শনিবার ২১ জুন ২০২৫ ৭ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ২১ জুন ২০২৫
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছে বিএনপি
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩, ১:০৮ PM

বাংলাদেশের দুটি স্বনামধন্য টিভি চ্যানেল সময় টিভি ও একাত্তর টিভি বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কারন বিএনপি কখনো গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিল না। বিএনপি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে চিরাচরিত মিথ্যাচার ও দূরভিসন্ধিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছে। ক্ষমতায় থেকে বিএনপি প্রথম একুশে টিভিকে বন্ধ করেছিল। বিএনপির গণমাধ্যম বর্জনের ডাক প্রমাণ করে যদি বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে এদেশের গণমাধ্যমের উপর তারা হস্তক্ষেপ করবে। মানুষের ও গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতায় সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে বিএনপি।

২০০০ সালের ১৪ই এপ্রিল বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দিন। সত্য-সুন্দর ও ন্যায়ের অঙ্গীকারে পথ চলা শুরু করে দেশের প্রথম বেসরকারি টেরিস্ট্রিরিয়াল টেলিভিশন চ্যানেল ‘একুশে’। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত। তারা প্রগতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ২৯ আগস্ট ২০০২ সাল গণমাধ্যমের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আইনি মারপ্যাঁচ ও রাজনৈতিক কূটচালে বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশের প্রথম বেসরকারি টেরিস্ট্রিয়াল চ্যানেল একুশে টেলিভিশন।

বিএনপি-জামায়ত অশুভ জোট শাসনামলে বিবিসির সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালুসহ ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল। ওই সময়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫০০টিরও বেশি মামলা এবং ৮০০ হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি বিট্রিশ টেলিভিশন চ্যানেল ৪-এর সাংবাদিক লিওপোল্ড ব্রুনো সরেন্তিনো, জেইবা মালিকসহ কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালানো হয়েছিল। জঙ্গি হামলার ঘটনায় উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত অনেক সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছিল। যার কারণে রিপোর্টার উইদাউট বর্ডার্স বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশকে সাংবাদিকদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল।

টিভি চ্যানেল গুলোর টকশোসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার ও অপপ্রচার প্রতিদিন সম্প্রারিত হচ্ছে। কিন্তু সেই টকশোতে যখন লন্ডনে পলাতক দূর্নীতিবাজ, খুনি তারেক জিয়াকে নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তখন বিএনপি সেটাকে মনে করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তারা সেটিকে বর্জন করে। আর তা থেকে প্রমাণিত যে বিএনপি স্বাধীন গণমাধ্যমে বিশ্বাসী না।

বিএনপি বাংলাদেশের একটি রেডিমেড দল। এক গাছের ছাল আরেক গাছের বাকল দিয়ে কিছু আদর্শচ্যুত বাংলাদেশবিরোধী দলছুট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে। পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিএনপি গঠিত হয়।পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই দলটি গঠিত হয়েছিল। বন্দুকের নলের মুখে গণমাধ্যমকর্মীদের জিম্মি করে রেডিও-টেলিভিশন ভাষণে নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি কখনো গণমাধ্যমে মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষে ছিল না।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-এর সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার মতো স্পর্শকাতর বিষয় ব্যতীত অন্যসব বিষয়ে অবাধ তথ্য প্রবাহসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ এরপর রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করে এবং তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। যুগান্তকারী এ উদ্যোগের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে গণমাধ্যম কর্মীসহ আপামর জনসাধারণের জন্য চাহিদা অনুযায়ী তথ্য পাওয়ার একটি আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি-বেসরকারি অফিসসমূহ আইনে বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে সাংবাদিকদের চাহিদা মোতাবেক তথ্য দিতে বাধ্য। এভাবে আইনটি এসব অফিসের কার্যক্রম পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

সাংবাদিকদের কল্যাণে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা, করোনাকালে সাংবাদিকদের কোটি কোটি টাকার সহায়তা দেওয়া। এগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয়েছে। বর্তমানে গণমাধ্যম অত্যন্ত স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। মাত্র ১০টি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারে ছিল, এখন ৩৮টি। সাড়ে চারশ দৈনিক পত্রিকা ছিল, এখন সাড়ে বারোশ। বেসরকারি রেডিও ছিলই না, এখন অনেকগুলো এফএম আর কমিউনিটি রেডিও আছে। হাতে গোনা কয়েকটি অনলাইন ছিল, এখন কয়েক হাজারে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে এবং তা জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণেই। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার আকাশ উন্মুক্ত হয়েছে। এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুধু সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নয়, বেসরকারি টেলিভিশনও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে বাণিজ্যিক সম্প্রচারের সুবিধা ভোগ করছে।

সংবাদপত্রের মালিকগণ বিদেশ থেকে বিনাশুল্কে নিউজপ্রিন্ট ও অন্য প্রিন্টিংসামগ্রী আমদানি করতে পারেন। অন্যদিকে তারা তাদের সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী বেতন-ভাতা দিয়ে থাকেন। সরকার, সাংবাদিক ও মালিক প্রতিনিধিদের নিয়ে ইতোমধ্যে ৯ম ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সরকার বেসরকারি টিভি চ্যানেলসমূহের সাংবাদিক, ক্যামরাপার্সন ও অন্য সহযোগী কর্মীদের ওয়েজ বোর্ডে অন্তর্ভুক্তির কথা ভাবছে। বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্প্রচার বন্ধ করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিজিটাল কনটেন্ট আপলোডের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) সার্ভিস সংযোগ উচ্ছেদ স্থানীয় গণমাধ্যমকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখছে। সরকারি বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্রও তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করছে।

বর্তমানে হাজার হাজার সাংবাদিক গণমাধ্যমে কাজ করছে। আজকে যারা বিদগ্ধ সাংবাদিক তারা তাদের এই ট্যালেন্ট প্রকাশ করার সুযোগ পেতেন না যদি গণমাধ্যমের এ রকম ব্যাপক বিস্তৃতি না ঘটতো। পৃথিবীর আশপাশের দেশে গণমাধ্যমের এ রকম বিস্তৃতি ঘটেনি এবং এ রকম অবাধ স্বাধীনতার মধ্যে কাজ করে না। কয়েকটি ছাড়া প্রায় সব টেলিভিশন আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই অনুমোদন পেয়েছে। আর সব টেলিভিশনে প্রতিদিন টক শো’তে সরকারের সমালোচনা হয়। সংবাদ যখন প্রকাশ করা হয় তখনও সরকারের ব্যাপক আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার কখনো হস্তক্ষেপ করে না। কারণ বর্তমান সরকার মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাস করে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে।

অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী দল বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বাধীনতার নেতৃত্বাদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো এবং জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তি মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সব সময় বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার করে আসছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এদেশে গণমাধ্যমের বিকাশ, উৎকর্ষ সাধন এবং সাংবাদিকদের কল্যাণ ও স্বার্থ সংরক্ষণে কখনো কোনো কাজ করেনি বরং তারা গণমাধ্যমের বিকাশ রোধে এবং সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।

লেখক : ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত