বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫ ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫
কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না থাকায় সেচের পানিতে আমন আবাদে ব‍্যস্ত কৃষকরা
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩, ৬:১৪ PM
জমিতে হাল চাষ, সেচপানি দিয়ে জমি প্রস্তুতসহ চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছে। রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চলতি মৌসুমের আমন ধান আবাদের কাজ শুরু করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী আখাউড়া উপজেলার কৃষকরা।

এদিকে গত বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ও বিক্রিতে ভাল দাম পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা খুবই খুশি। তাই তারা আমন ধান আবাদে মাঠে নেমে কাজ করছেন। বোরোর চাইতে চলতি আমন আবাদে জমিতে ফলন ভাল করতে সর্বাত্তক চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান আবাদ শুরু হয়েছে। ফলন বৃদ্ধিতে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদে উৎসাহিত করছি। তিনি আরও বলেন গত বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হয়েছে। সেই আশা থেকে চাষিরা আমন রোপণ শুরু করছেন। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকুলে এবং সেচ ব্যবস্থা ঠিকমতো ভাল থাকলে আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

একাধিক কৃষক জানান, বিগত বছরগুলোতে আষাঢ় মাসের শুরুতে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টির পানি জমিতে বেধে রেখে চাষাবাদ করা হতো। নদী-নালা, খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি দেখা যেতো। কিন্তু এ বছর রয়েছে অনেটাই উল্টো। আষাঢ়- শ্রাবণ শেষ কিন্তু কাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা নাই। তাই কিছুটা বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি সেচ দিয়ে ধান রোপণ করছেন।

সরেজমিনে পৌর এলাকায় তারাগন, দেবগ্রাম, নারায়নপুর, উপজেলার নুরপুর,হীরাপুর, উমেদপুর, ধাতুরপহেলাসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় কৃষকরা আমন ধান আবাদে জমি প্রস্তুত, চারা উত্তোলন ও রোপনের কাজে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে আমন চাষ আবাদে শ্রমিক সংকট থাকায় মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। পৌর শহরের তারাগন এলাকার কৃষক মো. জমির খাঁন বলেন, চলতি মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করা হবে। ইতিমধ্যে তিনি ৩ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। বাকি জমিগুলো আবাদ করতে প্রস্তুতি শেষ করেছেন। তিনি বলেন বর্তমানে এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ দিতে ৫শ টাকা খরচ লাগছে। সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের চাষাবাদের খরচ কয়েকগুন বেড়ে গেছে। তবে উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদে ফলন ভালো ও ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় লাভবান হওয়ার আশা করছেন। কৃষক মো. সিরাজ মিয়া বলেন এবার কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় উল্লেখযোগ্য পানি হয়নি। জমিতে প্রচুর পরিমাণ আগাছা হয়েছে। সেজন্য পানির প্রয়োজন হওয়ায় সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে।

কৃষক মো. লোকমান মিয়া বলেন জানায়, গত মৌসুমে তিনি ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করে ভালো তিনি ফলন পেয়েছেন। তাই এ মৌসুমে তিনি ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করতে জমি প্রস্তুত করেছেন। তবে সার, মজুরি, কিটনাশকসহ কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে ধান আবাদ নিয়ে তিনি অনেকেটাই দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে ২ বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা লাগানো হয়েছে বলে জানায়। তবে শেষ পযর্ন্ত যদি ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। কৃষক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, যেভাবে চালের দাম বাড়ে সে অনুযায়ী ধানের দাম বাড়ে না। ধানের দাম বৃদ্ধি পেলে কৃষকরা লাভবান হতো এবং উৎসাহ নিয়ে ধান আবাদের পরিধি বাড়াতো। গত আমন মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করা হয়। এবার ৮ বিঘা জমিতে চাষ করা হবে বলে জানায়। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জমিতে আগাছা হয়েছে বেশি। ওইসব পরিস্কার করতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। তাছাড়া জমিতে পানি না থাকায় মেশিনের সাহায্যে পানির ব্যবস্থা করে জমি প্রস্তুত করে আবাদ করতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। যদি ফলন ভালো না হয় তাহলে অনেক লোকশান গুনতে হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন আবাদে প্রায় ৪ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যা গত বছরের চাইতে ২শ হেক্টর বেশি রয়েছে। রোপনকৃত জমির মধ্যে উন্নত ফলনশীল জাতের ব্রি-৮৫,৮৭, ৯৩,৯৪, ৯৫ ধান রয়েছে। এই মৌসুমে আমন ধান রোপণের জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে ৬শত কৃষককে ৫ কেজি বীজ ধান, ১০ কেজি এমওপি এবং ১০ কেজি ডিওপি সার প্রণোদনা দেওয়া হয়।

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত