বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
নির্মল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ
এ কে আব্দুল মোমেন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৫:২২ PM

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিচারে বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান আজ সামনের কাতারে। স্বাধীন হওয়ার পর বিগত অর্ধশতাব্দীর মধ্যেই বিশ্বের বুকে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। বেড়েছে দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) পরিমাণ, বেড়েছে অর্থনীতির আকার। পশ্চিম পাকিস্তানি দুঃশাসনের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর মাত্র ৭০১ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল যে ছোট অর্থনীতির দেশটি, সেই দেশের বাজেট আজ পাঁচ লক্ষ কোটিকেও ছাড়িয়ে গেছে। ৫২ বছরে বেড়েছে ৭৩ গুণ। ছোট্ট অর্থনীতির দেশটা আজ পরিচিতি পেয়েছে এশিয়ার ‘টাইগার ইকোনমি’ হিসেবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের যেকোনো সূচকের বিচারে বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে অভূতপূর্ব। এ অগ্রগতিতে সম্মুখসারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার যুগান্তকরী নেতৃত্ব ও সুপরিকল্পিত নির্দেশনায় ১৯৯০-এর পর সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধিতে উন্নয়নশীল দেশের গড় হারের তুলনায় অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্যের হার কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। মেয়েদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদানের হার দ্রুত বেড়েছে। জনসংখ্যা, গড় আয়ু, শিশুমৃত্যুর হার, মেয়েদের স্কুলে পড়ার হার, সক্ষম দম্পতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গ্রহণের হার ইত্যাদি সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ সমপর্যায়ের উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশ, এমনকি প্রতিবেশী ভারতকে পেছনে ফেলতে সমর্থ হয়েছে। যে পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ, সেই পাকিস্তানিরা আজ বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে দেখে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। গত এক দশক ধরে জিডিপিতে চলতি বাজার মূল্যে (কারেন্ট প্রাইস মেথড) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সারাবিশ্বে সবার ওপরে!

যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন, যে অর্থনৈতিক মুক্তি চেয়েছিলেন, যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন সবার জন্য, তারই সুযোগ্য কন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সে পথেই তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন-এইচএসবিসির সর্বশেষ গ্লোবাল রিসার্চে বলা হয়েছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখে বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ২০৩০: আওয়ার লং-টার্ম প্রজেকশনস ফর ৭৫ কান্ট্রিজ’ শিরোনামের এই রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৬ ধাপে উন্নীত হবে। যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অধিক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের এ তালিকায় বাংলাদেশের পরেই ফিলিপাইন, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার নাম এসেছে। প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে উন্নত দেশ নরওয়ের চেয়েও বাংলাদেশের অধিক সম্ভাবনা রয়েছে বলে এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে এদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও কার্যকর অর্থনৈতিক পদক্ষেপের ফলে।

শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্ব ও সময়োপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের কারণে যেমন বেড়েছে দেশের অর্থনীতির আকার, তেমনই বিস্তৃত হয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্য। বৈদেশিক পণ্য রপ্তানি আয়ে অর্জিত হয়েছে নতুন মাইলফলক। এ সরকারের আমলে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি আয়। এইচএসবিসির দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন মডেলে দেখানো হয়েছে, ২০৩০ পর্যন্ত প্রতিবছর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গড়ে ৭.১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে, যা রিপোর্টে উল্লিখিত ৭৫টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৭.৩ শতাংশ, ২০২৩ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৭.০ শতাংশ এবং ২০২৮ থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বর্তমান বাংলাদেশের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ২০৩০ সালে পৌঁছে যাবে ৭০০ বিলিয়ন ডলারে। জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় ৩৩তম। আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় অবস্থানে।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মোট জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ। ১৯৯৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। যেকোনো দেশের বিচারেই প্রবৃদ্ধির এ হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। পঞ্চাশ বছর একটি দেশের জন্য খুব বেশি দীর্ঘ সময় নয়। পৃথিবীর বহু দেশ বহু আগে স্বাধীনতা লাভ করেও এখনো উন্নয়নের মূলস্রোতে ভিড়তে পারেনি। বাংলাদেশ সেখানে ধাপে ধাপে কেবল এগিয়েই গেছে। ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে ৮ বা এর চেয়েও বেশি হচ্ছে বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার। ১৯৭২ সালে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৭০ ডলার, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮২৪ ডলার (২০২২)। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বদলে গেছে মানুষের সামগ্রিক জীবনের চালচিত্র। গরিব দেশের গরিব মানুষ বলে পরিচিত এদেশের মানুষ আজ অর্থনৈতিকভাবে সক্ষমতা অর্জন করেছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের লোকসংখ্যা পৃথিবীর মধ্যে অষ্টম, ১৭ কোটি লোকের দেশ।

স্বাধীনতা অর্জনের পরপর ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৬.৫১ বছর। জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে ধাপে ধাপে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে তা ৭৪.৩ বছরে পৌঁছেছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির ভিত্তিতেও বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। কেবল যে গড় আয়ু বেড়েছে, তা নয়। এর পাশাপাশি মৃত্যুহার কমেছে, শিশুমৃত্যু হার কমেছে, জন্মহারও কমেছে। ১৯৭২ সালে প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যুর হার ছিল ১৪১ জন। ২০২২ সালে এ হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ জনে। প্রতি হাজারে ১৯৭২ সালে জন্মহার ছিল ৫০ জন। ২০২২ সালে প্রতি হাজারে জন্মহার ১ দশমিক ২২। ১৯৭২ সালে দেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ৭ দশমিক ৫ কোটি। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা ২০২২ সালের হিসাবে ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। মোট জনসংখ্যার আকার বাড়লেও কমেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। ’৭২ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ। ২০২২ সালে এ হার কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২২ শতাংশে।

২৯ আগস্ট, ২০১৯ সালে ‘দ্য স্পেক্টেটর ইনডেক্স’-এ প্রকাশিত বিশ্বের ২৬টি শীর্ষ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় বাংলাদেশ জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) অর্জন করেছে বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০২২ পর্যন্ত এদেশের সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সারাবিশ্বে সবার ওপরে। এ সময় বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শতকরা প্রায় ১৮৮ ভাগ। যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন ও ভারতের চেয়েও বেশি। চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭৭ ভাগ ও ভারতের ১১৭ ভাগ। অন্যান্য দেশের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ৯০, মালয়েশিয়া ৭৮, অস্ট্রেলিয়া ৪১, মেক্সিকো ৩৭, ইতালি ৮, জার্মানি ১৫, মিসর ৫১ এবং ব্রাজিল ১৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। করোনাকালের ভয়াবহ দুঃসময়েও বাংলাদেশের অর্থনীতি পেছনে হাঁটেনি একটি দিনের জন্যও।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় ২৫টি অর্থনীতির দেশের একটি হবে। তখন বাংলাদেশ হবে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে অবস্থান ৪১তম। ২০৩৩ সালে আমাদের পেছনে থাকবে মালয়েশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ। আগামী ১৫ বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি গড়ে ৭ শতাংশ থাকবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল ২০১৯ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে ১৯৩টি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার উল্লেখ আছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এখন বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সবগুলো দেশকে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়েছে তো অনেক আগেই। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, একটি জনবহুল ও নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেভাবে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বৈষম্য কমানোকে সংযুক্ত করেছে, তা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন উদাহরণ দেয়ার মতো একটি দেশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাবেও বাংলাদেশের এ অগ্রগতিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বিশেষভাবে। সম্প্রতি তারা একটি টেবিল উপস্থাপন করে দেখিয়েছে, উন্নয়নের প্রধান ১২টি সূচকের মধ্যে ১০টিতেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং অন্যান্য নিম্ন আয়ের দেশের তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত।

উন্নয়নের যেকোনো সূচকের বিচারে বিবেচনা করলেই বিশ্ববাসীর দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে আজ বাংলাদেশ। কেবল সাধারণ মানুষই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাম করা ব্যক্তি, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক সবাই আজ বাংলাদেশ বিষয়ে সচেতন। নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে বারবার লিখেছেন। তিনি তাঁর সর্বশেষ প্রকাশিত ‘অ্যান আনসারটেইন গ্লোরি : ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস কনট্রাডিকশনস’ বইয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আলাদা একটি অধ্যায়ও রেখেছেন। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, এই বাংলাদেশকেই এক সময় বিদেশি পণ্ডিতজন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ হিসেবে এবং আরও কিছু বিদেশি পণ্ডিতজন বলেছিলেন ‘বাংলাদেশ যদি উন্নয়ন করতে পারে তাহলে সব দেশই পারবে A Test Case of Development’ স্বল্পন্নোত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্য আয়ের দেশ। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে করোনার এই মহামারিকালেও। বিশ্বের বহু দেশ যখন করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খেয়েছে, স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতি, বাংলাদেশ সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বের বহু উন্নত দেশকে পেছনে ফেলে অনেকের আগে করোনা ভ্যাকসিন লাভ করে বাংলাদেশের মানুষকে সুরক্ষিত করেছেন শেখ হাসিনা। করোনার ভয়াবহ দুঃসময়ের মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে সবরকম উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। শুধু যে দেশের মানুষের আয় বেড়েছে তা নয়, বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু, শিক্ষা ও চিকিৎসার অন্তর্ভুক্তি, বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। বাড়িঘর, ব্যবহার্য, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সামগ্রিক জীবনে এসেছে উন্নত জীবনের ছোঁয়া। রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে বাজেটের আকার। বাজেট বাস্তবায়নে পরনির্ভরতাও কমছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে দৃশ্যমান। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতাও বাড়ছে দ্রুতগতিতে।

এমনসব মেগা প্রজেক্ট এখন নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ, তা একসময় কেউ কল্পনাও করতে পারত না। পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রজেক্ট নিজেদের টাকায় করার মতো দুঃসাহস এখন বাংলাদেশ দেখাতে পারে। আকাশে উড়িয়েছে নিজস্ব স্যাটেলাইট। নিজস্ব স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি দিয়েই চলছে দেশের সম্প্রচার কার্যক্রম। তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। গত এক দশকে কেবল তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষের। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরো ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান এ খাতে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসছে দারিদ্র্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্য বলছে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত। তাঁদের মধ্যে প্রায় তিন কোটি মানুষ ছিলেন চরম দরিদ্র অবস্থায়। এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন পৌনে চার কোটিরও কম মানুষ। আর চরম দারিদ্র্যে আছেন দেড় কোটির কিছু বেশি মানুষ। যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, তা বাস্তবায়ন হলে এ সংখ্যা দ্রুতই কমে আসবে আরো।

শেখ হাসিনা সরকারের যুগোপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধারাবাহিকতা অর্জন এদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে। মূলত বিপুল পরিমাণ প্রবাসীর পাঠানো আয়, তৈরি পোশাক খাতের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক এবং কৃষির সবুজ বিপ্লব দারিদ্র্য কমিয়ে গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। শেখ হাসিনা সরকার পিছিয়ে পড়া ও অতিদরিদ্রদের জন্য সামাজিক কর্মসূচি খাতে অব্যাহতভাবে বাজেট বাড়িয়েছে। দেশের ৪০ শতাংশেরও অধিক অতিদরিদ্র মানুষ এখন এই কর্মসূচির আওতায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারী-পুরুষ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত এক দশকে বাংলাদেশের শিল্প খাতে নারীর কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে ৪৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে কমেছে মজুরির ব্যবধানও। রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশের কারণে অধিক হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন বিদেশিরা। বিগত বছরে দেশে ৩৫০ কোটি ডলারের বেশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। এ ছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোও বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে চলাচল শুরু করেছে আরেক স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেল। কর্নফুলী টানেল অচিরেই চালু হওয়ার অপেক্ষায়। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির কারণে কাক্সিক্ষত উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা নামে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শেখ হাসিনার সরকার। সমগ্র বাংলাদেশ এই মহাপরিকল্পনার আওতাভুক্ত। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ‘ডেল্টা প্ল্যান’ নামে পরিচিত শত বছরের এ মহাপরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ২১০০ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ চলবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এভাবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অচিরেই সুখী-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করার সময় বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উঠে এসেছে। আশা করা যাচ্ছে যে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় হবে প্রায় ১০ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।

বর্তমান বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর ভর করে। কী শিক্ষা, কী স্বাস্থ্য, কী সেবা সবকিছুই আজ প্রযুক্তিনির্ভর। শিল্প-সংস্কৃতি, কৃষি-অর্থনীতি, সমাজ-রাজনীতিতেও তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্ট ও সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও আজ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। এক সময়ের সনাতন কৃষিনির্ভর অনগ্রসর বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী খ্যাতি কুড়িয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে ডিজিটাল সেবা। উদার আকাশে ডানা মেলে উড়ছে বাংলাদেশের স্বপ্নের স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট সমৃদ্ধ দেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও এদেশের ইতিহাসে স্যাটেলাইট যুগের সূচনা করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার শীর্ষে অবস্থান করছে বর্তমানের বাংলাদেশ। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মধ্য দিয়ে স্যাটেলাইট ও অ্যান্ড্রয়েড টিভি, স্মার্টফোন, গেজেট, পঞ্চম প্রজন্মের ৫জি মোবাইল নেটওয়ার্ক, ওয়াইফাই ইন্টারনেট সম্প্রচার ও দুর্গম এলাকায় টেলিযোগাযোগ ও ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তিতে এসেছে দুর্দান্ত গতি। মাত্র ১০ বছর সময়ের মধ্যে সবকিছুই প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল হয়ে উঠেছে। চারপাশে চোখ মেলে তাকালে অন্ধকারেও চোখে পড়ে নীলাভ আলো।

শেখ হাসিনা সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে স্মার্টকার্ড, ডিজিটাল লাইসেন্স, পাসপোর্ট, ইউনিক আইডির বায়োমেট্রিক ডাটাবেইজ। এতে সেবা প্রদান হয়েছে সহজ ও স্বচ্ছ। দুর্নীতি, অপরাধ, জুচ্চুরি জালিয়াতি করে আর কারও পালানোর পথ নেই। দেশের সব নাগরিকের তথ্য সংরক্ষিত আছে ডিজিটাল ডাটাবেইজে। ১০ কোটি ডিজিটাল আইডি এখন নাগরিকের হাতে হাতে। এছাড়াও ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা, ডাটাবেইজের মাধ্যমে দুস্থ এবং বিধবা মহিলাদের ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ওয়েবভিত্তিক চাকরি, ব্যাংক, সিটি করপোরেশন নাগরিক হেল্পডেস্ক, এসএমএসের মাধ্যমে গ্যাস, ফোন, বিদ্যুৎ বিল, রেলওয়ের অনলাইন টিকিট, যাত্রীদের তথ্যসেবা, মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য ডাটাবেইজ, পারসোনাল ডাটাসিট (পিডিএস) অনলাইন প্রদর্শন এবং প্রিন্ট ইত্যাদি জরুরি কাজে এখন কোনো মানুষ লাগে না। অনলাইনেই সম্ভব এখন সবকিছু।

শেখ হাসিনা সরকারের যুগোপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে অথনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধারাবাহিকতা অর্জন এদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করেছে। মূলত বিপুল পরিমাণ প্রবাসীদের পাঠানো আয়, তৈরি পোশাক খাতের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক এবং কৃষির সবুজ বিপ্লব দারিদ্র্য কমিয়ে গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। সরকার পিছিয়ে পড়া ও অতিদরিদ্রদের জন্য সামাজিক কর্মসূচি খাতে অব্যাহতভাবে বাজেট বাড়িয়েছে। দেশের ৪০ শতাংশেরও অধিক অতিদরিদ্র মানুষ এখন এই কর্মসূচির আওতায়।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএওর বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী স্বাধীনতা-পরবর্তী ৪৯ বছরে দেশে প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে তিন থেকে পাঁচগুণ। ১২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে। এই সাফল্যের পাশাপাশি গত দশ বছরে কৃষির বড় ধরনের বিবর্তন সূচিত হচ্ছে। একসময় বড় বিনিয়োগমুখী শিল্প হিসেবে মানুষ গার্মেন্ট কারখানা স্থাপন করেছে। অন্যান্য শিল্পে বেশি লাভ খুঁজেছে। এখন সেই বিনিয়োগকারীরাই কৃষিতে বড় বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসছেন। গার্মেন্ট কারখানার শেডেই হয়তো গড়ে তুলছেন আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি খামার। শিল্পমুখী কৃষি উদ্যোগের এ প্রবণতা অনেকদূর অগ্রসর এখন। কিন্তু এখানেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ এসেছে। প্রকৃত প্রান্তিক কৃষক কৃষিকাজ থেকে সরে যাচ্ছেন। কৃষির পারিবারিক ঐতিহ্য ভেঙে যাচ্ছে। এর পেছনে বড় এক কারণ, কৃষির আধুনিকীকরণ ও প্রযুক্তিনির্ভরতা। কৃষি এখন সনাতন চিন্তাভাবনার চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি, বাজার ও বাণিজ্যমুখী। পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী কৃষিকাজ করে খুব বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকছে না। তাদের কৃষিজমি বিক্রি অথবা ইজারা দিচ্ছেন কৃষি শ্রমিকের কাছে অথবা বড় উদ্যোক্তার কাছে। এখন যুগ হচ্ছে কৃষি উদ্যোগের। মানুষের জমির মালিকানা যখন সংক্ষিপ্ত ও খণ্ড খণ্ড হয়ে এসেছে, তখন নতুন উদ্ভব হওয়া কৃষি উদ্যোক্তা শ্রেণি ওই খণ্ডিত ভূমি মালিকদের জমি কিনে নিয়ে অথবা দীর্ঘমেয়াদি লিজ নিয়ে গড়ে তুলছেন আধুনিক কৃষি খামার।

একটি দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য শুধু পরিকল্পনা করলেই হয় না, সেজন্য চাই তার সঠিক বাস্তবায়ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার ঠিক সেই কাজটাই করে চলেছে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। যখন যেখানে যা প্রয়োজন, উন্নয়নের স্বার্থে তাই করছে সরকার। বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক ডিজিটালাইজেশন, ভর্তুকি ও প্রণোদনা প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিস্তৃতকরণসহ অর্থনীতির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার। আজকের যে উন্নয়নের ধারা, তা ওইসব কার্যকর ও যুগোপযোগী পদক্ষেপেরই সুফল। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও নির্দেশনাতেই সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

লেখক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত