বুধবার ২ জুলাই ২০২৫ ১৮ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ২ জুলাই ২০২৫
ডিসি’র আত্মীয়ের নামে এসআই করলেন ফুটপাত দখল
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৩:৪৫ PM আপডেট: ১৩.০৯.২০২৩ ৫:৪৮ PM
চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম অলংকার মোড়ে এক উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি)’র প্রবাস ফেরত বেকার আত্মীয়কে ফুটপাথে ঠাঁয় করে দিতে হকারের দোকান দখলের অভিযোগ উঠেছে ঐ এলাকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে হকার নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের অডিও রেকর্ড এসেছে বাংলাদেশ বুলেটিনের কাছে, অডিও রেকর্ডটির সত্যতা স্বীকার করে গোপনে এই রেকর্ড ধারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন পাহাড়তলী থানাধীন অলংকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সুমিত বড়ুয়া। 

হকারদের অভিযোগ, গত ৯ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে কয়েকজন লোক দিয়ে অলংকার মোড়ের বন্দর বিতান মার্কেটের সামনে রুবেল নামের এক ফল বিক্রয়ের ভ্রাম্যমাণ দোকান দখলে নিয়ে উপ-কমিশনার (ডিসি) এর আত্মীয়ের জন্য চৌকি বসিয়ে দেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমিত বড়ুয়া।  

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী হকার রুবেল জানান, “আমি দিনে আনি দিনে খাই। এই ফুটপাতে দীর্ঘ ৭ বছর যাবত ফল বিক্রি করে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের ভরন পোষণ করি। গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে এসে দেখি আমার সেই দোকানটি সরিয়ে নতুন আরেকটি দোকান দেওয়া হয়েছে। পরে জানতে পারলাম ফাড়ির ইনচার্জ সুমিত স্যার লোকজন দিয়ে আমার জিনিসপত্র সরিয়ে নতুন চৌকি এনে জায়গাটি দখল করেছেন। আমি সুমিত স্যারের কাছে গেলে তিনি বলেন ডিসি ওয়েস্ট স্যারের আত্মীয়ের জন্য দোকানটি দখলে নেওয়া হয়েছে। এসময় সুমিত স্যার বলেন, ফুটপাতের জায়গাকে কেউ নিজের জায়গা বলার অধিকার নেই। ‘আমার জায়গা’ এই শব্দটা যদি উচ্চারণ করো তাহলে কিন্তু সবার ক্ষতি হবে, ৫ মিনিটও লাগবে না।”

হকার নেতাদের সাথে এসআই সুমিত বড়ুয়ার একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকের অভিও রেকর্ড এসেছে বাংলাদেশ বুলেটিনের হাতে। সেই রেকর্ডে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “কথা বলবা একজন উত্তর দিব আমি। কে বলবা? আমি সমিতি করছি মূলত...এই তোমাদের একটা ১৭ জনের সমিতি আছে না? সমিতিটা করছি মূলত হকারদের কোন হেডেক মাথায় না নেয়ার জন্য। দোকান যেন আমার কোন দিন তোলাও না লাগে বসানোও না লাগে।”

৩৪ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের সেই অডিও রেকর্ডে এক পর্যায়ে বলতে শোনা যায়, তোমাদেরকে আগেও বলছিলাম। ডিসি স্যারের আত্মীয় বিদেশ থেকে এসে বেকার আছেন। স্যার বলছে তাকে একটা দোকান ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। স্যার বলছে দেখতো তাকে একটা জায়গা ব্যবস্থা করে দাও যাতে প্রতিদিন ৫০০ টাকা উপার্জন করতে পারে। তোমাদের হকারের নেতারা আমাকে একটা জায়গাও ঠিক করে দিতে পারে নি। স্যার যদি ক্ষিপ্ত হয় তাহলে কিন্তু সব হকারকে উচ্ছেদের মুখোমুখি হতে হবে।” সেই অডিও রেকর্ডে বলা হচ্ছে, “আমি এই পর্যন্ত তাকে (ডিসির আত্মীয়) ৭ টা জায়গা দেখাইছি। একবার জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সেদিকে দেখাইছি সে তাৎক্ষণিক ডিসি স্যারকে ফোন দিয়া বলে এটা এমন হইছে, সেমন হইছে।..... একদিন সে ডিসি স্যারকে এখানে নিয়ে আসছে৷ একটা জায়গা পছন্দ করছে সেই জায়গাটা কেউ বসে না৷ ডিসি স্যার আমাকে বলে তুমি একটা জায়গা দিতে পারো না, অথচ এখানে লাখ লাখ টাকা কামাই করো।..... আমি খুব চাপে আছি, না হয় আমাকে বদলি করে দেবে৷ পরে আমি বাধ্য হয়ে জায়গার ছবি তুলে স্যারকে পাঠাইছি। লোকটা (ডিসির আত্মীয়) যে নাদুস নুদুস উনি ফুটপাথে দোকান করবে বলে আমার মনে হয় না৷ কিছুটা ধৈর্য ধর জায়গাটা আবার পাবে।

প্রতিবেদন এই অডিও রেকর্ডের সত্যতা জানতে সরাসরি এস আই সুমিত বড়ুয়ার সাথে অলংকার ফাঁড়িতে সাক্ষাৎ করে রেকর্ডটি তার বলে নিশ্চিত হয়৷ এসময় সুমিত বড়ুয়া বলেন, এখানে আগে ২১০ টাকা চাঁদা আদায় হতো৷ আমি হকারদের সুশৃঙ্খল করতে কাজ করেছি৷ তারা নিজেরা কমিটি করে নিজেদের সমিতি খরচের জন্য এখন মাত্র ২০ টাকা নেয়৷ ২১০ টাকার চাঁদাকে ২০ টাকায় নামিয়ে আনাটাই আমার অপরাধ হয়েছে৷ আমি একজন অসহায় মানুষকে স্থান করে দিতে হকারদের অনুরোধ করেছিলাম। আমার অগোচরে যে রেকর্ড করেছে আমি তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করবো" আগে ২১০ টাকা চাঁদা আর এখন মাত্র ২০ টাকা চাঁদার যে বিষয়টি এসআই সুমিত বড়ুয়া দাবি করেছে বাংলাদেশ বুলেটিনের সরেজমিন অনুসন্ধানে অবশ্য সেটির সত্যতা মেলেনি। একাধিক হকারের ভাষ্য অনুযায়ী ব্যবসার ধরণ ও চলন বুঝে এখানে চাঁদা আদায় করা হয়৷ নামে ১৭ জনের হকার কমিটি হলেও এসবের নেপথ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ভাইয়ের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। সম্প্রতি জোড়া খুনের ঘটনায় আটক শ্রমিক লীগ নেতা ইলিয়াছ যে পরিমাণ চাঁদা আদায় করতো সেই টাকা এখন পুলিশের কথিত ক্যাশিয়ারেরা সরাসরি আদায় করছে। 

সত্যতা জানতে সিএমপি’র পশ্চিম বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফুটপাতের হকারের দোকান দখলে আমার নির্দেশনার বিষয়গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমার আত্মীয় স্বজনকে ফুটপাথে জায়গা করে দিতে আমি বলবো এমনটা একেবারেই অসত্য। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমার এডিসিকে দ্বায়িত্ব দিয়েছি, যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ এদিকে সিএমপি’র একটি সূত্রে জানা গেছে এসআই সুমিত বড়ুয়ার এক বড় ভাই পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার ক্লাসমেট। সেই তদবিরে দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি সিএমপিতে ভালো থানায় ভালো পদে বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছেন।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত