র্যাব-পুলিশ পরিচয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জের জৈনপুর এলাকা হতে ৩৪ ভরি স্বর্ণালংকার, ২২ ভরি রুপা ও নগদ অর্থসহ আনুমানিক ৩৫লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্র। পরেরদিন ৫ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী সুণীল মন্ডল বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় গত ২৪ঘন্টায় রাজধানীর খিলগাঁও, কোতয়ালীসহ ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ৯ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতরা হলেন- বাদল মুন্সি ওরফে সার্জেন্ট বাদল (৪৫), শহিদুল শেখ ওরফে র্যাব শহিদ (৪০), অলিউর রহমান ওরফে ক্যাপ্টেন ওলি (৪২), সাঈদ মনির আল মাহমুদ (৩৭), সবুজ খান (৫২), ইব্রাহিম (৩৬), লাবু শরীফ (৪৮), রুবেল (২৭), মোশাররফ হোসেন (৩৯)।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজ কক্ষে এক সংবাদ ব্রিফিং এ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে কেরানীগঞ্জের জৈনপুর এলাকায় পায়েল জুয়েলার্সের মালিক সুনীল মণ্ডল অন্যান্য দিনের মতো দোকান বন্ধ করে স্বর্ণ ও রুপার গহণা এবং নগদ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। দোকান থেকে তার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ১০০ মিটার। বাড়িতে ঢোকার ঠিক আগ মুহূর্তে একটি মাইক্রোবাস থেকে কয়েকজন নেমে র্যাব পরিচয় দিয়ে তাকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। কিন্তু গুলি করার ভয় দেখালে চুপ হয়ে যায় জড়ো হওয়া লোকজন। সেদিন ৩৪ ভরি স্বর্ণ ও ২২ ভরি রুপা ছিল। সঙ্গে নগদ ৮০ হাজার টাকা ছাড়াও চেক বই ছিল। এগুলো সব লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতচক্রের সদস্যরা।
এ ঘটনায় ভিকটিম সুনীল মন্ডল বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করলে তদন্তে নামে পুলিশ। নানা কৌশল ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা পেশাদার ডাকাত। এরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে একাধিক ডাকাতি করেছে।
চক্রটি মূলত ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার তাঁতিবাজারে আসা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে ডাকাতি করতো। ব্যবসায়ীদের স্বর্ণ ও নগদ টাকা ডাকাতি করার জন্য সংঘবদ্ধ এই ডাকাতচক্র তাঁতিবাজার কেন্দ্রিক একটি বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
নির্জন এলাকার সড়কে নেই লাইট, সিসি ক্যামেরা, এমনকি রাতের বেলায় থাকে না জনসাধারণের চলাচলও। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগায় এ ডাকাতচক্র। এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস চিহ্নিত করে মামলাটির রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়।
র্যাব-পুলিশ পরিচয় দেয়া সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি ঢাকার আশেপাশের নির্জন এলাকা বিশেষ করে কেরানীগঞ্জ এলাকা বেছে নিচ্ছে। কারণ ওইসব এলাকায় সিসি ক্যামেরার যথেষ্ঠ অভাব আছে, পুলিশের নজরদারিও কম। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতার ঘাটতি আছে। যেমন সুনীল মণ্ডলকে যখন র্যাব তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন তার স্ত্রী কথিত র্যাব সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে বাধা দেয়। কিন্তু উপস্থিত লোকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। তাদের মধ্যে একটা লোকও কথিত র্যাব সদস্যদের চ্যালেঞ্জ করেনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীনুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অলক কুমার দে।