চট্টগ্রামে পতেঙ্গা এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া লাগেজ ভর্তি লাশের খণ্ডিত অংশগুলোর পরিচয় উদ্ঘাটন করেছে পিবিআই৷ সেই সাথে হত্যায় জড়িতদের অনেকটাই কাছাকাছি পৌছে গেছে চট্টগ্রাম মেট্রো পিবিআই এর চৌকস দল। পিবিআই সূত্র বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানিয়েছে খণ্ডিত লাশটি বাঁশখালী উপজেলার মো. হাসানের (৬১)। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে লাশের আরও কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।
লাগেজে হাত, পা ও দেহের কিছু অংশ খুঁজে পাওয়ার পর ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী রোডের খালপাড় এলাকার বিল থেকে পেটসহ শরীরের মাঝখানের কিছু অংশ উদ্ধার হয়। তবে এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত নিহতের মাথাটি উদ্ধার করা হয়নি। এ অংশটি ভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার নিহতের স্ত্রী হোসনে আরা এবং বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করেছে পিবিআই।
পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, হাসানকে হত্যার পর একাধিক টুকরো করা হয়। এর মধ্যে হাত-পাসহ ৮টি টুকরো ফেলা হয় পতেঙ্গা থানাধীন ১২ নম্বর ঘাট এলাকায়, পেটসহ শরীরের মাঝখানের অংশ ফেলা হয় ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী রোডের খালপাড় এলাকার বিলে। তবে মাথার অংশটি কোথায় ফেলা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করছে পিবিআই।
এ প্রসঙ্গে পিবিআই সহকারী কমিশনার একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, ‘লাশের ফিঙ্গার প্রিন্ট, একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এবং বিভিন্ন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মাথাবিহীন লাশটির পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। নিহত ব্যক্তির এনআইডি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার নাম মো. হাসান। তার পিতার নাম সাহেব মিয়া। গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী উপজেলার কাতারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী এলাকায়।’
পিবিআই সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তথ্যানুসন্ধানে নিহতের স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হচ্ছে নগরীর ইপিজেড থানাধীন দক্ষিণ হালিশহর আকমল আলী সড়কের পকেট গেট এলাকার জমির ভিলা নামক ভবনের ছোট ছেলের বাসায় মোঃ হাসান খুন হয়েছেন । তার ছোট ছেলে শফিকুর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। তবে শনিবার নিহতের স্ত্রী হোসনে আরা এবং বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে পিবিআই কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম আরও বলেন, ‘হাসানকে হত্যার পর তার লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে সরানোর দৃশ্য সিসিটিভির ক্যামেরায় দেখা গেছে৷ এসময় তার ছোট ছেলে শফিকুর রহমানকে ভাড়া বাসা থেকে বস্তাটি বের করতে দেখা গেছে। আমরা তাকে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা করছি।’
গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় লাগেজ ভর্তি লাশের হাত-পায়ের আটটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। উদ্ধার হওয়া খণ্ডিত অংশগুলো কার তা চেনা কিংবা জানার উপায় ছিল না। হত্যাকারীরা লাশের মাথাটি সেখানে না রাখায় তাৎক্ষণিক তার পরিচয় জানা সম্ভব ছিল না। পরবর্তীতে প্রযুক্তিসহ নানা চেষ্টায় ক্লু-বিহীন এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো টিম।
একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি নিহত ব্যক্তিকে খুন করা হয় তার ছেলের বাসায়। তারা পলাতক আছেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর কিংবা ২০ সেপ্টেম্বর তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ টুকরো করে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় লাগেজ ভর্তি লাশের আটটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। স্থানীয় লোকজনের কাছে খবর পেয়ে লাশ ভর্তি লাগেজটি উদ্ধার করা হয়। এতে লাশের আটটি খণ্ডিত অংশ পাওয়া গেছে। তবে সেখানে ছিল না মাথাসহ লাশের আরও কিছু অংশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গুম এবং হত্যার অভিযোগে পতেঙ্গা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে।