিকল্পনাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
বাবু/এ.এস