মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০২৫ ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০২৫
গোদাগাড়ীর সাহাব্দীপুর এএইচ ইকো ব্রিকস
‘এভাটা তুমি কার’
সানোয়ার আরিফ, রাজশাহী
প্রকাশ: রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৩:১৭ PM
কৃষকের জমি জবরদখল করে ইটভাটা গড়ে তুলেছেন রাজশাহী আওয়ামী লীগ নেতা মুনজুর রহমান পিটার। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাব্দীপুর এলাকায় প্রায় এক বছর ধরে এএইচ ইকো ব্রিকস কারখানা চালাচ্ছেন তিনি।

জমির মালিকদের অভিযোগ, পিটার তাদের কাছে জমি ইজারা নেননি। কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই তিনি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক ঘেঁসা এই জমিতে পুকুরও খনন করেছেন তিনি। ক্ষমতাশীন হওয়ায় বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি জমির মালিকরা। উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালে উপজেলার সাব্দীপুর ভাটোপাড়া এলাকার বাসিন্দা আয়নাল হকের পরিবারের ২০ দশমিক ৩ শতাংশ জমি ইজারা নেন রাজশাহী নগরীর জিএম কেমিক্যালের মালিক গোলাম আরিফ জিয়া। বছরে ১১ হাজার টাকা চুক্তিতে জমি লিজ নেন ২০২৮ সাল পর্যন্ত। 

লিজ নেন আরও কয়েকজন কৃষকের জমি। সেখানে তিনি নিজের নামে ‘জিয়া ইকো ব্রিকস’ ইটভাটা গড়ে তোলেন। কিন্তু কারিগরি ও অবকাঠামোগত জটিলতায় ২০১৯ সালের দিকে এসে ইটভাটা বন্ধ হয়ে যায়।

জমির মালিকপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল উপজেলা ভূমি অফিস সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ইটভাটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পায়। ওই বছরই জমি মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে ভূমি অফিসকে জানান ভাটা মালিক। ফলে বাণিজ্যিক শ্রেণি কাটিয়ে কৃষি জমির খাজনা নিতে শুরু করে ভূমি দপ্তর।

তবে জমির মালিকদের দাবি, কাগজে কলমে জিয়া জমি ছেড়ে দিলেও বাস্তবে ছেড়ে যাননি। উল্টো সাইনবোর্ড বদলে ‘জিয়া ইকো ব্রিকস’ হয়ে যায় ‘এএইচ ইকো ব্রিকস’। 

সরেজমিনে গিয়ে  এএইচ ইকো ব্রিকস ভাটা চালু অবস্থায় পাওয়া গেছে। নীতিমালা উপেক্ষা করে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছাকাছি এই ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এসময় ইটভাটা পরিচালনা সংক্রান্ত বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী। 

তবে ববস্থাপক স্বীকার করেন, তারা বছরখানেক ধরে ইটভাটা চালাচ্ছেন। স্থানীয় কৃষি জমির মাটি আসছে ভাটায়। পদ্মার পলি মাটিও আসছে। তারা কয়লায় ইট পোড়াচ্ছেন। এর চেয়ে বেশি তথ্য দিতে অপরাগতা জানান তিনি।  

এদিকে, জমির মালিক আয়নাল হকের অভিযোগ,  তিনি মুনজুর রহমান পিটারকে জমি ইজারা দেননি। জমি ইজারা নিয়েছেন গোলাম আরিফ জিয়া। তার ভাটা বন্ধ হয়েছে। ফলে শর্ত অনুযায়ী, জমি তাকে ফিরিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু কাগজে-কলমে জমি ছাড়লেও বাস্তবে দখলে রেখেছেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি ইজারার অর্থ পাননি। উল্টো জিয়া আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করছেন। দখলদাররা ক্ষমতাশীন দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় প্রতিকার মিলছে না।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার গোলাম আরিফ জিয়া দাবি করেন, জিয়া ইকো ব্রিকস কখনোই পরিত্যক্ত হয়নি। সেটি এখনও চলমান। মালিকানাও পরিবর্তন হয়নি। ২০২৮ সাল পর্যন্ত চুক্তি থাকায় অন্য একজনকে দিয়ে তিনি ভাটা চালাচ্ছেন। প্রতিবেদক জানতে চাইলে, জিয়া ইকো ব্রিকস নামের ইটভাটাটির নাম পরিবর্তন করে এখন এএইচ ইকো ব্রিকস নাম কেন? তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।

জিয়া উল্টো অভিযোগ করেন, চুক্তিতে থাকা সত্ত্বেও মালিকপক্ষ ভাটার জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে তারা নতুন বছরের ইজারার অর্থ পরিশোধ করেননি।  এর প্রেক্ষিতে উচ্ছেদের হুমকি আসছে। সেখানে মেশিনপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল আছে। সেগুলো ব্যাংকে দায়বদ্ধ। সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় তিনি মামলা দায়ের করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এএইচ ইকো ব্রিকস এর সত্ত্বাধিকারী মুনজুর রহমান পিটার বলেন, ভাটার জায়গাটি গোলাম আরিফ জিয়ার নামে লিজ নেয়া। তিনি কেবল ‘এএইচ ইকো ব্রিকস’ নামে উৎপাদন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ভাটা পরিচালনা সংক্রান্ত পরিবেশগত ছাড়পত্রসহ যাবতীয় নাথিপত্র আছে তার। 

তবে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের খোঁজে ‘এএইচ ইকো ব্রিকস’ এর নামে ছাড়পত্র নেয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এএইচ ইকো ব্রিকস নামে ছাড়পত্রের জন্য অনলাইনে আবেদন নেই। কোনো ছাতপত্র ইস্যুও হয়নি।

তবে ২০১৩ সালে জিগজ্যাগ ভাটা হিসেবে জিয়া ইকো ব্রিকস পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়। ২০১৬ সালে এসে নতুন করে ছাড়পত্র নবায়নের আবেদন আসে। ২০১৭ সালে ছাড়পত্র নবায়ন পায় ইটভাটাটি। এর মেয়াদ ছিল ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এরপর থেকে ছাড়পত্র নবায়ন হয়নি। ২০২০ সালে এসে আবারো ছাড়পত্র নবায়নের আবেদন করেন ভাটা মালিক। কিন্তু ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকায় ছাড়পত্র নবায়ন পায়নি জিয়া ইকো ব্রিকস।

এদিকে অনুসন্ধানে নেমে দেখাগেছে, এএইচ ইকো ব্রিকস নামের ইটভাটার কোন তালিকায় নেই। রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলা প্রশাসন (ইউ এনও)অফিসের তালিকায়। এবং তার ইটভাটার যে, ইট বিক্রয় করে ক্রেতাদের কাছে ক্যাশমেমোতে তাতে শুধুই লেখা থাকে ইটের সংখ্যা, কিন্তু টাকার পরিমাণ লিখেন না। তাতেই নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায়। যে সরকারকে বড় ধরনের কর ফাঁকি দিচ্ছেন। এবং কর ফাঁকি দেওয়ার অভিনব কৌশল অবলম্বন করছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জিয়া বলছে ইটভাটাটি আমার, আবার পিটার বলছে, ইটভাটা আমার। এবং এলাকাবাসী বলছে এই ইটভাটা কাহারই নয়। কারণ জানতে চাইলে, বলেন উপজেলা প্রশাসন, এই ইটভাটারে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কৃষকের জমি কৃষককে ফিরে দিতে বলেছে। আওয়ামী লীগ নেতা পিটার জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে তাহলে এই ইটভাটাটি কার? ইটভাটা তুমি কার? জনমনে উঠেছে এমন প্রশ্ন।

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত